শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ || ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২

জমে উঠেছে ঘড়িয়াল জুটির সংসার, এখন নতুন অতিথির প্রতীক্ষা

জমে উঠেছে ঘড়িয়াল জুটির সংসার, এখন নতুন অতিথির প্রতীক্ষা

পাঁচ বছর আগে রাজশাহীর শহীদ কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় দুই ঘড়িয়ালের জুটি বাঁধানো হয়। প্রত্যাশা ছিল নারী ঘড়িয়ালটি ডিম দেবে। এরমধ্য দিয়ে বিলুপ্তপ্রায় এই প্রাণীটির বংশবিস্তার ঘটবে। এজন্য রাজশাহী কেন্দ্রীয় উদ্যানে ঘড়িয়ালের প্রজনন উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা হয়। ডিম পাড়ার পরিবেশও তৈরি করে কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে ডিমও দিয়েছে। কিন্তু বাচ্চা ফোটাতে পারেনি।

তারপরও আশা ছাড়েনি উদ্যান কর্তৃপক্ষ। খুব শিগগির ঘড়িয়াল জুটির ঘরে নতুন অতিথি আসবে বলেই প্রত্যাশা তাদের। এজন্য ঘড়িয়ালের থাকার জায়গার কিছুটা পরিবর্তন করার উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রায় ৩৫ বছর আগে থেকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় উদ্যানে দুটি ঘড়িয়ালের বসবাস। তবে, ওই সময় দুটিই নারী হওয়ায় প্রজনন নিয়ে কোনো আশা ছিল না। বংশবিস্তারের বিষয়টি মাথায় রেখে ২০১৭ সালের আগস্টে এখানকার একটি স্ত্রী ঘড়িয়াল ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। অন্যদিকে, ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে একটি পুরুষ ঘড়িয়াল নিয়ে আসা হয় রাজশাহীতে। এর পরের চিত্রটা আশা জাগানিয়া। কয়েকদিন না যেতেই পুরুষ ও স্ত্রী ঘড়িয়ালদের মধ্যে তৈরি হয় ভাব ভালোবাসা। তাদের ক্রসিং (মেলামেশা) দেখে আশায় বুক বাঁধে উদ্যান কৃর্তপক্ষ।

রাজশাহী শহীদ কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. ফারহাদ হোসেন বলেন, ‘জুটি বাঁধার পর এই পাঁচ বছরের মধ্যে অন্তত দুবার ডিম দিয়েছে নারী ঘড়িয়াল। তবে বাচ্চা ফোটেনি। তবে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে যে ঘড়িয়ালরা ডিম পাড়ার পর গর্ত করে ডিম ঢেকে রাখে। রাজশাহী চিড়িয়াখানায় যে পুকুরে ঘড়িয়াল থাকে সেখানে ডিম পাড়ার পর গর্ত করে রাখার মতো কোনো ব্যবস্থা ছিল না। সে কারণে পুকুরটির মাঝখানে পানির লেভেল থেকে একটু ওপর পর্যন্ত বালু ফেলা হয়েছে। সাধারণত ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ঘড়িয়ালদের প্রজনন মৌসুম।’

ফারহাদ হোসেন বলেন, ‘নারী ঘড়িয়ালটি ছোট থাকতেই পদ্মা নদী থেকে ধরা হয়। সেই তখন থেকে সে পুরুষ ঘড়িয়ালের সঙ্গ পাইনি। তাছাড়া ঢাকা থেকে যে পুরুষ ঘড়িয়ালটি নিয়ে আসা হয়েছে সেটিও কোনো দিন স্ত্রী ঘড়িয়ালের সঙ্গ পায়নি। ফলে তাদের মধ্যে ভাব হতে অনেক সময় লেগেছে। ঘড়িয়াল দুটি যাতে একত্রে মিশতে পারে, তাদের মধ্যে যেন ভাব হয় সেই পদক্ষেপটি আমরা নিয়েছিলাম।’

‘আগে দুজনকে দুই জায়গায় খাবার দেওয়া হতো। এখন ধীরে ধীরে একসঙ্গেই খাবার দেওয়া হয়। ফলে তাদের মোটামুটি একটি মিল হয়ে যায়। প্রথম দিকে ঘড়িয়াল দুটি পুকুরের দুই প্রান্তে থাকতো। আমরাও সংশয়ের মধ্যে থাকতাম যদি তারা মারামারি করে সেটি নিয়ে। তবে এখন তাদের মধ্যে মিল হয়ে গেছে। এখন তারা একেবারেই জুটি বেঁধে চলাফেরা করে।’

ঘড়িয়াল দুটির ঘরে নতুন অতিথি আনার বিষয়ে কাজ চলমান জানিয়ে ডা. ফরহাদ বলেন, ‘ঘড়িয়ালের খাঁচার মধ্যে কিছু কাজ করা হবে। নতুন একটা ডিজাইন আমি দিয়েছি। সেই অনুযায়ী ভেতরে বালু ফেলে আর্কিটেককেও আমরা বুঝিয়ে দিয়েছি। গোল এলাকায় যে বালু ফেলা আছে তার পাশ দিয়ে এক চতুর্থাংশ আবার বালুর বেড করে দেবো।’

নারী ঘড়িয়ালটি বছরে একবার করে ডিম দেয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা দুইবার ডিম পেয়েছি। তিন চারটা করে পেয়েছি। তারা বালুতে উঠে বিশ্রাম নেয়। আসলে ন্যাচারালি ডিম পেড়ে বালু দিয়ে ৮-১০ ইঞ্চি ঢেকে দেওয়ার কথা। কিন্তু এটা পানিতেই ডিমটা পেড়ে দিচ্ছে। বালুতে পাড়ছে না। এজন্য এক-চতুর্থাংশ বালুর বেড করে দেবো। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি এরা ডিম পাড়ে। যখন বালুতে উঠবে সেখানেই আটকে রাখবো। বালুতে ডিম পাড়াতে পারলে আমরা বালু দিয়ে ঢেকে হোক বা ইনকিউবেটরে হোক বাচ্চা ফোটানোর ব্যবস্থা নেবো।’

ডা. ফারহাদ হোসেন বলেন, ‘আমি মনে করি যে ডিমটা বালুতে পাড়াতে পারলেই আমরা সফল হবো। যেটা এখন পানিতে পেড়ে দিচ্ছে। ডিমগুলো পড়ে গেলে ভেসে ওঠে। আগে বোঝা যায় না। বালুর বেডটা করে দিলে সেখানে আটক রাখার চেষ্টা করবো। এরা ডিম পাড়ছে এটা পজিটিভ। আমরা আশাবাদী ঘড়িয়ালের নতুন অতিথি পাওয়ার বিষয়ে।’

জাগ্রত জয়পুরহাট

সর্বশেষ

জনপ্রিয়