শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ || ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকাশিত: ০৬:৫৬, ১ ডিসেম্বর ২০২২

মায়ের সঙ্গে পাতিল বানানো লক্ষ্মী পেল জিপিএ ৫

মায়ের সঙ্গে পাতিল বানানো লক্ষ্মী পেল জিপিএ ৫

দারিদ্র্য রুখতে পারেনি লক্ষ্মী রানী পালের লেখাপড়ার প্রতি অদম্য আগ্রহ। মায়ের সঙ্গে মাটির পাতিল বানানোর পাশাপাশি নিজের পড়াশোনা চালিয়ে এ বছর এস.এস.সি পরীক্ষায় রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছে সে। লক্ষ্মী রানী পাল সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া এইচ.টি ইমাম গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্রী। সে উল্লাপাড়া পৌরশহরের ঘোষগাঁতী মহল্লার কুমার পল্লীর গোপাল চন্দ্র পাল এবং তপতী রানী পাল দম্পতির মেয়ে।

স্থানীয়রা জানায়, অভাব অনটনের সংসার হলেও লক্ষ্মীর লেখাপড়ার আগ্রহ প্রবল ইচ্ছে। এ কারণে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থাতেই লক্ষ্মী মায়ের সঙ্গে পাতিল বানিয়ে নিজের আয়ে পড়ালেখা করে এসেছে। বাবা গোপাল পাল বাঁখে করে পাতিল নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে ফেরি করে বিক্রি করেন। লক্ষ্মী পঞ্চম শ্রেণিতে পি.এস.সি পরীক্ষায় এবং অষ্টম শ্রেণির জে.এস.সি পরীক্ষায় জি.পি.এ ৫ পেয়েছিল। ভবিষ্যতে সে ডাক্তার হয়ে মানুষের স্বাস্থ্য সেবায় নিবেদিত হতে চায়।

লক্ষ্মীর মা তপতী পাল জানান, তার বড় মেয়েই লক্ষ্মী। তার এক ছেলে উল্লাপাড়া মার্চেন্টস্ পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। এছাড়া ছোট আরও দুটি মেয়ে রয়েছে। ছোট বেলা থেকেই মা-বাবার দুঃখ কষ্ট বুঝে তার সঙ্গে পাতিল বানানো শিখে নিয়েছিল লক্ষ্মী। স্কুলের সময় বাদে দিনে এবং রাতে কাজ করেছে সে। পড়াশোনার সময় পেত খুবই কম। বাবা গ্রামে ঘুরে পাতিল বিক্রি করে যে অর্থ আয় করেন তা দিয়ে কোন মতে খাওয়া পরা চলে। লক্ষ্মী পাতিল বানিয়ে যে আয় করে তা দিয়ে তার এবং ছোট ভাইয়ের পড়ালেখার খরচ চালিয়ে আসছে।

লক্ষ্মী র মা আরও জানান, কোনদিন একটা ভাল জামাকাপড় দিতে পারেননি মেয়েকে। ভাল খাবারও দিতে পারেননি। মেয়েকে প্রাইভেটে পড়াতে পারেননি। অনেক কষ্টে পড়ালেখা করছে সে। এবার একটা ভাল কলেজে ভর্তি করতে চান। কলেজে লেখাপড়ার যে খরচ প্রয়োজন তার যোগান দেওয়ার সামর্থ তাদের নেই। বাইরে গেলে পাতিল বানানোর কোন সুযোগ থাকবে না। তাই মেয়ে এত ভাল ফল করলেও তারা মেয়ের কলেজের পড়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।

লক্ষ্মীর বাবা গোপাল পাল জানান,বর্তমান যুগে মাটির পাতিলের আর কোন কদর নেই। মানুষ মাটির পাতিল কিনতে চান না। কিনলেও উপযুক্ত দাম মেলেনা। ফলে গ্রামে ঘুরে পাতিল বিক্রির অর্থে আর সংসার চলে না। বাড়ির দুই শতক ভিটে ছাড়া তাদের আর কোন জমি জিরেত নেই। বাড়তি আয়ের উৎসও নেই। এ কারণে মেয়েটর উচ্চ শিক্ষার আশা পূরণ করা এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

জি.পি.এ ৫ পাওয়া লক্ষ্মী রানী জানান, তার স্কুলের অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম লেখাপড়ায় তাকে অনেক সহযোগিতা দিয়েছেন। এজন্য সে কৃতজ্ঞ। ভবিষ্যতে উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করে সে ডাক্তার হতে চায়। তাই উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল কলেজে পড়ার ইচ্ছে তার। কিন্তু এই ইচ্ছে পূরণের কোন সুযোগ নেই। ফলে ভাল ফল করলেও এখন চরম হতাশায় দিন কাটছে তার।

জাগ্রত জয়পুরহাট

সর্বশেষ

জনপ্রিয়