বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪ || ১৩ চৈত্র ১৪৩০

প্রকাশিত: ১২:০৩, ১৫ জানুয়ারি ২০২৩

মনেকের শখের ছাদ বাগানে ব্যাপক সাফল্য

মনেকের শখের ছাদ বাগানে ব্যাপক সাফল্য

আলিমুজ্জামান মনেক (৪৭)। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। করোনাকালীন সময়ে ইউটিউবে ছাদ কৃষি সম্পর্কে জানতে পেরে রাজবাড়ী শহরের চরলক্ষীপুর গ্রামে নিজের ৫তলা বাড়ির ২ হাজার ৮শ বর্গফুটের ছাদে ৩ বছর ধরে গড়ে তুলেছেন শখের ছাদ বাগান। ছাদ বাগান করে পুরোপুরি সফল। বাগানে প্রায় ২ শতাধিক দেশি বিদেশি গাছ রয়েছে।

মনেকের ছাদ বাগানে বর্তমানে জয়তুন, অ্যাভোকাডো, লবঙ্গ, এলাচ, আনারস, কমলা, মালটা, সৌদি মরিয়ম খেজুর, কাজু বাদাম, আপেল, কফি, মিশরীয় ত্বীন ফল, আঙ্গুর, সাদা জাম, আম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, মিষ্টি তেতুল, জাম্বুরা, মরিচ, বেগুন, টমেটো, ড্রাগন, কাঠ গোলাপসহ ২ শতাধিক ফল, ফুল ও ওষধি গাছ আছে। পরিবারের পুষ্টি চাহিদা মিটিয়ে এসব ফল ফুলের চারা ও কলম অনান্যদের দিচ্ছেন আলিমুজ্জামান মনেক।

Rajbari

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আলিমুজ্জামান মনেক তার ছাদ বাগান অনেক সুসজ্জিত ও পরিকল্পনা করে সাজিয়েছেন। দেশ ও দেশের বাহির থেকে সংগ্রহ করেছেন গাছের চারা। তার বাগানে বেশির ভাগ গাছে ফল ঝুলে আছে। ফুল গাছে ফোটা ফুলগুলো সৌন্দর্য্য মেলে ধরেছে আকাশ পানে।

আলিমুজ্জামান মনেকের এই ছাদ বাগানের সফলতার গল্প শুনে তার আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশীসহ অনেকেই আসেন এই ছাদ বাগান দেখতে। তার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে ছাদে বাগান শুরু করেছেন অনেকে।

শৌখিন ছাদ কৃষক আলিমুজ্জামান মনেক বলেন, পরিবারে প্রতিদিন ভাতের সঙ্গে সবজি প্রয়োজন। অধিকাংশ কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে সবজি ফলিয়ে বাজারজাত করছে। তাতে অতিমাত্রায় বিষ ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। বিষমুক্ত সবজির জোগান মেটাতে ও ছাদের সৌন্দর্য্য বাড়াতে মূলত ছাদ বাগান করেছি।

Rajbari

মনেক বলেন, ৩ বছর আগে থেকে আমার ছাদ বাগান শুরু। নানা প্রজাতির সবজি ও ফলমূলের চাষাবাদ করছি। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা বেশি থাকে। সেই সময় পুরো বাড়ি গরম হয়ে ওঠে। ফাঁকা তপ্ত ছাদকে শীতল করতে এবং পরিবেশকে সহনীয় করতেই সবুজ বাগান করা। প্রকৃতির প্রেমে শখের বসেই পরিবারের সদস্যদের সাথে বাগানে সময় দেই। বাড়ির ছাদে ২ হাজার ৮শ বর্গফুটের আয়তনের মধ্যে টব এবং ড্রামে পরম যত্নে বেড়ে উঠছে আমার শখের গাছগুলো। চাকরি করার পাশাপাশি যেটুকু সময় পাই অধিকাংশ সময় এ বাগানেই দেই। রাসায়নিক সার প্রয়োগ না করে জৈব সার তৈরি করে ব্যবহার করি।

তিনি আরও বলেন, চারা সংগ্রহ করে প্লাস্টিকের ড্রাম ও টবে লাগানো হয়। এতে ভবনের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। পরিবারের জন্য ভেজালমুক্ত ফল ও শাকসবজির জোগান দেওয়ার পর আত্মীয়স্বজনের বাড়িতেও পাঠাতে পারি। আসলে গাছগুলোকে সন্তানের মতো করে লালন পালন করি।

Rajbari

আলিমুজ্জামান মনেকের স্ত্রী টাউন মক্তব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ফারহানা হাফিজ বৃষ্টি বলেন, অধিক জনসংখ্যার এই দেশে অপরিকল্পিতভাবে যেখানে সেখানে ভবন নির্মাণের ফলে হারিয়ে যাচ্ছে বাগান করার উপযুক্ত জায়গা। বাড়ির ছাদে সবুজ বাগান গড়ে তুলতে তাই আমাদের এই প্রয়াস। ছাদ বাগান থেকে আমরা শাকসবজি ও ফল সংগ্রহ করে পরিবারের চাহিদা পূরণ করছি। আমরা সবাই মিলে স্বামীর সঙ্গে ছাদ বাগান করি।

ছাদ বাগান দেখতে আসা শহিদুল ইসলাম বলেন, দিন দিন ফসলি জমি কমে আসছে, কমছে সবুজ প্রকৃতি। বাড়ছে নগরায়ন। প্রকৃতিতে উষ্ণতা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। যাদের ভবনের ছাদ খালি রয়েছে, তারা যেন এভাবে সবুজ বাগান গড়ে তোলেন। এতে বাড়ির সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির পাশাপাশি পরিবারে বিষমুক্ত সবজির জোগান দেওয়া সম্ভব হবে।

ছাদ বাগান দেখতে আসা সালাম আল মাসুদ বলেন, মাঝে মধ্যে এই ছাদ বাগান দেখতে আসি। এখান থেকে সবজি ও ফল বাড়ির জন্য নিয়ে যাই। এই ছাদ বাগান দেখে আমি নিজে আগ্রহী হয়েছি। চারা ও কলম নিয়ে আমিও বাগান করব।

Rajbari

ছাদ বাগান দেখতে আসা মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, নগরায়ণের যুগে আমরা ভূমি হারিয়ে ফেলছি। ভূমি বলতে থাকছে আমাদের একখণ্ড ছাদ। ছাদ বাগান করতে কিছু খরচ হলেও শাক, ফুল, ফলের নিত্যদিনের পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা মেটানো যায়।

রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. জনি খান বলেন, গত কয়েক বছরে রাজবাড়ী জেলা সদরে ছাদ বাগানের সংখ্যা বেড়েছে। কর্ম জীবনের পাশাপাশি ছাদ কৃষি করছেন অনেকে। পরিবারের পুষ্টি চাহিদা মিটিয়ে ফল, ফুল ও কলমের চারা বিক্রি করে আয়ও করছেন অনেকে। শুধু ব্যাক্তি উদ্যোগেই নয় রাজবাড়ী সদরের বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ছাদেও গড়ে তোলা হচ্ছে ফল ও ফুলের বাগান। রাজবাড়ী জেলা সদরে ছোট বড় মিলিয়ে ছাদ বাগান আছে ১৭০টি। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সবাইকে নিয়মিত পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

জাগ্রত জয়পুরহাট

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ