বৃহস্পতিবার   ১৩ নভেম্বর ২০২৫ || ২৮ কার্তিক ১৪৩২

জাগ্রত জয়পুরহাট

প্রকাশিত : ১৩:৫০, ১২ নভেম্বর ২০২৫

ঢাকায় ওয়াসার পানিতে পোকা ময়লা দুর্গন্ধ

ঢাকায় ওয়াসার পানিতে পোকা ময়লা দুর্গন্ধ
সংগৃহীত

রাজধানীতে মানুষের দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য ওয়াসা যে পানি সরবরাহ করছে, বিভিন্ন এলাকায় সেই পানি ঘোলা ও তীব্র দুর্গন্ধযুক্ত। এমনকি পানিতে ময়লা ও পোকামাকড় থাকায় ফুটিয়েও পানযোগ্য করা যাচ্ছে না। তার পরও বাধ্য হয়ে রান্না, গোসল, খাওয়াসহ দৈনন্দিন কাজে এই পানি ব্যবহার করতেই হচ্ছে। আর এতে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ, বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা। কয়েক মাস ধরেই ঢাকার বিভিন্ন এলাকার ওয়াসার গ্রাহকরা এই সমস্যার ব্যাপারে অভিযোগ জানালেও সমাধান মিলছে না। তবে ওয়াসা কর্তৃপক্ষের দাবি, গ্রাহকদের বাড়ির পানির ট্যাংক নিয়মিত পরিষ্কার না করার কারণেই এমনটা হচ্ছে।

ওয়াসার পানি নিয়ে আগে থেকেই এ অভিযোগ করে আসছেন জুরাইন, কল্যাণপুর, মানিকনগর, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, কুতুবখালী ও শনির আখড়া এলাকার মানুষ। মোহাম্মদপুর, তেজগাঁও, মালিবাগ, মগবাজার, মধুবাগ, বাসাবো, মানিকনগর, খিলগাঁও, শ্যামপুর, আজিমপুর, লালবাগসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা দুই মাস ধরে ওয়াসার ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানির সমস্যা নিয়ে তাদের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন।

ওয়াসার কয়েকজন কর্মকর্তা নগরীর নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় সরবরাহ করা পানিতে পোকা পাওয়া যাওয়ার কথা স্বীকার করেন। তাদের সন্দেহ, সায়েদাবাদ পানি শোধনাগারে কোনো সমস্যা থেকে এটা ঘটতে পারে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বিভিন্ন সময়ে তদন্ত হয়েছে, তবে সুরাহা হয়নি।

কল্যাণপুরের বাসিন্দা হাফিজুর রহমান বলেন, ‘ওয়াসার পানির সমস্যার বিষয়ে আমরা কয়েকদিন পরপরই ফোন করে অভিযোগ জানাই। কিন্তু অভিযোগ কোনো কাজে আসে না। ওয়াসা থেকে বলা হয় আমাদের পানির ট্যাংক পরিষ্কার করতে। ট্যাংক অপরিষ্কারের কারণে নাকি এমন গন্ধ আসে। অথচ আমাদের ট্যাংক একেবারেই পরিষ্কার।’

তিনি আরও বলেন, ‘মাঝেমধ্যে বেসিনে মুখ ধুতে গিয়ে পানির গন্ধে বমি চলে আসে। বলা চলে, দোকান থেকে কেনা পানি দিয়েই সব কাজ সারতে হয়। সময় যেহেতু পরিবর্তন হয়েছে, আমরা চাই ওয়াসাতেও পরিবর্তন আসুক। ওয়াসার কর্মকর্তাদের হুঁশ ফিরুক।’

মোহাম্মদপুরের শেখেরটেক এলাকার বাসিন্দা সিদ্দিকুর রহমান কালবেলাকে বলেন, ‘অনেকদিন ধরেই পানি কিনে খেতে হয়। ওয়াসার পানিতে তীব্র গন্ধ ও ঘোলা পানি। কালো রঙের পানিতে প্রায়ই পোকা আসে।’

আজিমপুর নিউপল্টন এলাকার বাসিন্দা নাদিম আহমেদ বলেন, ‘ওয়াসার পানির মান খুব খারাপ।

ওয়াসায় অভিযোগ জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। উল্টো তারা ট্যাংক পরিষ্কার করতে এবং পানির ট্যাপের মুখে কাপড়ের ফিল্টার ব্যবহার করার পরামর্শ দিচ্ছেন।’

ওয়াসার এমন পানি নিয়ে জুরাইন এলাকার বাসিন্দাদের ভোগান্তির শেষ নেই। বহুদিন ধরে চলা এই সমস্যার সমাধান কোনোভাবেই পাচ্ছেন না এই এলাকার বাসিন্দারা। বিকল্প পন্থা হিসেবে স্থানীয় মসজিদগুলোর গভীর নলকূপই এখন তাদের ভরসা।

সরেজমিন দেখা গেছে, পূর্ব জুরাইনের ইসলামাবাদ মসজিদের গভীর নলকূপ ঘিরে বোতল, কলসি হাতে পানির জন্য লাইন ধরে অপেক্ষা করছেন বেশ কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা। তারা জানান, ওয়াসার পানি খাওয়ার অনুপযোগী হওয়ায় মসজিদের পানিই একমাত্র ভরসা।

পূর্ব জুরাইনের বাসিন্দা আসাদুল্লাহ বলেন, ‘এক যুগেরও বেশি সময় ধরে নিরাপদ পানির সংকটে জুরাইনের মানুষ। বছরের পর বছর পানির সমস্যা থাকলেও দায়িত্বশীলরা এর সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেননি, আমাদেরও দুর্ভোগ কমেনি।’

পূর্ব জুরাইনের বাসিন্দা ও নাগরিক অধিকারকর্মী মিজানুর রহমান বলেন, তার এলাকায় নতুন পাইপলাইন বসানোর পরও পানির সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি। তিনি বলেন, ‘গরমকালে চাহিদা বেশি থাকলেও দিনের বেশির ভাগ সময় পানি থাকে না। দিনে মাত্র ঘণ্টা দুয়েকের জন্য যে পানি আসে, তা পানের অযোগ্য।

ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ ও পোকার উপস্থিতিকে ‘গভীর উদ্বেগজনক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. এম এইচ চৌধুরী লেনিন। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় এরই মধ্যে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে। দূষিত পানির কারণে টাইফয়েড, প্যারাটাইফয়েড ও ডায়রিয়ার ঝুঁকি বাড়ে। দ্রুত সমাধান না করা হলে এই সমস্যা মহামারির কারণও হতে পারে। পানি সরবরাহ নিয়ে ওয়াসার অবহেলা বহু বছরের। আমি আশা করি, এবার তারা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে সমস্যার সমাধান করবে।’

ঢাকা ওয়াসার এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, ‘রাজধানীতে জরুরি পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় ৩৮৮টি গভীর নলকূপ প্রতিস্থাপন করবে ঢাকা ওয়াসা। সে লক্ষ্যে ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটি ঢাকা শহরে জরুরি পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় ৩৮৮টি গভীর নলকূপ প্রতিস্থাপন কাজের প্রয়োজনীয়তা নিরূপণ করবে। ফলে যেসব এলাকায় পানির সংকট বেশি, সেখানে কিছুটা হলেও সমস্যা নিরসন হবে।’

জানতে চাইলে ঢাকা ওয়াসার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ) মো. মুস্তাফিজুর রহমান কালবেলাকে বলেন, ময়লা পানির বিষয়ে কোনো অভিযোগ পেলে নিয়মিত পদক্ষেপের অংশ হিসেবে আমরা সেই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করি। বিভিন্ন প্লান্টে ওয়াসার একেকটা টেস্ট ল্যাব রয়েছে। আর সেন্ট্রাল ল্যাব রয়েছে মোহাম্মদপুরে। কোনো অভিযোগ পেলে পানি এনে ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার পর যদি আমাদের কিছু করণীয় থাকলে তা করা হয়ে থাকে। আর গ্রাহকের পানির ট্যাংক পরিষ্কার না করার কারণে সমস্যা হলে ট্যাংক পরিষ্কার করতে বলা হয়ে থাকে।

তিনি বলেন, মূলত কোনো জায়গায় লাইনে লিকেজ হয়ে রাস্তায় ময়লা ঢুকে থাকে আবার চোরাই লাইনের কারণেও এগুলো ঘটে। তবে অভিযোগ পাওয়ার পরই আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।

সূত্র: কালবেলা

সর্বশেষ

শিরোনাম