শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪ || ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রকাশিত: ১২:০০, ২৫ জানুয়ারি ২০২৩

ইউটিউব দেখে গড়েছেন বাগান, বছরে আয় ১০ লাখ টাকা

ইউটিউব দেখে গড়েছেন বাগান, বছরে আয় ১০ লাখ টাকা

ইউটিউব দেখে ১০ একর টিলায় বরইসহ মিশ্র ফল ও সবজির ২০টি বাগান গড়ে তুলেছেন রাঙামাটির সন্তান সুশান্ত তংচংগ্যা। সেসব বাগান থেকে প্রতি বছর গড়ে আয় হয় ৮-১০ লাখ টাকা। চাকরির আশায় বসে না থাকা শিক্ষিত এই যুবক এখন একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা। ইতোমধ্যে তাঁর বাগানে ১২ জন বেকার যুবককে চাকরি দিয়েছেন তিনি। বর্তমানে তাঁর বাগানের এক হাজার গাছে আপেল ও দেশি জাতের বরই পাকতে শুরু করেছে। এবার শুধু বরই বিক্রি হবে ৫ লাখ টাকার। সব মিলিয়ে ১৩ লাখ টাকা আয় করার স্বপ্ন দেখছেন তিনি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাঙামাটির উপপরিচালক তপন কুমার পাল বলেন, 'রাঙামাটির ৭৮০ হেক্টর জমিতে বরই আবাদ হয়েছে। বরই সবেমাত্র বাজারে আসা শুরু হয়েছে। বল সুন্দরী, আপেল বরইসহ বিভিন্ন প্রকার বরই রাঙামাটির ১০ উপজেলায় চাষাবাদ হয়েছে। আশা রাখি, গত বছরের তুলনায় এ বছরে কৃষকরা বরই চাষে বেশি লাভবান হবেন।'

তিনি আরও বলেন, সুশান্ত তংচংগ্যার মিশ্র ফল বাগানে ইতোমধ্যে তিনি পরিদর্শন করেছেন। এটি একটি মিশ্র ফলের বাগান। ১৫ থেকে ২০ ধরনের চারা কলম লাগিয়ে বাগান সৃজন করেছেন সুশান্ত। অনাবাদী পাহাড়কে তিনি চাষের আওতায় এনেছেন, এটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। এর মাধ্যমে তিনি আর্থিকভাবে স্বাললম্বী হয়েছেন, পাশাপাশি তাকে দেখে অন্যরাও আগ্রহী হচ্ছেন।

রাঙামাটি সদর উপজেলা মগবান ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সোনারাম কার্বারি পাড়ার কাপ্তাই হ্রদবেষ্টিত একটি পাহাড়ে পরিবার নিয়ে বসবাস সুশান্ত তংচংগ্যার। পরিবারের আর্থিক অনটনসহ নানা সমস্যার কারণে তিনি এসএসসি পর্ষন্ত পড়াশুনা করতে পেরেছেন। কিন্তু তার উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন থেমে গেলেও বেকার জীবন কাটাননি। ইউটিউবে দেখার পর উৎসাহী হয়ে ২০১৬ সালে তার নিজের ১০ একর পাহাড়ি ঢিলা জমিতে মিশ্র ফলের বাগান শুরু করেন সুশান্ত তংচংগ্যা। চার বছরের মাথায় ২০২০ সাল থেকে সৃজিত বাগানে ফল উৎপাদন শুরু হয়। বর্তমানে তার বাগানে এক হাজারের বেশি বরই গাছ রয়েছে। এছাড়া তার বাগানে মাল্টা, লটকন, ড্রাগন ফল, পেঁপে, রাম্বুটান, লেবু, কল, সুপারিসহ ২০ প্রজাতির ফল ও সবজির রয়েছে। সৃজিত বাগানে আনুষাঙ্গিক খরচ ও শ্রমিকের মজুরি মেটানোর পরও বছরে প্রায় ৭ থেকে ৮ লাখ টাকার মতো আয় থেকে যায় সুশান্তের। তা দিয়েই সংসারের যাবতীয় খরচ চলে। বর্তমানে তিনি এলাকায় একজন সফল চাষি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। কৃষক সুশান্ত তংচংগ্যা সাফল্য দেখে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন বুনছেন আরও অনেক বেকার যুবক।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ১০ একর পাহাড়ি ঢিলায় ২০ প্রকার মিশ্র ফলের বাগান গড়ে তুলেছেন সুশান্ত। বর্তমানে তার বাগানে এক হাজার বরই গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে সুস্বাধু বিভিন্ন জাতের মিষ্টি বরই। এসবের মধ্যে রয়েছে বল সুন্দরী, আপেল, কাশ্মিরী ও দেশী জাতের বরই। বরই বিক্রি করে এবার ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা আয় করার আশা করছেন তিনি।

পাঁচ বছর ধরে সুশান্তের মিশ্র ফলের বাগানে কাজ করে যাচ্ছেন সুকুমার চাকমা ও সজল চাকমা নামে দুই শ্রমিক। তারা বলেন, 'সুশান্ত দাদা আমাদের কাজ দিয়েছেন। পরিবার চলছে এখানে কাজ করে। আমরাও নিজেদের বসত ভিটায় বাগান করেছি।' স্থানীয় শ্যামল চাকমা বলেন, '২০১৬ সাল থেকে দেখে আসছি সুশান্তের এ বাগানের উদ্যোগ। তাকে দেখে দেখে অনেকে মিশ্র ফলের বাগান করেছেন। তিনি গ্রামের একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা। কাজের জন্য সুশান্ত বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য।'

কৃষি উদ্যোক্তা সুশান্ত তংচংগ্যা বলেন, 'ইউটিউবে বরই চাষ দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে ২০১৬ সালে ১০ একর ঢিলায় মিশ্র ফলের বাগান শুরু করি। এ বাগান থেকে শীতকালীন, গ্রীষ্ফ্মকালীন, বর্ষাকালীন ফল বিক্রি করে সফলতা পেয়েছি। এ বছরে বাগান থেকে ১৩ লাখ টাকা আয় হতে পারে।' তিনি আরও বলেন, তার বাগানের ফল সম্পূর্ণ ওষুধমুক্ত। ইতোমধ্যে বাগানে বরই পাকতে শুরু করেছে। গত বছর শুধু বরই বিক্রি করেছেন ৪-৫ লাখ টাকা। ইতোমধ্যে গত সপ্তাহে বাজারে ৩০ হাজার টাকার বরই বিক্রি করেছেন।

জাগ্রত জয়পুরহাট

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ