• শুক্রবার   ৩১ মার্চ ২০২৩ ||

  • চৈত্র ১৭ ১৪২৯

  • || ০৯ রমজান ১৪৪৪

জাগ্রত জয়পুরহাট

এক পায়ে ভর করে সবজি চাষ, বছরে আয় ৭ লাখ টাকা!

জাগ্রত জয়পুরহাট

প্রকাশিত: ৩১ জানুয়ারি ২০২৩  

কথায় আছে ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়। কথাটি যেন তার জন্যই বলা হয়েছে। এক পা না থাকার পরেও অন্যের জমি বন্ধক নিয়ে করেছেন সবজি চাষ। নিজের প্রতিবন্ধকতাকে দূরে ঠেলে দিয়ে নিজের গতিতে এগিয়েছেন তিনি। বলছি খাগড়াছড়ির কৃষক শফিউল বাশারের কথা। বর্তমানে তিনি সবজি চাষ করে বছরে ৬-৭ লাখ টাকা আয় করেন।

জানা যায়, কৃষক শফিউল বাশার খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার প্রান্তিক গোমতী ইউপির বান্দরছড়া গ্রামের বাসিন্দা। ১৯৯৬ সালে প্রতিবেশীর ঘরের আগুন নিভাতে গিয়ে তার বা পায়ে বিষাক্ত কিছু লেগে সংক্রমণ হন। অনেকদিন যাবত চিকিৎসা করার পর ২০০১ সালে বাম পা কেটে ফেলে দিতে হয়। তারপর থেকে ক্রাচের ওপর ভর করে চলছে তার জীবন যাত্রা। তখন তিনি বেকার হয়ে পড়েন। তারপর কোনো উপায় না পেয়ে অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ শুরু করেন। দীর্ঘ ২০ বছর যাবত কৃষি কাজ করে তিনি স্বাবলম্বী হয়েছেন। বর্তমানে তিনি নিজের কিছু জমি কিনেছেন এবং তার জমিতে কাজ করে প্রায় ১০ জনের সংসার চলে। বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করে বছরে তিনি ৬-৭ লাখ টাক আয় করছেন।

কৃষক শফিউল বাশার বলেন, আগুন নিভাতে যেয়ে আমার বাম পায়ে আঘাত পাই। তারপর অনেক চিকিৎসা করেও পা আর ঠিক করাতে পারিনি। ২০০১ সালে পা কেটে ফেলার পর কোর হয়ে পড়ি। তারপর ভিক্ষাবৃতিতে না যেয়ে অন্যের জমি বর্গা নিয়ে কৃষি কাজ শুরু করি। নিজের যে ১০ শতক জমি ছিল তাতে চাষাবাদ করে সফল হতে পারতাম না। তাই অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষ শুরু করি। বন্ধক নেওয়া ৯ বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছি বিভিন্ন ধরনের সবজির খেত।

তিনি আরো বলেন, নিজের বুদ্ধি ও অদম্য ইচ্ছাশক্তিই আমাকে সফল করেছে। বর্তমানে বন্ধক নেওয়া জমিতে ক্ষীরা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, কাঁচা মরিচ, ভেলু (ডালজাতীয়), করলা ও টমেটো চাষ করছি। পাশাপাশি ডায়মন্ড জাতের আলুর সাথে সাথি ফসল হিসেবে ভুট্টা চাষ করেছি। আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সবজি খেতের দেখাশোনা করি।

শফিউল আরো বলেন, আমার বন্ধক নেওয়া জমিতে নিয়মিত কাজ করে ১০টি পরিবারেও আর্থিক সচ্ছলতা এসেছে। এছাড়াও সবজি চাষ করে পরিবারের সাথে ভালো অবস্থায় আছি। বর্তমানে সবজি চাষে বছরে ৬-৭ লাখ টাকা উপার্জন করতে পারি।

শারীরিক প্রতিবন্ধী সবজি চাষি শফিউল বাশারের বড় ছেলে আবুল বাশার বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকেই বাবাকে ক্রাচে ভর করে জমিতে সবজি চাষ করতে দেখেছি। আমরা স্কুলের পাশাপাশি যতটুকু সম্ভব বাবাকে সহযোগিতা করেছি। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, কৃষক শফিউল বাশারের এক পা না থাকা সত্বেও তিনি সবজি চাষে বিপ্লব ঘটিয়েছেন। তাকে দেখে এলাকার অনেকেই অনুপ্রণিত হয়ে কৃষি কাজে যুক্ত হয়েছেন।

খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কিশোর কুমার মজুমদার বলেন, কৃষক শফিউল বাশার গত ২০ বছর যাবত বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করে আসছেন। তিনি সবজি চাষ করে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি আয় করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। আমাদের কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে যেয়ে তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করছে।

জাগ্রত জয়পুরহাট
জাগ্রত জয়পুরহাট