কচুরিপানার স্বাস্থ্য উপকারিতা
কচুরিপানা একটি জলজ উদ্ভিদ। এর ইংরেজি নাম water hyacinths। বৈজ্ঞানিক নাম: Eichhornia (বর্তমান নাম: Pontederia)। এর ৭টি প্রজাতি আছে এবং এগুলো মিলে আইকরনিয়া গণটি গঠন করেছে।
কচুরিপানা দেখতে গাঢ় সবুজ হলেও এর ফুলগুলো সাদা পাপড়ির মধ্যে বেগুনি ছোপযুক্ত এবং মাঝখানে হলুদ ফোঁটা থাকে। সাদা এবং বেগুনি রঙের মিশেলে এক অন্যরকম আবহ তৈরি করে। সাদা পাপড়ির স্থলে কোথাও হালকা আকাশি পাপড়িও দেখতে পাওয়া যায়। পুরোপুরি ফুল ফোটার আগে একে দেখতে অনেকটা নলাকার দেখায়। পাপড়িগুলোর মাঝখানে পুংকেশর দেখতে পাওয়া যায়। প্রতিটি ফুলে ছয়টি করে পাপড়ি দেখা যায়। এলাকাভিত্তিক অনেকে একে একেক নামে চিনে থাকে।
বাংলাদেশে প্রায় ৭ প্রজাতির কচুরি দেখতে পাওয়া যায়। প্রায় সারা বছরই কচুরি ফুল ফুটতে দেখা যায়। কচুরি ফুলের মুগ্ধতায় আমাদের মধ্যে প্রকৃতি প্রেম জাগ্রত করে। গ্রামবাংলার অতি পরিচিত সাধারণ একটি জলজ উদ্ভিদ কচুরিপানা। বাংলাদেশের প্রায় প্রত্যেক এলাকায় নদ-নদী, পুকুর, জলাশয়, হাওর বা নিন্মাঞ্চলে সচরাচর কচুরি দেখতে পাওয়া যায়। এটি একটি বহু-বর্ষজীবী
কচুরিপানায় অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে, যা শরীরে নতুন শক্তি যোগায়। ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিনের রিপোর্ট অনুযায়ী, কচুরিপানায় অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টি-ফাঙ্গাল এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কলেরা, গলা ব্যথা এবং সাপের কামড়ের চিকিৎসার জন্য কচুরিপানার ব্যবহার করা হয়।
এবার জেনে নিন কচুরিপানার স্বাস্থ্য উপকারিতা
১. ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়: কচুরিপানা ত্বকের বিভিন্ন কালচে দাগ এমনকি রোদে পোড়া ভাবও কমিয়ে দিতে পারে। এর রস ফেসপ্যাক হিসেবে ব্যবহার করলে ত্বক কোমল ও মসৃণ হয়। জানেন কি? আজকাল অনেক নামী দামী ব্র্যান্ডের প্রসাধনীতে কচুরিপানা প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
২. একজিমা সারাতে: একজিমা হলে ত্বক চুলকায়, শুষ্ক হয় এবং আক্রান্ত স্থানটি লাল হয়ে যায়। এমন সময় ভরসা রাখুন কচুরিপানায়। এতে থাকা প্রদাহবিরোধী উপাদান একজিমা সারাতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে আক্রান্ত স্থানে কচুরিপানা বেটে ব্যবহার করুন।
৩. ভ্যালো শ্যাম্পু: কচুরিপানা চুলের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী এক দাওয়াই। আপনি চাইলেই জলজ এই উদ্ভিদের রস চুলে ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে চুল তো পরিষ্কার হবেই পাশাপাশি ঝলমলে ও কোমল ভাব আনবে। চাইলে কচুরিপানার রস এসেনশিয়াল অয়েল বা আমন্ড অয়েলের সঙ্গে মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করুন।
৪. দাঁতে ব্যথা কমায়: কচুরিপানার পাতায় থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান দাঁত ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। কচুরিপানার কয়েকটি পাতা পানিতে ফুঁটিয়ে গার্গেল করুন। দাঁতের ব্যথা মুহূর্তেই কমে যাবে।
৫. গলা ব্যথা কমায়: দাঁত ব্যথার মতোই গলা ব্যথাতেও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে কচুরিপানা। এতে থাকা প্রদাহবিরোধী উপাদান গলার বিভিন্ন সংক্রমণ দূর করে ব্যথা কমায়। এক্ষেত্রে কচুরিপানার পাতা পানিতে ফুটিয়ে সেই পানি পান করুন।
৬. কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে: কচুরিপানায় রয়েছে হাইপোকোলেস্টেরোলেমিক উপাদানসমূহ। যা রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এক্ষেত্রে নিয়মিত কচুরিপানা সিদ্ধ করা পানি পান করতে পারেন। পাশপাশি এর বিভিন্ন পদ রান্না করেও খেতে পারেন।
৭. মাতৃদুগ্ধ বাড়ায়: জানেন কি? কেনিয়ার নারীরা মাতৃদুগ্ধ বাড়াতে কচুরিপানা ব্যবহার করে। তারা কচুরিপানার পাতা ফুটিয়ে সেই রস নিয়মিত পান করে। এমনকি সেখানকার নারীরা অনিয়মিত ঋতুস্রাবের সমস্যা সমাধানে কচুরিপানার ফুলের রস বা পানিতে ফুটিয়ে সেই পানি পান করে থাকেন।
৮. ওজন কমায়: এতে রয়েছে প্রচুর ডায়েটারি ফাইবার। যা ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন কচুরিপানার পাতা ফুটিয়ে চায়ের মতো পান করলে ওজন দ্রুত কমবে।
৯. রক্তক্ষরণ বন্ধ করে: অনেকেরই কেটে গেলে রক্তপাত বন্ধ হয় না। তাদের ক্ষেত্রে কচুরিপানা বেশ কার্যকরী এক উপাদান। এতে রয়েছে অ্যামিনো এসিড। যা রক্তক্ষরণ বন্ধে কাজ করে।
১০. বিশেষ দ্রষ্টব্য: হাজারো উপকার থাকা স্বত্ত্বেও এই জলজ উদ্ভিদটি কখনো সিদ্ধ না করে খাবেন না। এতে করে পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে। সিদ্ধ করে কিংবা ভেজে এটি নিশ্চিন্তে খেতে পারেন। যারা সর্দি কাশিতে ভুগছেন তারাও কচুরিপানা ব্যবহার থেকে দূরে থাকুন।
সূত্র: ডেইলি বাংলাদেশ