• বৃহস্পতিবার ০১ জুন ২০২৩ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ১৭ ১৪৩০

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৪

জাগ্রত জয়পুরহাট

কালাইয়ের মাঠে সোনালী ফসলের হাতছানি

জাগ্রত জয়পুরহাট

প্রকাশিত: ১০ মে ২০২৩  

জয়পুরহাটের কালাইয়ে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে এখন সবুজের সমারোহ। যেদিকে তাকানো যায় সোনালী ধানের আভা ছড়িয়েছে বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে। বাংলার চিরায়ত অপরূপ দৃশ্য যেন ছবির মত ফুটে উঠেছে। মাঠ জুড়ে ধানের দোল খেলানোর দৃশ্য দেখে খুশিতে আত্মহারা কৃষাণ-কৃষাণীরা। 

কালাইয়ের অধিকাংশ ক্ষেতের বোরো ধান এখন উপজেলার মাঠে মাঠে সবুজ বর্ণ থেকে সোনালী রঙে রূপ নিচ্ছে। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর কৃষকরা বোরো ধানের ভালো ফলনের আশা করছেন।

আগাম জাতের কিছু বোরো ধান কাটা শুরু হলেও প্রায় জমির ধান এখনও পুরোপুরি পাকেনি। সেই হিসেবে ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হবে চলতি মে মাসের শেষের দিকে। ঝড় ও শিলাবৃষ্টির আতঙ্ক মাথায় নিয়ে স্বপ্নের ফসল বোরো ধান ঘরে তোলার অপেক্ষায় এখন দিন গুনছেন কালাইয়ের কৃষকরা। নতুন ধান ঘরে আসার স্বপ্ন নিয়ে আনন্দে কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে। ভোরের আলো ফুটতেই তারা কোমর বেঁধে ভাল ফলন পাওয়ার আশায় জমির  পরিচর্যায় মাঠে নামছেন।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, খাদ্য উৎপাদনে উত্তরাঞ্চলের জয়পুরহাটের কালাই অন্যতম উপজেলা । পাঁচটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এ উপজেলা। গত বছর বোরো মৌসুমে ১২ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছিল। চলতি বোরো মৌসুমে ১২ হাজার  ৯৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। গত বছর ধানের বাজার মূল্য বেশি পাওয়ায় এ বছর কৃষক তাদের সবজি ফসল লাগানো জমিতে ধান লাগানোর ফলে ৫০ হেক্টর বেশি জমিতে ধান চাষ হয়েছে। ফলে এ বছর  চলতি মৌসুমে উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা যা ছিল তাই অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। চলতি মৌসুমে এ ফসলের মধ্যে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের ধান রয়েছে ১১ হাজার ৪৫ হেক্টর এবং হাইব্রিড জাতের ধান রয়েছে ১ হাজার ৫০ হেক্টর।  এতে প্রায় চাল উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৮ হাজার ৭শত ৫৭ মেট্রিক টন । এ বছর বিনামূল্যে প্রনোদনা হিসেবে ৫ হাজার ৩শ' জন কৃষকদের মাঝে হাইব্রিড জাতের ধান বীজ, কীটনাশক ঔষুধ ও সার দেওয়া হয়েছে।  
উৎপাদন বিবেচনায় উপজেলায় আলুর পরে ধানকে প্রধান ফসল হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আগাম জাতের কিছু বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। তবে পুরো মাড়াই শুরু হবে মে মাসের শেষের দিকে। দীর্ঘ খরার ফলে আবহাওয়া বিভাগের সতর্কবার্তা অনুযায়ী ঝড় ও শিলাবৃষ্টির আতঙ্ক মাথায় নিয়ে অনেক কষ্টে ঘাম ঝরানো স্বপ্নের ফসল ঘরে তোলার অপেক্ষায় দিন গুনছে উপজেলার কৃষকরা। 

উদয়পুর ইউনিয়নের জমিনপুর গ্রামের স্বপন ও বাশিলাপাড়া গ্রামের কৃষক তাজুল ইসলাম বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকার পাশাপাশি পোকামাকড় এর উপদ্রব কম থাকায় এবং সময়মত সঠিক মাত্রায় সেচ দিতে পারায় এবার ধানের বাম্পার ফলনের আশা রয়েছে। ধান কর্তন এর সময় আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে নিরাপদে ধান ঘরে তোলার পাশাপাশি ধানের বাজার দাম ভালো পেলে লাভের মুখ দেখবে কৃষকেরা । 

মাত্রাই ইউনিয়নের ইন্দাহার গ্রামের জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমি ৪ একর জমিতে উপশী ও হাইব্রিড জাতের লাগিয়েছি। কীটনাশক, সার ও বীজ, অন্যান্য দ্রবাদির যা দাম এতে করে যদি ধানের বাজার ভাল না হয় তাহলে কৃষকেরা কৃষি কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। 

আহম্মেদাবাদ ইউ‌নিয়নের হাতিয়র গ্রামের কৃষক  শাহীন মন্ডল জানান,আমি দুই বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। আবহাওয়া ভালো থাকলে এবারও ভালো ফলন পাওয়ার আশা করছি। যাতে করে কৃষক যেন ধানের ন্যায্য মূল্য পান সেদিকে সরকারকে অবশ্যই নজর দিতে হবে। 

কালাই পৌরসভা মুন্সিপাড়া গ্রামের কৃষক আঃ জলিল উদ্দিন জানান, এবার এক বিঘা জমিতে হাইব্রিড জাতের ধান চাষ করেছি। ফসলের অবস্থা দেখে আশা করছি বাম্পার ফলন হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে না পড়লে এবং বাজারে ভালো দাম পেলে এবার লাভের মুখ দেখবো বলে আশা করছি। 

কালাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অরুন চন্দ্র রায় বলেন, অনুকূল আবহাওয়া এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ কম থাকায় ফসলের মাঠে কৃষকের নিবিড় পরিচর্যা ও সময় মতো সার-কীটনাশক প্রয়োগের কারণে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা কর‌ছি। উপজেলায় পুরোদমে ধান কাটা ও মাড়াই এর কাজ শুরু হবে চলতি মে মাসের শেষ দিকে। স্বপ্ন বোনা সোনালী ফসল বোরো ধান কাটা ও মাড়াইয়ের এর জন্য মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।

জাগ্রত জয়পুরহাট
জাগ্রত জয়পুরহাট