শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ || ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২

পা দিয়েই মানিকের স্বপ্ন যুদ্ধ

পা দিয়েই মানিকের স্বপ্ন যুদ্ধ

বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) শুরু হয়েছে এসএসসি পরীক্ষা। সব পরীক্ষার্থী প্রস্তুতি নিয়ে নেমেছেন কৃতকার্য হওয়ার যুদ্ধে। একই কক্ষে অন্যসব পরীক্ষার্থীর থেকে অন্যরকম যুদ্ধ মানিকের। তিনি হাত ছাড়াই লিখছেন পরীক্ষার খাতায়। ভরাচ্ছেন স্বপ্ন খাতার সাদা পৃষ্ঠা।

প্রথম দিন (বৃহস্পতিবার) পরীক্ষা শুরুর পর কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ফুলবাড়ী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রের আট নম্বর কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, আলাদা করে বসানো উঁচু একটি বেঞ্চে বসে পরীক্ষা দিচ্ছেন মানিক। পা দিয়ে কলম ধরে লিখে যাচ্ছেন তিনি। ফুলবাড়ী জছিমিয়া মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি দিচ্ছে মানিক। অন্যান্য স্বাভাবিক পরীক্ষার্থীর মতো চলছে তারও লেখা। তার পায়ের লেখাও অনেকটা সুন্দর ও গোছালো।

মানিক রহমান উপজেলার সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা গ্রামের ফার্মেসি ব্যবসায়ী মিজানুর রহমানের ছেলে। তার মা মরিয়ম বেগম কলেজ শিক্ষিকা। মানিকের জন্মের পরই আনন্দের চেয়ে বিষাদ আসে পরিবারে। দুটি হাত ছাড়া জন্ম হয় তার। একটি পাও অস্বাভাবিক। তবে পা দিয়ে হাঁটতে পারেন তিনি। কিন্তু হাত নেই বাহু থেকে। এমন শরীর নিয়েও পড়ালেখায় কৃতিত্ব নিয়ে এগিয়ে চলেছেন মানিক। পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫সহ ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছেন। পা দিয়ে লিখেই তার এ অর্জন।  

কথা বলে জানা যায়, মানিক লেখার পাশাপাশি কম্পিউটার চালাতে পারেন। মোবাইলও পা দিয়ে চালিয়ে সব কিছু করতে পারেন। দুই ছেলের মধ্যে বড় মানিকের শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে এখন আর হতাশ নন বাবা মা। তবে মনের কোনে একটা দীর্ঘশ্বাস থাকে ছেলের কাজকর্মে অসুবিধা ও কষ্ট দেখে। তার কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন বাবা-মা।

মানিকের বাবা মিজানুর রহমান বলেন, ওর জন্ম থেকে দুটি হাত নেই। ভাবলাম তাকে তো মানুষ করতে হবে। এজন্য পা দিয়ে ওকে লেখা শেখাই আমরা। এ কাজে ওর মা কলেজ ও বাসার কাজের ফাঁকের সময় লেগে থাকতো। লেখাতো পড়াতো। আশা করছি সে এবারও ভালো রেজাল্ট করবে।  মা মরিয়ম বেগম বলেন, ওকে নিয়ে আর আমরা হতাশ নই। একটু কষ্ট হলেও হাত ছাড়াই সব কিছু করতে পারে।  

ফুলবাড়ী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব মশিউর রহমান মানিকের লেখা দেখে আপ্লুত। তিনি বলেন, তার প্রতি বিশেষ নজর দেয়া হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী সে ২০ মিনিট সময় বেশি পাবে। ভালো পরীক্ষা দিচ্ছে সে।

জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার নয়টি উপজেলায় ৫৭ কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে মোট ২৭ হাজার ১৫১ জন শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। এরমধ্যে মাধ্যমিক-এ ৩৪টি কেন্দ্রে ১৮ হাজার ৮৩৯ জন, ভোকেশনালে ১১টি কেন্দ্রে ২ হাজার ৭৫৭ জন ও মাদ্রাসায় ১২টি পরীক্ষা কেন্দ্রে ৫ হাজার ৫৫৫ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন।

জাগ্রত জয়পুরহাট

সর্বশেষ

জনপ্রিয়