রোববার   ১০ ডিসেম্বর ২০২৩ || ২৫ অগ্রাহায়ণ ১৪৩০

প্রকাশিত: ০৭:১৪, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩

উদ্ভাবনের নেশায় তিনবার সরকারি চাকরি ছেড়েছেন হারুন অর রশিদ

উদ্ভাবনের নেশায় তিনবার সরকারি চাকরি ছেড়েছেন হারুন অর রশিদ

এগারো বছর বয়সেই গ্রামের সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন হারুন অর রশিদ। উদ্ভাবনের নেশায় তৈরি করেছিলেন বিমান। আর সেই বিমান উড়াতে গিয়ে ঘটেছিল তুলকালাম কাণ্ড। পরীক্ষামূলকভাবে বিমান আকাশে উড়লেও আচমকা একটি পাকা ধানখেতে আছড়ে পড়ে। এতে আগুনে পুড়ে যায় পুরো ধানখেত।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের ডাকে বসে সালিশ। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া হারুনকে এসব যন্ত্রপাতি তৈরি বন্ধ করতে হবে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। সালিশে সবার দিকে তাকিয়ে সিদ্ধান্ত মেনে নিলেও হারুনের মনে ছিল উদ্ভাবনের সাধনা। এরপর রাতের আধারে ঘরে লুকিয়ে লুকিয়ে হারুন তৈরি করলেন টেলিস্কোপ। এতে আগুনে পুড়ে ধানখেত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা নেই। কিন্তু একদিন তার চাচা সেই টেলিস্কোপ দেখে ফেলেন। মনের ভয় জাগে হারুনের। চাচার চোখ রাঙানোতে বাধ্য হয়ে সেই যন্ত্রটিও নষ্ট করে ফেলতে হয় তাকে। পরপর দুটি উদ্ভাবনী যন্ত্র তৈরি করেও নানা কারণে চুপসে যান হারুন। মন দেন পড়াশোনায়। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই নাটবল্টু আর লোহালক্কড়ের যন্ত্রপাতি আগলে রাখেন হারুন। ভালোবাসার এসব যন্ত্রপাতি ঘিরে এখনো উদ্ভাবনের নেশায় বুঁদ ৬৬ বছর বয়সী এই উদ্ভাবক।

রংপুর শহরতলী থেকে ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে রংপুর-দিনাজপুর হাইওয়ের ওপরেই পাগলাপীর বাজার। সেখান থেকে এক কিলোমিটার দূরে হরিদেবপুর ইউনিয়নের কিশামত হরকলি গ্রাম। সে গ্রামেই থাকেন হারুন অর রশিদ। ছোটবেলার মতো এই বৃদ্ধ বয়সেও হারুন গ্রামের মানুষদের নিত্যনতুন উদ্ভাবনীতে সবাইকে চমকে দেন। কারও কারও কাছে হারুনের যন্ত্র-প্রেম যেন পাগলামি, এ কারণে তাকে অনেকেই ‘পাগলা হারুন’ নামেও ডাকে। সম্প্রতি ঢাকা পোস্টের এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় হারুন অর রশিদের। ছোট্টবেলার সেই হারুন এখন পেশায় স্কুলশিক্ষক। এর আগে উদ্ভাবনের নেশায় তিনটি সরকারি চাকরি ছেড়েছেন তিনি। টানাপোড়নের সংসারে এখনো প্রযুক্তির সঙ্গেই তার ভালোবাসার যুদ্ধ। এখন যে বেতন পান, তার অর্ধেক টাকায় সংসারের খরচ চালান হারুন অর রশিদ। বাকি অর্ধেক টাকায় কেনেন যন্ত্রপাতি বানানোর কাঁচামাল। আর সময় পেলেই বাড়িতে বসে নাটবল্টু আর লোহালক্কড়ের যন্ত্রপাতিতে হাতুড়ি পেটান। ভাবতে থাকেন নতুন কিছু উদ্ভাবনের।

পলিথিনে মুড়িয়ে রাখা ছয়টি যন্ত্র বের করে দেখাতে দেখাতে হারুন অর রশিদ জানান, সারাদিন স্কুল, প্রাইভেট, পরিবারকে সময় দেওয়ার পর হাতে যে সময় পান সেটাই তাকে স্বপ্ন বুনতে সাহায্য করছে। ইতোমধ্যে তিনি মহাকাশ দেখার যন্ত্র টেলিস্কোপসহ চারটি ভিন্ন ক্ষমতাসম্পন্ন মাইক্রোস্কোপ, বিমানের মডেল ও একটি ফিল্ম ডাবল প্রজেক্টর উদ্ভাবন করেছেন। একটি হেলিকপ্টার তৈরির কাজও শুরু করেছেন তিনি। এছাড়া বেশকিছু নতুন প্রজেক্ট তার উদ্ভাবনী চিন্তায় রয়েছে। এসব কাজ করতে গিয়ে আর্থিক সংকটে হাঁপিয়ে উঠেছেন হারুন। তৈরি করা যন্ত্রপাতি সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে না পারায় তাতে মরিচা পড়ছে। এ ছাড়া সারাদিন শিক্ষকতা ও প্রাইভেট পড়ানো এবং পরিবারকে সময় দিয়ে ঠিকমতো নিজের উদ্ভাবনী মনকে কাজ লাগাতে পারছেন না বলেও জানান তিনি।

হারুন অর রশিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, দিনে তো সময় পাই না, এ কারণে বেশির ভাগ সময় রাতেই যন্ত্রপাতি নিয়ে বসতে হয়। হাতুড়ির টুংটাং শব্দ আর রাত থেকে এসব কাজ করতে হয় বলে প্রতিবেশীদের অনেকের কাছে কটু কথা শুনতে হয়। অনেক কষ্ট আর আক্ষেপ মনে জমা রয়েছে। এত কিছু সত্ত্বেও আমি আমার স্বপ্ন থেকে সরে আসিনি। সারা জীবন বিজ্ঞানের সঙ্গে ছিলাম, আছি এবং থাকব। কেউ ভরসা না রাখলেও নিজের ওপর আমার যথেষ্ট ভরসা রয়েছে। উদ্ভাবনের নেশায় তিনটি সরকারি চাকরি ছেড়ে দেওয়া হারুন পড়াশোনার উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করতে পারেননি। তিনি মাধ্যমিকে রাজশাহী বোর্ডে চতুর্থ স্থান অধিকার করেন। এরপর উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে রাশিয়ায় উচ্চশিক্ষার বৃত্তি পেলেও পারিবারিক ও আর্থিক সমস্যার কারণে যেতে পারেননি। পরে কারমাইকেল কলেজে ফলিত পদার্থবিজ্ঞানে পড়াশোনা শুরু করলেও সমাপ্ত করা হয়ে ওঠেনি তার।

তিনি আরও বলেন, মাধ্যমিকে রাজশাহী বোর্ডে ভালো ফলাফল করেছিলাম। পরে কারমাইকেল কলেজে পদার্থবিজ্ঞানে পড়াশোনা শুরু করলেও শিক্ষাজীবন শেষ করতে পারিনি। পড়াশোনার পাট অসমাপ্ত রেখে চাকরি শুরু করেছিলাম। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত শিক্ষকতা করেছি। ১৯৮১ সালে পোস্টাল অপারেটর হিসেবে ডাক বিভাগে ছয় মাস চাকরিতে ছিলাম। সেই বছরই মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে চাকরিতে যোগদান করে তিনি মাস না যেতেই আবার ডাক বিভাগে পূর্বের পদে ফিরে যাই। পরে সেই চাকরিও ছেড়েছি। হারুন অর রশিদ ২০১১ সাল থেকে পাগলাপীরের আদ্-দ্বীন একাডেমিতে ইংরেজি ও বিজ্ঞান বিষয়ে পাঠদান দিচ্ছেন। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, সারাজীবন বিজ্ঞানের আবিষ্কারের সঙ্গে যুক্ত থাকার স্বপ্ন নিয়ে কাজ করছি। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আবিষ্কারের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখতে চাই। স্ত্রী ও তিন ছেলে এবং দুই মেয়ে নিয়ে হারুন অর রশিদের পরিবার। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবারকে আর্থিক যোগান দিতে হারুন হিমশিম খেলেও তার স্ত্রী-সন্তান খুশি নিত্যনতুন যন্ত্র তৈরির সাফলতায়। বাবার উদ্ভাবিত যন্ত্রতেই ভালো থাকার সুখ খুঁজে পায় মেয়ে শ্যামলী বেগম।

জাগ্রত জয়পুরহাট

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

শিরোনাম

জয়পুরহাটে আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস পালিতশিক্ষার্থীরা যাতে পিছিয়ে না থাকে সেটি নিশ্চিত করতে চাইঃ দীপু মনিক্ষতিকারক যেসব অ্যাপ প্লে স্টোর থেকে ডিলিট করল গুগলসায়মা ওয়াজেদ পুতুলের জন্মদিন আজবিনামূল্যে স্কুল চালিয়ে শিক্ষক পেলেন ১০ কোটি টাকা পুরস্কারআন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস আজসূর্যের বিরল ছবি তুলল ভারতের মহাকাশযান আদিত্যবিজয় দিবসে বিমানের টিকিটে ১৬ শতাংশ ছাড়প্রভাসের নায়িকা তৃপ্তি, বাজেট ৫২৬ কোটি টাকা?সোনিয়া গান্ধীকে জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানালেন মোদিড্র হওয়া সিরিজে সেরা স্বর্ণামনোনয়নপত্র বাতিলের বিরুদ্ধে আপিলের শেষ দিন আজকোপা আমেরিকা ২০২৪ : একনজরে দেখে নিন সূচিবৃষ্টি নিয়ে যে বার্তা দিল আবহাওয়া অধিদপ্তর