• শুক্রবার   ৩১ মার্চ ২০২৩ ||

  • চৈত্র ১৬ ১৪২৯

  • || ০৯ রমজান ১৪৪৪

জাগ্রত জয়পুরহাট

নার্সারি করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন মুকুল

জাগ্রত জয়পুরহাট

প্রকাশিত: ১৫ মার্চ ২০২৩  

জীবনে সফল হতে সঠিক পরিকল্পনায় যতেষ্ট। দুঢ় মনোবল নিয়ে কাজ করলে সেই ব্যক্তিই পোঁছাতে পারবে তার লক্ষ্যস্থানে। এমনিভাবে নিভৃত গ্রামের এক উদ্যোক্তা নার্সারি করে ঘুরিয়েছেন ভাগ্যের চাকা। তিনি গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার দক্ষিণ মন্দুয়ার গ্রামের কৃষক মকুবুল হোসেন মুকুল।

নিজ বাড়ির পাশে গড়ে তুলেছেন বিশাল আকৃতিক নার্সারি। ‘তৌফিক নার্সারি’ নামের এই নার্সারিতে বিভিন্ন ওষুধি, ফুল, ফলদ, বনজ, মসলা জাতের চারা উৎপাদন করা হয়। আর এসব চারা বিক্রি করেই মুকুল এখন স্বাবলম্বী হয়েছেন।

বৃক্ষপ্রেমী এই মুকুলের বাড়ি উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের দক্ষিণ মন্দুয়ার গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মরহুম আলহাজ আব্দুল কাদের মিয়ার ছেলে। নার্সারি ব্যবসায় তার নেশা-পেশা।

mokbul

জানা যায়, প্রায় ১৫ বছর আগে মুকুল হোসেন নিজের ৩ বিঘা জমিতে নানা জাতের চারা উৎপাদন শুরু করেন। এসব চারা বিক্রি করে অনেকটা লাভের মুখ দেখেন তিনি। এই লাভের টাকা দিয়ে পরিবারের চাহিদা পূরণসহ ধীরে ধীরে বাড়াতে থাকে নার্সারির পরিধি। বর্তমানে প্রায় ৭ বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন এই নার্সারি।

তার নার্সারিতে রয়েছে— ড্রাগন, আম, রামবুটান, লিচু, পিটফল আপেল-আঙ্গুর ফল ইত্যাদি। ফুলের মধ্যে গোলাপ, বেলী, ক্রিসমাসট্রি, এটোলিয়াম, এ্যারোমেটিক জুঁইসহ আরও হরেক রকম ফুলের চারা। ওষুধির মধ্যে অর্জুন, আমলকি, হরিতকি, বহেরা, নিম, জয়তুন, তুলসি ও পাথরকুশিসহ নানা প্রজাতির চারা। কাঠবৃক্ষের মধ্যে বেলজিয়াম, মেহগনি, সেগুন ও রেইন্ট্রি চারা। মসলা জাতের মধ্যে তেজপাতা, দারু চিনি, গোলমরিচ, লবঙ্গ। একই সঙ্গে শোভাবর্ধন ডেকোরেটর জাতীয় চারার মধ্যে রয়েছে- ক্যাকটাস, সাকুল্যান্ট পাতাবাহার, এ্যারোলিয়া প্রভৃতি। এছাড়া আরও বেশকিছু জাতের চারা দুলছে নার্সারি গুলোতে। নার্সারির চারাগুলো যেন শোভাবর্ধক হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

mokbul

এতে করে দৃষ্টি কাড়ছে পথচারীদের। খানিকটা প্রাণ জুড়াতে কেউ কেউ ঘুরে ঘুরে দেখছেন আবার কেউবা কিনে নিচ্ছে নানা জাতের চারা।

সবমিলে তৌফিত নার্সারিতে উৎপাদন করা হচ্ছে লক্ষাধিক চারা। প্রতিমাসে প্রায় ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা মূল্যে চারা বিক্রি করা হয়ে থাকে। স্থানীয় বাজারসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে এসব চারা বিক্রি করা হয়। এই নার্সারিতে সার্বক্ষণিক ৮-৯ জন শ্রমিক কাজ করে থাকেন। বীজ-সার-শ্রমিক ইত্যাদি খরচ বাদে প্রতিমাসে প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা লাভ করেন এই উদ্যোক্তা। অল্প পুঁজিতে নার্সারি ব্যবসায় সফল হয়েছেন তিনি। ইতোমধ্যে বৃক্ষমেলায় বেশ কয়েকবার প্রথম স্থান অধিকার করেছেন তিনি। এদিকে, সফল নার্সারি ব্যবসায়ী হিসেবে নিজের পরিচিতি বাড়িয়েছেন। এরই পাশাপাশি স্থানীয় বেশ কিছু যুবকের কর্মসংস্থানও হয়েছে এ নার্সারিতে। মকুল হোসেন নতুন নতুন জাতের চারা উৎপাদন করে এলাকায় বেশ সুনাম অর্জনও করেছে। একজন প্রতিষ্ঠিত নার্সারি মালিক হয়েও এখনো তিনি নিজ হাতে চারার পরিচর্যা করেন। যেন প্রতি গাছের সঙ্গে তার সু-সর্ম্পক গড়ে উঠেছে।

mokbul

তৌফিক নার্সারির নজরুল ইসলাম নামের এক কর্মচারি জানান, নার্সারিটি পরিচর্যাসহ চারা বাজারজাতকরণে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এ কাজটি করে নিত্যদিন ৪০০ টাকা পারিশ্রমিক পাচ্ছেন। এদিয়ে ভালোই চলছে তার সংসার।

নার্সারির মালিক মকবুল হোসেন মুকুল বলেন, মানুষ বিভিন্ন এলাকা থেকে চারা কিনতে আসেন নার্সারিতে। এছাড়া ভ্যানে করে হাট-বাজারে বিক্রি করে বেশ লাভবান হচ্ছি। উপজেলা কৃষি বিভাগের মাধ্যমে একাধিকবার জাতীয় পুরস্কারের জন্য আবেদন করেছি কিন্তু আমার কপালে তা জোটেনি। অথচ দুর্বল নার্সারিগুলো এই পুরস্কার পাচ্ছে।

সাদুল্লাপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মাহাবুবুল আলম বসনিয়া জানান, নার্সারি ব্যবসা অত্যন্ত লাভজনক। কেউ পরিকল্পনা মাফিক নার্সারি করলে অনায়াসে স্বাবলম্বী হবেন। মুকুল হোসেনকে আরও লাভবান করতে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।

জাগ্রত জয়পুরহাট
জাগ্রত জয়পুরহাট