মঙ্গলবার   ১৯ মার্চ ২০২৪ || ৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রকাশিত: ১২:১৬, ১ মার্চ ২০২৩

একই জমিতে তিন ফসল চাষে সফল মুজিবুর

একই জমিতে তিন ফসল চাষে সফল মুজিবুর

একই জমিতে ক্যাপসিকাম, লেটুসপাতা ও সূর্যমুখী চাষ করে সফল হয়েছেন ভৈরবের মুজিবুর রহমান। তিনি উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের মৌটুপী গ্রামের সরকার বাড়ির বাসিন্দা। দীর্ঘ তিন বছর ধরে তার জমিতে ক্যাপসিকাম ও লেটুসপাতা চাষ করে আসছেন। এ বছর প্রথম সূর্যমুখী আবাদ করেছেন।

কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলার হাওর বেষ্টিত ইউনিয়ন সাদেকপুর। এ ইউনিয়নের মৌটুপী গ্রামের মাঠের মাঝখানে যেন এক হলুদের সমারোহ। হাওরের বুক চিরে হলদে ফুলের সমাহার যেন মন মাতানো। গাছে গাছে হলুদ সূর্যমুখী ফুলের বাগানে কিছু সময়ের জন্য হারিয়ে যেতে মন চায়।

বিস্তীর্ণ সূর্যমুখী ফুলের হলদে দৃশ্যটি যে কারো মনকে আকৃষ্ট করে অনায়াসে। সারি সারি সূর্যমুখী গাছের ডগায় বড় বড় ফুল, যেন দিগন্তজুড়ে হলুদের সমারোহ। এর মাঝখানে ছোট ছোট ক্যাপসিকাম ও লেটুসপাতার গাছে পরিপূর্ণ একটি বিস্তীর্ণ এক মাঠ। এমন দৃশ্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই পাশের এলাকার শত শত মানুষ ভিড় করছেন।

সূর্যমুখী ফুলের অপরূপ দৃশ্য যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে। চারদিকে হলুদ ফুলের মন মাতানো ঘ্রাণ আর মৌমাছির গুঞ্জনে মুখর হয়ে উঠেছে ফসলি জমি। সূর্যমুখী ফুল মানুষকে শুধু আনন্দই দেয় না। দৈনন্দিন খাদ্য চাহিদা মেটাতে তেল হিসেবেও ব্যবহার হচ্ছে। বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় তেল উৎপাদনের লক্ষ্যে সরকার সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের প্রণোদনাসহ উৎসাহ দিচ্ছে।

সরেজমিনে জানা যায়, মুজিবুর রহমান তার স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে জমিতে পরিচর্যায় ব্যস্ত। এ সময় তিনি বলেন, ‘প্রথমদিকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে দেখে ৩০ শতক জমিতে ক্যাপসিকাম ও লেটুসপাতা চাষ করেছি। গত তিন বছর ধরে চাষ করে সফল হয়েছি। ক্যাপসিকাম ও লেটুসপাতা চাষে ২০-২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তবে ১-২ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবো।’

তার এ সফলতা দেখে আশেপাশের উপজেলার কৃষকরা শিক্ষা নিচ্ছেন, কীভাবে চাইনিজ খাবারে ব্যবহৃত ক্যাপসিকাম ও লেটুসপাতা বাণিজিকভাবে চাষ করা যায়।

মুজিবুর রহমান বলেন, ‘কম খরচে বেশি ফলনের আশায় এক জমিতে ৬০ শতাংশ জায়গায় প্রথমবারের মতো সূর্যমুখী আবাদ করেছি। সূর্যমুখী চাষ করার পদ্ধতি মোটামুটি সহজ। প্রতি বিঘা জমিতে তিন কেজি বীজ, সামান্য সার ও কীটনাশক হলেই পর্যাপ্ত। সবকিছু মিলিয়ে খরচ হয় ২ থেকে ৩ হাজার টাকা। নামমাত্র খরচে সূর্যমূখী চাষ করা যায়।’

দর্শনার্থী মো. রবিন মিয়া বলেন, ‘একই জমিতে তিন ফসল দেখতে এ গ্রামে এসেছি। এ ধরনের কৃষিপণ্য চাষে দিন দিন কৃষকরা আগ্রাহী হয়ে উঠছেন। এই প্রথম ভৈরবে বাণিজিকভাবে ক্যাপসিকাম ও লেটুসপাতা চাষ হয়েছে। আজকেই প্রথমবার এ আবাদ দেখে সত্যিই অনেক ভালো লাগলো। নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করলাম।’

কয়েকজন শিক্ষার্থী সূর্যমুখী, ক্যাপসিকাম ও লেটুসপাতা চাষ দেখতে এসেছেন। তারা বলেন, ‘প্রথমবার ক্যাপসিকাম ও লেটুসপাতা চাষ দেখলাম। এ ব্যতিক্রম চাষ দেখে খুব আনন্দ পেয়েছি। চারদিকে হাওরের বুকে সূর্যমুখীর ফুলগুলো দেখতে খুবই সুন্দর। আমরা বান্ধবীরা মিলে ছবি তুললাম।’

ভৈরব উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আকলিমা বেগম বলেন, ‘উপজেলার কৃষক মুজিবুর রহমান এক জমিতে ক্যাপসিকাম, লেটুসপাতা ও সূর্যমুখী আবাদ করে বেশ সফল হয়েছেন। কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় ৩০ শতক জমিতে ফাস্টফুডে ব্যবহৃত ক্যাপসিকাম, লেটুসপাতা চাষ দেখতে দর্শনার্থীরা প্রতিদিন ভিড় করছেন।’

এ ছাড়া প্রণোদনার আওতায় ভৈরবে শতাধিক কৃষক সূর্যমুখী চাষ করেছেন। উপজেলার ৭ ইউনিয়নে হাওরের জমিতে সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে। সূর্যমুখীর মধ্যে হাইসান-৩৩, আরডিএস ২৭৫ জাতের বীজ রোপণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘উপজেলায় মোট ৪ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছে। সরকার কৃষকদের প্রণোদনা দিচ্ছে। সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে নিয়মিত উঠান বৈঠকসহ মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।’

জাগ্রত জয়পুরহাট

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ

শিরোনাম