শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ || ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১

নিউইয়র্কে সংবাদ সম্মেলনে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

নিউইয়র্কে সংবাদ সম্মেলনে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

নিউইয়র্কে সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘে গরিব বিশ্বের মানুষের মৌলিক অধিকারের প্রশ্নে সোচ্চার হওয়ায় হয়তো অনেকের বিরাগভাজন হতে হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মা-বাবা-ভাই-ভাবিসহ পরিবারের সকলকে হত্যা করার পর ১৯৮১ সালে যখন বাংলাদেশ ফিরেছি, তখন জীবন হাতে নিয়েই ফিরেছি। আমি জানি যে, ওরা আমাকেও সুযোগ পেলেই শেষ করে দেবে। ন্যায় আর সত্যের জন্যে যখন কথা বলবো স্বাভাবিকভাবেই জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হবে। সেজন্য সত্য বলবো না, ন্যায়সঙ্গত কথা বলবো না, এটা তো হয় না। তাই আমি বলে যাচ্ছি। অনেক হুমকি এসেছে, জেলেও যেতে হয়েছে, তবুও আমি থামিনি। করোনার ভ্যাকসিন অনেক দেশ পাচ্ছে না। সকলেরই অধিকার রয়েছে টিকা পাবার। তাই আমি ঝুঁকি নিয়েই টিকা সর্বজনীন করার কথা বলেছি। কাউকে না কাউকে তো ঝুঁকি নিতেই হবে। ঝুঁকি নিতে হবে তাদের জন্য, যারা অবহেলিত, শোষিত, বঞ্ছিত-অবশ্যই তাদের জন্যে কাউকে না কাউকে তো ঝুঁকি নিতেই হবে। আমার তো হারাবার কিছু নেই। সবইতো হারিয়েছি। সুতরাং চিন্তার কিছু নেই।’

গণমাধ্যমের কাছে কোন প্রত্যাশা আছে কিনা জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা তো সবকিছু খুলে দিয়েছি। তাই, পত্রিকাগুলো অপবাদ ছাড়া গঠনমূলক সাংবাদিকতা করতে পারে। দেশের জন্যে যা ভালো, তা করবে না এটা তো হতে পারে না। যা মানবিক তা করবে না-এটাতো হতে পারে না। তাই দায়িত্বশীলতাটা সবদিক থেকে সমানভাবে নিশ্চিত হওয়া দরকার। আমার আমলে তো আমরা মিডিয়াকে সবকিছু খুলে দিয়েছি। যতবেশি পত্রিকা এখন বের হয়, আগে তো একটি বিটিভি ছিল, রেডিও ছিল, এখনতো আমরা ব্যাপকভাবে খুলে দিয়েছি। তাই বলারও অবাধ সুযোগ, লেখারও অনেক সুযোগ। শুধু একটি কথা বলবো, মানুষের জন্যে যেটি কল্যাণকর, সেটি করা দরকার। সেদিকে আপনারা (সাংবাদিকরা) খেয়াল রাখবেন। সমালোচনা করবেন, তবে সেখানে যাতে এমন কিছু না হয় যে. মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার।’

২৪ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যায় লাগোয়ার্ডিয়া ম্যারিয়ট হোটেলের বলরুমে ভার্চুয়ালে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ প্রদত্ত ‘প্রবাসী নাগরিক সংবর্ধনা’ সমাবেশের পর সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের মুখোমুকি হন শেখ হাসিনা। জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি  (প্রেস) নূরএলাহি মিনার সমন্বয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপ-সহকারি প্রেস সেক্রেটারি মিয়া মোহাম্মদ হাসান জাহিদ তুষারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিউইয়র্কে নিজস্ব ভবনে বাংলাদেশের কন্সাল জেনারেলের অফিস স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। নিশ্চয়ই শীঘ্রই তার বাস্তবায়ন ঘটবে।’

শেখ হাসিনা প্রবাসীদের প্রতি উদাত্ত আহবান জানিয়ে বলেছেন, ‘যারা বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি আর কল্যাণ চায় না, তারাই বিদেশে বসে সংঘবদ্ধভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এমন অবস্থার বিরুদ্ধে সকলকে সোচ্চার থাকতে হবে। গত ১২ বছরে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নের ধারাবিবরণী, মানুষের জীবনমানের পরিবর্তন সাধিত হবার ঘটনাবলি বেশি করে প্রচার করতে হবে।’

শুরুতেই বাংলাদেশ প্রতিদিনের উত্তর আমেরিকা সংস্করণের নির্বাহী সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার শেখ হাসিনাকে প্রবাসের গণমাধ্যম কর্মীগণের পক্ষ থেকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান এসডিজির অগ্রগতিতে অসাধারণ অবদানের জন্যে জাতিসংঘের সম্মাননা পাবার জন্যে। 

এর আগে হোটেল থেকে ভার্চুয়ালে প্রবাসীদের সংবর্ধনা সমাবেশে শেখ হাসিনা টানা ৬২ মিনিটের বক্তব্যে অদম্য গতিতে এগিয়ে চলা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি বিবৃত করেন। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ইমেজ মহিমান্বিত করতে কীভাবে তিনি ভারসাম্য কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন-তাও ব্যক্ত করেছেন। ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব-কারো সাথে বৈরিতা নয়’-বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতা চলছে বলেও উল্লেখ করেছেন শেখ হাসিনা। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে বাংলাদেশকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে মানুষের সামগ্রিক কল্যাণে কাজ করে। আর বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে ব্যক্তিস্বার্থে হরিলুট চালিয়েছে। এতিমের টাকা মেরেও খেয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘করোনার চিকিৎসা-সামগ্রির জন্যে অনেক প্রবাসী মার্কিন প্রশাসনে দেন-দরবার করেছেন, এজন্যে সকলকে ধন্যবাদ দিচ্ছি।’

যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের দেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি একটা কথা বলব, আমাদের প্রবাসী যারা তারা কিন্তু বাংলাদেশে এখন বিনিয়োগ করতে পারেন। শুধু আমেরিকাই করবে তা না, আমাদের প্রবাসী আমেরিকানরা যতদূর পারেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারেন।’

বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে সরকার বাংলাদেশে যে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা করে দিচ্ছে, তা প্রবাসীদের জানান প্রধানমন্ত্রী। সারাদেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কথাও তিনি বলেন।

এই সংবর্ধনা সমাবেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের বিবদমান গ্রুপগুলো নিজ নিজ পছন্দের ভেন্যু ভাড়া করেছিলেন। সবকিছুর নিরসন ঘটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপের মধ্যস্থতায়। অবশেষে সংগঠনের বিদায়ী সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের ভাড়া করা মিলনায়তনেই সমাবেশ হলো এবং অপর গ্রুপগুলোর নেতা-কর্মীরাও এসেছিলেন। যদিও স্থান সংকুলান না হওয়ায় অনেকে মিলনায়তনে প্রবেশের সুযোগ পাননি। হোটেল থেকে এই সংবর্ধনা সমাবেশের সঞ্চালনা করেন আব্দুস সোবহান গোলাপ এমপি। স্বাগত বক্তব্য দেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা। শেখ হাসিনার পাশে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এ মোমেন, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। অপরদিকে, মিলনায়তনের শৃঙ্খলা সমন্বয়ে সরব ছিলেন ড. সিদ্দিকুর রহমান।

উল্লেখ্য, জাতিসংঘের ৭৬তম সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশের নেতা হিসেবে ১৯ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে এসেছিলেন শেখ হাসিনা। ২৫ সেপ্টেম্বর শনিবার সকাল ৮টায় (বাংলাদেশ সময় শনিবার সন্ধ্যা ৬টা) ওয়াশিংটন ডিসির উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে জেএফকে এয়ারপোর্ট ত্যাগ করবেন। ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তার ওয়াশিংটনে অবস্থানের কথা রয়েছে। 

জাগ্রত জয়পুরহাট

সর্বশেষ

জনপ্রিয়