শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪ || ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রকাশিত: ১২:২৪, ৪ ডিসেম্বর ২০২২

প্রথা ভাঙতে সৌদি আরবে শ্যারন স্টোন!

প্রথা ভাঙতে সৌদি আরবে শ্যারন স্টোন!

উৎসবের দ্বিতীয় দিনটি ছিল নারীদের জন্য। ‘উইমেন ইন সিনেমা’ নামে বিশেষ একটি পর্বও ছিল। ওই দিন রেড সি ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফ্যাস্টিভ্যালে আলো ছড়িয়েছেন মার্কিন অভিনেত্রী শ্যারন স্টোন। এছাড়া ছিলেন জ্যাসিকা আলভা, জুলিয়ান আলেকজান্দ্রা, ফরাসি অভিনেত্রী মেলানি লরেন্ট, বলিউডের প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, কারিনা কাপুর, মিশরীয় মডেল তারা ইমাদ, সৌদি অভিনেত্রী ইদা আল কুসায়সহ আরও অনেকে।

‘উইমেন ইন সিনেমা’ পর্বটি ছিল মূল ভেন্যু থেকে একটু দূরে পার্ক হায়াত হোটেলে। বিশাল পার্কে দুই তলা হোটেল। খুব কড়াকড়ি প্রবেশপথে। বেশ কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকি পার হয়ে যেতে হয় ভেতরে। শেষ চৌকির কাছাকাছি যাওয়ার পর বলিউডের সাইফ আলী খান ও কারিনা কাপুরকে দেখলাম। তাদের ঘিরে সেলফির বায়না করছেন অনেকে।

আরব দুনিয়ায় বলিউডের প্রভাব কতটা বেশি, সেটা এই জটলা দেখেই আন্দাজ করা যায়। তবে এদিনের প্রধান আকর্ষণ শ্যারন স্টোন। আলোকচিত্রীদের ঠেলে-ঠুলে তার কাছে যাওয়ার চেষ্টা করাটা বোকামি হবে। আমি চলে গেলাম তার জন্য রাখা আলাপ করার কামরায়। আগেই নিবন্ধন করে রেখেছিলাম। তাই প্রবেশে কোনো বাধা পেলাম না।

শ্যারন স্টোন হলরুমে ঢুকতেই করতালিতে মুখর হয়ে উঠে পুরো পরিবেশ। সংগ্রামী ও জেদি নারী শ্যারন। ১৯৯২ সালে পল ভারহোভেনের ইরোটিক থ্রিলার সিনেমা ‘বেসিক ইন্সটিনঙ্ক’ এ যুগান্তকারী ভূমিকা রাখেন। পরে আসতে চেয়েছিলেন পরিচালনায়। কিন্তু নারী হওয়ায় সেই চাওয়া থেকে বিরত থাকতে হয়েছিল তাকে।

তিনি বলেন, ‘আমি একটি প্রযোজনা সংস্থার স্টুডিওতে গিয়েছিলাম। তাদের কাছে ছোট একটা বাজেট চেয়েছিলাম। সেখান থেকে ফিরে আসতে হয়েছিলো আমাকে। তারা বলে দিয়েছিল, নারীরা সিনেমা পরিচালনা করেন না।’

শ্যারন তখন হাসতে হাসতে কামরা থেকে বের হয়ে গিয়েছিলেন। মারিও কাসারের ক্যারোলকো পিকচার্স-এর প্রযোজনায় নির্মিত হয়েছিল ‘বেসিক ইনস্টিনক্ট’ সিনেমাটি। আমেরিকায় এটি মুক্তি পেয়েছিল ট্রিস্টার পিকচার্স এর ব্যানারে। উৎসবের আলাপ পর্বে অংশ নিয়ে স্টোন এসব তথ্য দিচ্ছিলেন ১৬০ সিটের হল পরিপূর্ণ ছিল দর্শক এবং মিডিয়াকর্মীদের উপস্থিতিতে।

তিনি জানান, ওই সিনেমায় সহ অভিনেতা মাইকেল ডগলাসের সঙ্গে তার পারিশ্রমিকের পার্থক্যও ছিল অনেক। ওই ছবি তাকে খ্যাতি এনে দিলেও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা দিতে পারেনি। তিনি বলেন, ‌'ওই সিনেমা থেকে আমার উপর্জন ছিল পাঁচ লাখ মার্কিন ডলার। আর মাইকেল ডগলাসের উপার্জন ছিল ১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।’

সিনেমা করার পর খ্যাতির বিড়ম্বনা পোহাতে হয়েছে তাকে। ভক্তরা তাকে ও ডগলাসকে ঘিরে ধরত। তবে এই সিনেমা থেকে ডগলাসের আয় বেশি ছিল। এ কারণে তিনি গাড়ি, ড্রাইভার, দেহরক্ষীর খরচ সামলাতে পেরেছিলেন। শ্যারন স্টোন জানান, অন্যদিকে তিনি এসব ব্যবস্থা করতে পারেননি। তাকে সারাক্ষণ পর্দার আড়ালে থাকতে হতো। বাড়ির ছাদে লোক উঠে যেত। দরজা ভেঙে ফেলা হয়েছিল।

তিনি বলেন, ‘হঠাৎ খ্যাতি সামলানোর উপাদান রাখতে না পারায় এই ঘটনাগুলো ঘটছিলো।’ চলচ্চিত্রে ক্যারিয়ার গড়তে অনেক বাধা অতিক্রম করতে হয়েছে তাকে। কারণ বিষয়টিকে কেউই ইতিবাচকভাবে নেননি।

শ্যারন বলেন, ‘পুরুষদের সাথে নারীদের সাংঘর্ষিক অবস্থান ছিল। নারীদের কম টাকা দেওয়া হতো। তবে চরিত্র যখন যা ডিমান্ড করবে সেটাই ডেলিভারি দিতে হতো। প্রয়োজনে মানুষ খুন করে ফেলতে হবে। নগ্ন হতে হবে। সুপার মার্কেটের সামনে খোলামেলা দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। এসব বিষয় আমার ব্যক্তিগত জীবনকে এলোমেলো করে ফেলতে শুরু করল। বিবাহবিচ্ছেদের পর সন্তানের কর্তৃত্বও হারিয়েছি। কারণ বিচারক ধরেই নিয়েছিলেন, আমি খারাপ সিনেমায় কাজ করছি। বিচারকের রায়ের পর আমার ব্যক্তিজীবন ও অধিকার অনেকটা ধ্বংশই হয়ে গিয়েছিল।’

তবে ঘুরে দাঁড়াতেও খুব একটা সময় লাগেনি তার। তিনি বলেন, ‘আমাকে নিয়ে মানুষের যেসব ধারণা ছিলো, সেগুলোতে রাতারাতি পরিবর্তনও চলে এসেছিল। অনেকে আমাকে আইডল মানতে শুরু করল।’

১৯৯২ সালে ফ্রান্সের কান চলচ্চিত্র উৎসবে সিনেমাটির প্রথম প্রদর্শনী হয়েছিল। ওখান থেকে তাকে গাড়ির পেছনে লুকিয়ে হোটেলে ফিরতে হয়েছিল। কিন্তু হোটেলে এসেও দেখেন তার সবকিছু চুরি হয়ে গেছে।

মানবাধিকার ভঙ্গের রেকর্ডের জন্য সারাবিশ্বে যখন সৌদি আরবকে নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে তখন রেড সি ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভালে তার অতিথি হওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে স্টোন বলেন, ‘আমি প্রথা ভাঙতে পারি। এটাই আমার সাফল্য। এখানে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর অনেকেই জিজ্ঞেস করেছেন, আপনি ভয় পাচ্ছেন না? আমি বললাম, এখনও ভয়ের কিছু মনে হয়নি। তাহলে আমি কেন যাব না। ওখানে গিয়ে দেখে এসে তারপর এই প্রশ্নের জবাব দেব।’

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না প্রতিটি দেশের চিন্তা ভাবনা, উপাসনা করা, শাসন করার পদ্ধতি একইরকম থাকা উচিত। আপনি চূড়ান্তভাবে মানুষকে বলে দিতে পারবেন না, তিনি কোন উপায়ে তার স্রষ্টাকে পাবেন। এই সত্যটা কেবল আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রেই নয়, পরিচালনার ক্ষেত্রেও সত্য।’

আলোচনার সময় শিশু মৃত্যুর সিন্ড্রোমে মারা যাওয়া তার ভাগনের কথা স্মরণ করে আবেগপ্রবণ হয়ে পরেন তিনি। এ সময় এইডস গবেষণা বিষয়ক ফাউন্ডেশন এএমএফএআর-এর সাথে তার সক্রিয়তা সম্পর্কেও দীর্ঘ কথা বলেছেন এই অভিনেত্রী।

তিনি বলেন, “আমাকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল যে, ‘কনডম’ শব্দটি যদি মুখ দিয়ে উচ্চারণ করি, তাহলে আমার সব ফান্ড বন্ধ করে দেওয়া হবে। আমাকে বারবার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। অনেক ঘটনা ঘটেছে; এগুলো যত বেশি ঘটেছে, ততই আমি ভেবেছিলাম, আমাকে সত্যিই এটির সাথে লেগে থাকতে হবে।”

জাগ্রত জয়পুরহাট

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ