আগাম জাতের আলু উত্তোলনের ধুম পড়েছে জয়পুরহাটের মাঠে মাঠে
আগাম জাতের আলু উত্তোলনের ধুম পড়েছে জয়পুরহাটের মাঠে মাঠে। এই আলুর ফলন কম হলেও দাম ভালো থাকে। তাই প্রতিবছর ভালো দাম পাওয়ার আশায় চাষিরা আগাম জাতের আলু রোপণ করেন।এবার আলুর ফলন গত মৌসুমের চেয়ে ভালো হলে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সদর উপজেলার বুম্বু বানিয়াপাড়া, কোমরগ্রাম, ভাদশার দুর্গাদহসহ বিভিন্ন এলাকায় কৃষান-কৃষানিরা আগাম জাতের আলু তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এখন মূলত মিউজিকা, গ্রানোলা, ফ্রেশ, ক্যারেজ, রোমানা পাকরি এবং বট পাকরি আলু বেশি তোলা হচ্ছে। আক্কেলপুর বাজারে সোমবার (০৩ জানুয়ারি) সকালে আলু বিক্রি করতে আসা চাষিরা জানান, আজকের বাজারে প্রতি মণ ক্যারেজ আলু ৪৫০ থেকে ৪৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। আর গ্রানোলা আলু ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকা মণ।
এবার ৪৫ শতক জমিতে আগাম জাতের মিউজিকা আলু চাষ করেছেন জয়পুরহাট সদর উপজেলার বানিয়াপাড়ার আলুচাষি মুবিনুল ইসলাম মোবিন। তিনি বলেন, রোপণের ৫৮ দিন বয়সে আমি আলু তুলেছি। জমিতে বিঘাপ্রতি ফলন হয়েছে ৬৫ মণ। কিন্তু পাইকারকে প্রতি বস্তায় ৩ কেজি হারে বিঘাপ্রতি কয়েক মণ আলু ঢলতা (অতিরিক্ত) দিতে হবে। এজন্য বিঘাপ্রতি ৬৫ মণ ফলন হলেও সব বাদে ৬০ মণের দাম পাওয়া যাবে।
আমার আলু আগেই ৪৬০ টাকা মণ হিসেবে দরদাম করে রেখেছিলাম।এজন্য খরচ বাদে কিছু টাকা লাভ করতে পেরেছি। আমার আরও আলু আছে। দশ-পনেরো দিন পরে সেগুলো তুলতে হবে।কোমরগ্রাম দক্ষিণপাড়ার কৃষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমি নিজেই আলু রোপণ থেকে শুরু করে নিড়ানি, বাঁধানো এবং ভার বহনসহ যাবতীয় কাজ করেছি। তাই অন্যের থেকে বিঘাপ্রতি ৫-৬ হাজার টাকা খরচ কম হয়েছে। এক বিঘা জমির আলু তুলেছি। ফলন হয়েছে ৬৬ মণ। ৪৬০ টাকা দরে বিক্রি করেছি।
আলুর পাইকারি ক্রেতা আসলাম হোসেন আলী বলেন, বাজারে এখন আগাম জাতের আলু উঠতে শুরু করেছে। এসব আলু ঢাকা, রাজশাহী, সিলেট, যশোর, চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের মোকামে সরবরাহ করা হচ্ছে। কাঁচাবাজারের মূল্য সঠিকভাবে বলা যায় না। এক সপ্তাহ পরে আলুর দাম বাড়তেও পারে। আবার কমতেও পারে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার ৪০ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আলু রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ৭ হাজার ১০০ হেক্টর, পাঁচবিবিতে ৭ হাজার, কালাইয়ে ১১ হাজার ১০০, ক্ষেতলালে ৯ হাজার এবং আক্কেলপুরে ৬ হাজার ১৫০ হেক্টর জমি। কিন্তু ৪০ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে আলুর অর্জিত লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়িয়েছে।
জেলা কৃষি বিপণন বিভাগের মাঠ ও বাজার পরিদর্শক মো. সাখওয়াত হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজকের বাজারে রোমানা পাকরি ও বট পাকরি (লাল) আলু ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকা মণ বিক্রি হয়েছে। এই আলু এক সপ্তাহ পূর্বে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা মণ ছিল। আর আজকে মিউজিকা (সাদা) আলি বিক্রি হয়েছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা মণ। এই আলু এ সপ্তাহপূর্বে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা মণ ছিল।
আলুর বাজার বর্তমানে নিম্নমুখী। এতে চাষিদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। হিমাগারগুলোতে এখন পর্যন্ত অতিরিক্ত কিছু আলু আছে। সেজন্য বর্তমানে আগাম জাতের আলুর দাম কমতির দিকে। তবে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই হিমাগারে সংরক্ষিত অতিরিক্ত আলু শেষ হলে নতুন আলুর প্রতি টান বাড়বে এবং দামও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছেন এই কর্মকর্তা।
জাগ্রত জয়পুরহাট