বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪ || ১৩ চৈত্র ১৪৩০

প্রকাশিত: ১৬:৫৯, ১৪ জানুয়ারি ২০২২

সরকারি উদ্যোগে বিদেশে স্বাস্থ্যকর্মী পাঠাবে বাংলাদেশ

সরকারি উদ্যোগে বিদেশে স্বাস্থ্যকর্মী পাঠাবে বাংলাদেশ

করোনাকালে দেশের রেমিট্যান্স আয় বাড়লেও দক্ষ জনশক্তি রপ্তানিতে এখনো পিছিয়ে বাংলাদেশ। এ সময়ে বৈশ্বিক শ্রমবাজারে স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে দক্ষ কর্মী রপ্তানির সুযোগ তৈরি হলেও তা নিতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। তবে এবার দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির বাজার ধরতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। যার অংশ হিসেবে ২০২২ সালে প্রথমবারের মতো সরকারিভাবে ৬ দেশে দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী পাঠানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যদিও অনেক বাংলাদেশী স্বাস্থ্যকর্মী বর্তমানে বিভিন্ন দেশে কর্মরত আছেন।

তবে সরকারি উদ্যোগে এবারই প্রথম। প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, করোনায় দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীর সংকট দেখা দেওয়ায় ৬ দেশ বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগে আগ্রহ জানিয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছরেই কুয়েত, জাপান, জার্মানি, মালদ্বীপ, কাতার ও আরব আমিরাতে স্বাস্থ্যকর্মী পাঠাবে বাংলাদেশ। এদিকে চলতি মাসে প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপস্নয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের (বোয়েসেল) মাধ্যমে কুয়েতের জন্য নার্স ও মেডিকেল টেকনোলজিস্ট চেয়ে একটি নিয়োগ বিজ্ঞাপন দিয়েছে।

বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, নার্স ও টেকনোলজিস্ট পদে এসব কর্মী বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ লাখ টাকা বেতন পাবেন। এছাড়া আবাসন ও যাতায়াতের খরচসহ থাকবে বার্ষিক বোনাস; যা বহন করবেন সংশ্লিষ্ট নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে কুয়েতের সরকারি হাসপাতালগুলোতে এই কর্মী প্রেরণে কাজ করবে বোয়েসেল। বোয়েসেল কর্মকর্তারা জানান, প্রথম ধাপে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েতের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ৬ ক্যাটাগরিতে ৭৩৫ জন নার্স ও টেকনিশিয়ান পাঠানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি মালদ্বীপের সঙ্গে ডাক্তার ও নার্স নিয়োগে একটি সমঝোতা চুক্তি সই হয়েছে। এ বিষয়ে বোয়েসেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. বেলাল হোসেন যায়যায়দিনকে বলেন, দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির অংশ হিসেবে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে তারা স্বাস্থ্যকর্মী চেয়ে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। ইতোমধ্যে অনেকেই এসব পদের জন্য আবেদনও করেছেন। আবেদনকারীদের প্রায় শত ভাগই বেসরকারি নার্স ও টেকনিশিয়ান। এছাড়া বেকার স্বাস্থ্যকর্মীরা এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন বলেও জানান তিনি।

অন্যদিকে কুয়েতে স্বাস্থ্যকর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে রয়েছে বেশকিছু জটিলতা। বিশেষ করে কর্মীদের কাজের অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে। বোয়েসেল ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, 'কুয়েত তাদের হাসপাতালগুলোর জন্য বিএসসি নার্সদের জন্য ৪ বছরের অভিজ্ঞতা এবং ডিপেস্নামা নার্সদের জন্য চেয়েছে ৩ বছরের অভিজ্ঞতা; যা অধিকাংশ আবেদনকারীর নেই। তবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে মাত্র এক সপ্তাহ হয়েছে। আশা করি এই মাসের মধ্যে যোগ্যতাসম্পন্ন আবেদনকারীর সংখ্যা বাড়বে।' বাংলাদেশ নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের (বিএনএমসি) তথ্যানুযায়ী, দেশে সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে ২৭১টি বিএসসি ও ৫৪৭টি ডিপেস্নামা নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কলেজ রয়েছে।

এসব কলেজে আসন সংখ্যা ৩৯ হাজারের একটু বেশি। আর প্রতি বছর চাকরির বাজারে প্রবেশ করেন প্রায় ১৫ হাজার নার্স। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে নিবন্ধিত নার্স সংখ্যা ছিল ৮০ হাজার ৭৩৯। তাদের মধ্যে প্রায় ৫৫ হাজার নার্স সরকারি হাসপাতালে এবং বাকিরা বেসরকারি হাসপাতালে কাজ করছেন। তবে বেলাল হোসেন বলেন, 'দেশে পর্যাপ্ত কর্মী থাকা সত্ত্বেও দক্ষ জনশক্তি রপ্তানিতে বিশেষ করে স্বাস্থ্য খাতে এশিয়ায় আমরা অনেকাংশেই পিছিয়ে। আমাদের প্রতিযোগী ৩ দেশ, ভারত, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনাম এক্ষেত্রে অনেক বেশি অগ্রগামী।' বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের এক প্রতিবেদনে জানায়, ২০২২ সালে সারা বিশ্বে মোট নার্সের সংখ্যা রয়েছে প্রায় ২ দশমিক ৭৯ কোটি যা প্রয়োজনের তুলনায় ৫৯ লাখ কম। এছাড়া আগামী দশ বছরে সারা বিশ্বে প্রায় ১৭ শতাংশ নার্স অবসরে যাবেন। তখন নার্সের ঘাটতি দাঁড়াবে প্রায় ১ কোটির ওপরে। প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী ধনী দেশগুলোতে সবচেয়ে বেশি নার্স পাঠায় ফিলিপাইন ও ভারত। ইতোমধ্যেই উন্নত দেশগুলোতে প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার ফিলিপিনো এবং ৯০ হাজার ভারতীয় নার্স কাজ করছে।

জাগ্রত জয়পুরহাট

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ