লিভারে চর্বি হওয়ার কারণ ও করণীয়
বর্তমান সময়ের একটি পরিচিত রোগ হচ্ছে ফ্যাটি লিভার। এই রোগে অনেকেই ভুগেন। তবে ভয়ের বিষয় হচ্ছে, সঠিক সময়ে এই রোগ নির্ণয় করতে না পারলে ভয়ানক বিপদ হতে পারে। এই রোগ থেকে অনেকটাই নিস্কৃতি মিলবে নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপন, পরিমিত খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত শরীর চর্চার মাধ্যমে।
তবে লিভারে চর্বি কেন হয়, হলে কী উপসর্গ এবং কী করণীয় এই বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন পরিপাকতন্ত্র, লিভার ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মো. মামুন-উর রশিদ।
লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমে ফ্যাটি লিভার রোগ হয়। লিভারের সব কোষের শতকরা ৫ ভাগের বেশি কোষের মধ্যে চর্বি জমা হলে তাকে ফ্যাটি লিভার ডিজিজ বলে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফ্যাটি লিভার ডিজিজ ২৭-৩৮শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। বিভিন্ন কারণে ফ্যাটি লিভার হতে পারে। আমাদের দেশে নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ বেশি হয়।
ফ্যাটি লিভারের কারণ
>> অ্যালকোহল সেবন
>> অতিরিক্ত জাংক ফুড ও কোমল পানীয়
>> থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা
>> দ্রুত ওজন হ্রাস
>> পাকস্থলির সার্জারি
>> উইলসন ডিজিজ
>> ডায়াবেটিস, অত্যধিক স্থূলতা, রক্তে চর্বির মাত্রা বেশি (মেটাবলিক সিনড্রম)
>> ক্ষতিকারক ওষুধ-গ্লুকোকর্টিকয়েড, ইস্ট্রোজেন, টেমোক্সিফেন ইত্যাদি।
যা করবেন
>> স্বাভাবিক ফ্যাটি লিভারে (৮০শতাংশ) শুধু চর্বি জমে। কোনো প্রদাহ বা ফাইব্রোসিস থাকে না। এ সময় যথাযথ চিকিৎসা না করলে লিভারে প্রদাহ হয়ে ফাইব্রোসিস হতে পারে। এমনকি প্রদাহ না হয়েও সরাসরি লিভার ক্যান্সার হতে পারে। এ কারণে স্বাভাবিক ফ্যাটি লিভার হলেও চিকিৎসা না করে বসে থাকার সুযোগ নেই।
>> স্টিয়াটো হেপাটাইটিস (২০শতাংশ) এ পর্যায়ে লিভারে প্রদাহ থাকে। প্রদাহ হতে ফাইব্রোসিস হয়। স্টিয়াটো হেপাটাইটিসে এ আক্রান্ত প্রায় ১১শতাংশ রোগীর পরবর্তী ১৫ বছরে লিভার সিরোসিস হয়। অতঃপর এদের মধ্যে ৭ শতাংশ রোগী ৬.৫ বছরের মধ্যে লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। এ পর্যায়ে চিকিৎসা গ্রহণ করলে ফাইব্রোসিসের গতি কমানো গেলেও পুনরায় স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব না।
উপসর্গ
ফ্যাটি লিভারের সাধারণত কোনো উপসর্গ থাকে না। রুটিন চেকআপ বা অন্য কোনো কারণে পেটের আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে গিয়ে ফ্যাটি লিভার ধরা পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে তখন রোগটি অনেক অগ্রসর হয়ে যায়। অন্য উপসর্গের মধ্যে পেট ব্যথা, দুর্বল লাগা ইত্যাদি।
আগে ফ্যাটি লিভারকে খুব হালকাভাবে দেখা হতো। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, ফ্যাটি লিভার থেকে লিভার সিরোসিস এমনকি লিভার ক্যান্সারও হতে পারে। এছাড়া ফ্যাটি লিভার রোগীদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। তাই যাদের ফ্যাটি লিভার আছে তাদের উচিত রোগটি সম্পর্কে জানা এবং চিকিৎসা নেয়া।
চিকিৎসা
ফ্যাটি লিভারের চিকিৎসার দুটি অংশ
প্রথমতঃ মেটাবলিক সিনড্রমের চিকিৎসা
>> শরীরের অতিরিক্ত মেদের চিকিৎসা
>> ইনসুলিন রেজিসটেন্সের চিকিৎসা
>> উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা
>> রক্তের অধিক চর্বির চিকিৎসা
দ্বিতীয়তঃ ফ্যাটি লিভারের চিকিৎসা
>> জীবনাচার পরিবর্তন
>> খাদ্যভ্যাস পরিবর্তন
>> নিয়মিত ব্যায়াম করা
>> সার্জারি-বারিয়াট্রিক সার্জারি
>> ফার্মাকোলজিক্যআল চিকিৎসা-পাইওগ্লিটাজন, মেটফরমিন, এন্টি অক্সিডেন্ট, আরসোডিঅক্সিকলিক এসিড, ফাইব্রেট।
মনে রাখা জরুরি, অধিকাংশ ক্ষেত্রে ফ্যাটি লিভার সাধারণ ফ্যাটি হলেও, এ ফ্যাটি লিভারই আমাদের দেশের লিভার সিরোসিসের অন্যতম প্রধান কারণ। তাই আসুন, এখনই আমরা এ রোগটি সম্পর্কে জানি এবং শুরুতেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেই এবং অন্যদেরও এ ব্যাপারে উৎসাহিত করি।
জাগ্রত জয়পুরহাট