শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ || ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকাশিত: ১১:৫০, ২ অক্টোবর ২০২১

পাখির গ্রাম ক্ষেতলাল উপজেলার কানাইপুকুর

পাখির গ্রাম ক্ষেতলাল উপজেলার কানাইপুকুর

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের কানাইপুকুর গ্রামের একটি পুকুরপাড়ের কয়েকটি গাছে বাসা বেধেছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। ১৮ থেকে ২০ বছর থেকে প্রায় ২৫ হাজারের মতো পাখি এখানে বসবাস করছেন। পাখির কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভাঙে গ্রামবাসীদের। প্রতিদিন এসব পাখি দেখতে আসেন আশেপাশের এলাকার মানুষ। তাই এই গ্রাম এখন পাখির গ্রাম হিসেবে পরিচিত সাধারণ মানুষের কাছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের কানাইপুর গ্রামের আব্দুস সোবাহান মন্ডলের বাড়ির পাশে রয়েছে একটি পুকুর। পুকুরপাড়ের প্রায় ৫ বিঘা জমির ওপর বট, পাইকর, নীম, তেতুল, আম, বাঁশঝাড়সহ বিভিন্ন গাছের ডালে ডালে হাজার হাজার পাখি বাসা বেঁধেছে। গড়ে উঠেছে দেশি-বিদেশি পাখিদের অভয়াশ্রম। গাছে গাছে পাখিরা ডিম থেকে প্রজনন করছে বাচ্চাও।

এসব পাখির মধ্যে রয়েছে শামুকখোল, বক, কানাবক, শঙ্খচোরা, আতচোরা, পানকৌড়ি ও হরিয়াল। তবে এর মধ্যে শামুকখোল রয়েছে সবচেয়ে বেশি। পাখির কিচিরমিচির ডাক সবসময় মুখোরিত করে রাখে গ্রামবাসীদের। তাই নিজের সন্তানের মতো লালন করেন পাখিদের তারা।

আব্দুস সোবাহান মন্ডল নামের একজন বলেন, এসব পাখি প্রায় ২০ বছর থেকে আমাদের এখানে আছে। আমরা কাউকে এই পাখিগুলো মারতে বা ধরতে দেই না। সবসময় আমরা পাহারা দেই। পাখিগুলোর (শামুকখোল) ওজন ৫/৬ কেজি। তাই এদের বাসাগুলোও অনেক বড়। এরা ৪টি করে ডিম দেয়। কিছুদিন আগেই ডিম থেকে বাচ্ছা ফুটেছে।

এই পাখিগুলো দেখাশুনা করেন আব্দুস সোবাহান মন্ডলের ছেলে জাহাঙ্গীর আলমসহ তাদের পরিবার। জাহাঙ্গীর আলম বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, এই পাখি কলোনী আমি দেখাশুনা করি। এসব পাখি মূলত ৮/৯ মাস এখানে থাকে। শীত শুরুর আগে মাঠের পানি শুকিয়ে গেলে এরা নদী এলাকার দিকে চলে যায়। আবারও গরম একটু শুরু হলে ফের এখানে ফিরে আসে।

তিনি বলেন, যখন পাখিগুলো থাকে না, খুব খারাপ লাগে, মনে হয় আর তারা ফিরে আসবে না। আবার যখন ফিরে আসে তখন মন আনন্দে ভরে যায়। এছাড়া প্রতিদিন অনেক দর্শনার্থী পাখিগুলো দেখতে আসেন। এখানে সবচেয়ে বড় সমস্যা দর্শনার্থীদের আসার ভালো কোনো রাস্তা নেই। তাই সরকার যদি এখানে আসার ভালো রাস্তার ব্যবস্থা করে দিতো তাহলে এটি জনপ্রিয় পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে গড়ে উঠবে।

ওই বাড়ির আক্তার বানু ও তামিম হোসেন বাংলাদেশ জার্নালকে জানান, পাখিগুলো যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে যায়, তখন আমরা ছুটে আসি। পাখিগুলোকে উদ্ধার করে চিকিৎসা দেই এবং নানাভাবে সেবা করার চেষ্টা করি। যখন দূর থেকে কোনো দর্শনার্থী আসেন তখন তারা যাতে পাখিগুলো ভালোভাবে দেখতে পায় সেই ব্যবস্থা করে দেই।

তারা আরও জানান, প্রত্যন্ত গ্রাম হওয়ায় এখানকার রাস্তাঘাট অনেক খারাপ। রাস্তা পাকাকরণের কাজ কিছু হওয়ার পর বন্ধ হয়ে গেছে। সেজন্য দর্শনার্থীরা প্রাইভেটকার বা বড় গাড়ি নিয়ে আসতে পারে না। এছাড়াও এই পাখি কলোনীকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে দোকানপাট বা বসার জায়গার ব্যবস্থা হলে দর্শনার্থীরা অনেক সুবিধা পেতো।

স্থানীয় গ্রামবাসী রাবেয়া সুলতানা বাংলাদেশ জার্নালকে জানান, গরমের শুরুতে পাখিগুলো আসে আর শীতের শুরুতে চলে যায়। যখন পাখিগুলো থাকে তখন পুরো গ্রাম মুখোরিত করে রাখে, আর যখন থাকে না গ্রামটা খালি খালি লাগে। কিচিরমিচির শব্দে আমাদের প্রাণ ভরে যায়। এসব পাখি দেশের সম্পদ, এদের রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব।

স্থানীয় জহুরুল ইসলাম বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, প্রায় ২০ বছর থেকে এই পাখিগুলোকে এখানে দেখছি। প্রথমে অল্প কিছু সংখ্যক পাখি এসেছিল এখানে। এরপর প্রতিবছর আরও পাখি আসতে থাকে। এখানে বাচ্চা প্রজনন করায় এখন বেড়েই চলেছে এর সংখ্যা। বর্তমানে ২৫ হাজারের মতো পাখি রয়েছে এখানে। আশপাশের অনেক মানুষ অনেক সময় পাখিগুলো শিকার করার জন্য এখানে আসে। কিন্তু আমরা গ্রামের লোকজন তাদের শিকার করতে দেই না। এই পাখিগুলোকে আমরা সবসময় রক্ষণাবেক্ষণ করি।

পাখি দেখতে আসা রওনক ও ফাতেমা বাংলাদেশ জার্নালকে জানালেন, অনেক প্রজাতির পাখি এখানে আছে। এতো বেশি পাখি অন্য কোথাও জীবনেও দেখিনি। একসাথে এতো পাখি দেখে মুগ্ধ হয়ে গেছি।

মাহবুবুল নামে এক দর্শনার্থী জানান, এই পাখি কলোনীর কথা শুনে ছুটে এসেছি দেখার জন্য। এখানকার পাখিগুলো খুব সুন্দর। তবে এই গ্রামে আসার ভালো কোন রাস্তা নেই।

ক্ষেতলাল উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তাকিম মন্ডল বাংলাদেশ জার্নালকে জানান, কানাইপুকুর গ্রামের বিভিন্ন প্রজাতির হাজার হাজার পাখি দেখতে বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ আসে। এটি পাখির অভয়ারণ্যের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। এজন্য উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।

তিনি বলেন, আমি ঠিকাদারের সাথে কথা বলেছি। এই গ্রামের যে সড়কের কাজ চলছে তা দ্রুতই শুরু হবে।

জয়পুরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মাহফুজুর রহমান বাংলাদেশ জার্নালকে জানান, কানাইপুকুর গ্রামে প্রায় ২৫ হাজার দেশি-বিদেশি পাখি বসবাস করে। ইতিমধ্যে গ্রামটিকে অভয়ারণ্য করার জন্য স্থানীয় প্রশাসন বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। বিশেষ করে প্রাণিসম্পদ বিভাগ বিভিন্ন মেডিকেল টিমের মাধ্যমে এই পাখিগুলোর চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছে। এছাড়াও পাখিগুলো যাতে বিলুপ্ত না হয় এবং কেউ শিকার করতে না পারে সেজন্য প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে তদারকি করা হচ্ছে।

জাগ্রত জয়পুরহাট

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ

শিরোনাম

ঈদে বেড়েছে রেমিট্যান্স, ফের ২০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে রিজার্ভট্রেনের টিকিট কালোবাজারি চিরতরে বন্ধ হবে: রেলমন্ত্রীজয়পুরহাটে ডিজে পার্টি রোধে পুলিশের অভিযানআলো ছড়াচ্ছে কুষ্টিয়ার বয়স্ক বিদ্যালয়মেয়েদের স্কুলের বেতন না দিয়ে ধোনিদের খেলা দেখলেন তিনিঢাকায় ই*সরায়েলের বিমানবো*মের মতো সিলিন্ডার বি*স্ফোরণ, করণীয় কীদেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীরআয়ারল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনার অভিনন্দনসুইজারল্যান্ডে স্কলারশিপ পাওয়ার উপায় কিঈদের দিন ৩ হাসপাতাল পরিদর্শন স্বাস্থ্যমন্ত্রীরঈদের জামাতে নামাজরত অবস্থায় ভাইয়ের মৃত্যু, খবর শুনে মারা গেলেন বোনও