শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪ || ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রকাশিত: ১২:০৮, ৪ ডিসেম্বর ২০২১

পোলট্রিশিল্পে বদলে যাচ্ছে জয়পুরহাট

পোলট্রিশিল্পে বদলে যাচ্ছে জয়পুরহাট

এই শিল্পে সারা দেশের মধ্যে জয়পুরহাট দ্বিতীয় আর সোনালি মুরগি উৎপাদনের দিক থেকে প্রথম। সোনালি জাতের এই মুরগির উদ্ভাবনও জয়পুরহাটে। পোলট্রি ভিলেজ বলে পরিচিতি পেয়েছে আক্কেলপুরের জামালগঞ্জ এলাকা। সবজির জন্য পরিচিত জয়পুরহাটে পোলট্রিশিল্পের বিপ্লব ঘটে প্রায় দুই যুগ আগে। জেলাজুড়ে ছোট-বড় মিলিয়ে ১০ হাজারের বেশি মুরগির খামার আছে। পোলট্রিশিল্পকে ঘিরে ফিড মিলও গড়ে উঠেছে। জেলার আড়াই লাখ মানুষ এখন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই পোলট্রিশিল্পের সঙ্গে জড়িত।

জেলায় পোলট্রিশিল্পে প্রতিদিন চার থেকে সাড়ে চার কোটি টাকার লেনদেন হয়। এই শিল্পে সারা দেশের মধ্যে জয়পুরহাট দ্বিতীয় আর সোনালি মুরগি উৎপাদনের দিক থেকে প্রথম। সোনালি জাতের এই মুরগির উদ্ভাবনও জয়পুরহাটে। জেলায় পোলট্রিবিপ্লবের পেছনে রয়েছে ‘সরকারি মুরগি প্রজনন ও উন্নয়ন খামার’। এটি জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার রুকিন্দীপুর ইউনিয়নের জামালগঞ্জে অবস্থিত। ব্রিটিশ আমলে অর্থাৎ, ১৯৩৭ সালে ৩০ বিঘা জমিতে সরকারি এ খামারটি নির্মিত হয়।

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় ও মুরগির খামার মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জামালগঞ্জে অবস্থিত এই খামারের প্রথম নাম ছিল সরকারি হাঁস-মুরগির খামার। এখন হাঁস বাদ দিয়ে নামকরণ হয়েছে সরকারি মুরগি প্রজনন ও উন্নয়ন খামার। ২০০০ সালের পর মূলত জেলায় পোলট্রিবিপ্লব ঘটে। তৎকালীন সরকারি হাঁস-মুরগি খামারের সহকারী পরিচালক মো. শাহ জামাল সোনালি জাতের মুরগি উদ্ভাবন করেন। প্রথমে শাহাপুর গ্রামের ১০টি মুরগির খামারে নতুন জাতের এই সোনালি মুরগি পরীক্ষামূলকভাবে লালনপালন শুরু হয়। নতুন উদ্ভাবিত সোনালি জাতের এই মুরগি দেখতে অনেকটা দেশি মুরগির মতো, মাংসের স্বাদও একইরকম।

২০১০ সালের দিকে দেশব্যাপী নতুন জাতের এই সোনালি মুরগির বিস্তৃত লাভ করে। জয়পুরহাট জেলাসহ আশপাশের জেলাগুলোতে একের পর এক বাণিজ্যিকভাবে সোনালি মুরগির খামার গড়ে ওঠে। আগে যে জমিতে ধান-সবজি চাষ হতো, এখন সেখানে উঠেছে পাঁচ থেকে সাততলার মুরগির খামার। এই শিল্পকে ঘিরে ১১ হাজার ৫৭০ জন উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। জেলায় ১১টি পোলট্রি ফিড কারখানা ও ৫৫টি হ্যাচারি গড়ে উঠেছে। প্রতিদিন গড়ে চার লাখ ডিম, তিন লাখ এক দিনের সোনালি মুরগির বাচ্চা উৎপাদন হচ্ছে। পোলট্রিশিল্পকে ঘিরে ভেটেরিনারিও সমৃদ্ধি লাভ করেছে। জেলায় পোলট্রিশিল্পের ওষুধ খাতে বছরে ২২ থেকে ২৪ কোটি টাকার বিনিয়োগ হয়।

সম্প্রতি পোলট্রি ভিলেজ বলে পরিচিত জামালগঞ্জ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পাঁচ থেকে সাততলার খামারে কয়েক হাজার মুরগি লালনপালন করা হচ্ছে। আশপাশের বাজারের প্রায় সব দোকানই পোলট্রিকেন্দ্রিক।

শেফালি পোলট্রি খামারের মালিক সাইফুল ইসলাম বলেন, তিনি প্রথমে খুব ছোট পরিসরে মুরগির খামার শুরু করেন। এখন পাঁচ থেকে সাতটি পাঁচতলাবিশিষ্ট মুরগির খামার আছে তাঁর। এটি অত্যন্ত লাভজনক ও সম্ভাবনাময় শিল্প। খুব সহজেই যে কেউ স্বাবলম্বী হতে পারেন।

জয়পুরহাট পদ্মা ফিড অ্যান্ড চিকেন ব্যবস্থাপনার পরিচালক আনোয়ারুল হক বলেন, এ শিল্পকে আরও সমৃদ্ধ করার জন্য জেলায় একটি মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা স্থাপন জরুরি। এ ছাড়া মানসম্পন্ন ফিড উৎপাদন নিশ্চিতের জন্য কারখানাগুলোতেও নজরদারি বৃদ্ধি করতে হবে।

এ বিষয়ে কথা হয় জয়পুরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মাহফুজার রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর খামারিদের প্রশিক্ষণ, নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি ও কারিগরি সহায়তায় নিবিড় তদারকি করছে। এ শিল্পের প্রসারে আরও কাজ করা হবে।

জাগ্রত জয়পুরহাট

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ