শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪ || ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রকাশিত: ১১:১৯, ১৪ মে ২০২৩

জয়পুরহাটে বারোমাসি তরমুজে বছরে বাণিজ্য ১৫ কোটি টাকা

জয়পুরহাটে বারোমাসি তরমুজে বছরে বাণিজ্য ১৫ কোটি টাকা

তরমুজ এখন আর কেবল গ্রীষ্মকালীন ফল নয়। বারোমাসই এর চাষ করছেন কৃষকরা। আর এতে লাভও হচ্ছে ভালো। জয়পুরহাটে তাই বেড়েই চলেছে বারোমাসি তরমুজের চাষ। বারোমাসি তরমুজের চাষ ও বিক্রিকে কেন্দ্র করে জেলায় বছরে বাণিজ্য হচ্ছে কোটি কোটি টাকা।

স্থানীয় বাজারে এখন প্রতিটি গোল্ডেন ক্রাউন, ব্ল্যাকবেবি ও মধুমালা জাতের বারোমাসি তরমুজ ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে এ তরমুজ পাওয়া যাবে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত। তরমুজচাষিরা জানান, বছরের ৯ মাসজুড়ে মাচায় তরমুজ চাষ করা যায়। চারা রোপণের ৫০ দিনের মধ্যেই ফলন আসে এবং ফল পরিপক্ব হয়ে যায়।

জয়পুরহাটে এ বারোমাসি তরমুজ চাষ বেশি দিনের নয়। ২০১৮ সালে সর্বপ্রথম পাঁচবিবি উপজেলার ভারাহুত গ্রামের কৃষক আবু মুসা মাত্র আড়াই শতক জমিতে মাচায় ব্ল্যাকবেবি ও মধুমালা তরমুজ চাষ করেন। বেসরকারি এনজিও সংস্থা এহেড সোশ্যাল অর্গানাইজেশনের (এসো) উদ্যোগে তরমুজ বীজ, সার, মালচিং সবকিছু বিনামূল্যে কৃষক আবু মুসাকে সরবরাহ করা হয়। এতে মোট উৎপাদন খরচ পড়েছিল পাঁচ হাজার টাকা। বিক্রি হয়েছিল ২৬ হাজার টাকা। তরমুজ চাষের এ লাভ দেখে এলাকার অন্যরাও তরমুজ চাষে ঝুঁকে পড়েন। এরপর থেকে এ এলাকার কৃষকদের আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তরমুজ চাষে এ এলাকার মানুষের ঘটেছে আর্থিক পরিবর্তন। যাদের আগে কিছু ছিল না, তরমুজ চাষ করে তারা এখন করেছেন ইটের বাড়ি, কিনেছেন মোটরসাইকেল।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাস্তার দুই পাশে ধানের খেত। পুরো মাঠে বাতাসে দোল খাচ্ছে ধানের শীষ। এরই মাঝে মাঝে রয়েছে তরমুজখেত। আর খেতের মাচায় ঝুলছে রং-বেরঙের তরমুজ। কোনোটার উপরিভাগ হলুদ, ভেতরে লাল টকটকে। আবার কোনোটির উপরিভাগ গাঢ় সবুজ, ভেতরে হলুদ। গাছ থেকে যেন ফলগুলো ছিঁড়ে না পড়ে এ জন্য ব্যবহার করা হয়েছে নেটের ব্যাগ।

কৃষকরা জানান, গোল্ডেন ক্রাউন জাতের তরমুজের ওজন হয় এক থেকে দেড় কেজির মধ্যে। আর ব্ল্যাকবেবি জাতের তরমুজ দেড় থেকে তিন কেজি হয়। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে পাঁচবিবি, আক্কেলপুর ও কালাই উপজেলার প্রায় তিন শতাধিক কৃষক বিভিন্ন জাতের তরমুজ চাষ করছেন।

তরমুজ ঘিরে এখন উৎসবের আমেজ চলছে জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার আওলাই ইউনিয়নের ভূতগাড়ি, ভারাহুত, শিরট্টি, গোড়নাসহ আশপাশের কয়েকটি এলাকায়। ভারাহুতের মাঠেই এবার শত শত বিঘা জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে।

গত কয়েক বছর ধরে তরমুজ চাষ করছেন কৃষক আবু মুসা। এবার তিনি ৬ বিঘা জমিতে কয়েক জাতের তরমুজের আবাদ করেছেন। তিনি বলেন, ‘বছরে ৯ মাস ধরে এই তরমুজ চাষ করা যায়। আর বাকি ৩ মাস শীত মৌসুমে আলু চাষ করা হয়। ধান আর আলু চাষ আমাদের প্রধান ফসল। কিন্তু তরমুজে এখন লাভ বেশি। অসময়েও ভালো টাকা আয় হয়।’

ভারাহুত গ্রামের আরেক কৃষক আবু কালাম বলেন, প্রতি বিঘায় ৬০ থেকে ৭০ মণ তরমুজ উৎপাদন হয়। আর বাজারে দাম ভালো থাকলে বিক্রি হয় এক থেকে দেড় লাখ টাকায়।

ঢাকা থেকে আসা পাইকারি ক্রেতা মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘এখান থেকে পাইকারি ১৩০০-১৮০০ টাকা মণ হিসাবে কিনে ঢাকায় সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা দরে বিক্রি করি। এখানকার তরমুজ অনেক রসালো ও মিষ্টি হওয়ায় চাহিদাও বেশি।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রাহেলা পারভীন দৈনিক বাংলাকে বলেন, অসময়ের এই তরমুজে চাষিরা লাভবান হচ্ছেন। এ ফসল চাষে কৃষি বিভাগ থেকে চাষিদের পরামর্শ এবং সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।

জয়পুরহাট কৃষি বিপণন কর্মকর্তা রতন কুমার রায় দৈনিক বাংলাকে বলেন, জেলায় তরমুজকে কেন্দ্র করে মালচিং পেপার, বীজ, সার, কীটনাশক, বাঁধাইয়ের নেট, শ্রমিক মজুরি ও তরমুজ বিক্রি বাবদ গত বছর ১৫ কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে। এ বছর প্রায় ৩০ কোটি টাকা বাণিজ্য হবে বলে আশা করছি।

জাগ্রত জয়পুরহাট

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ