শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪ || ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রকাশিত: ১১:০৯, ২৩ মে ২০২৩

বাঁশজাত পণ্যের চাহিদা কমায় জয়পুরহাটে মাহালী সম্প্রদায়ের দুর্দিন

বাঁশজাত পণ্যের চাহিদা কমায় জয়পুরহাটে মাহালী সম্প্রদায়ের দুর্দিন

বাঁশের তৈরি জিনিসপত্রকেই এখনও জীবিকার প্রধান পেশা হিসেবে আঁকড়ে ধরে আছেন জয়পুরহাটের বিভিন্ন উপজেলার মাহালি পরিবারের কিছু মানুষ। বাঁশ দিয়ে তৈরি বিভিন্ন শিল্প বাপ-দাদার পেশা হওয়ার কারণে অনেকেই অন্য পেশায় যেতে পারছেন না। অন্য কোনো কাজ না জানার কারণে বাধ্য হয়েই বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র আঁকড়ে ধরে আজও জীবিকা নির্বাহ করার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।

এদিকে প্লাস্টিকের ভীরে বাঁশের তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা দিন দিন কমে গেছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও চাহিদা কমে যাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন কাটাচ্ছেন তারা। বর্তমানে এ ব্যবসায় মন্দাভাব থাকায় বাঁশ শিল্পের সঙ্গে জড়িত এই পরিবারগুলোর চলছে দুর্দিন।

জয়পুরহাটের বিভিন্ন গ্রাম গঞ্জে শত-শত মাহালী পরিবার একসময় বাঁশের  মাদুর, ঘর, ঝুড়ি, ফাঁদ, মাছ ধরার চাঁই, জুইতা, বাঁশের দোচালা, চারচালা ও আটচালা ঘর, বাঁশের বেড়া, ফুলদানি, প্রসাধনী বাক্স, ছবির ফ্রেম, আয়নার ফ্রেম, কলম কাল্লোং, বারেং, দোলনা,  কুলা, ঝুড়ি ,টোপা, মাথল, ডালি,চাঙ্গারী, খলইসহ আরও অনেক কিছু তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। বর্তমান সময়ে  বাঁশের দাম বেশি অন্যদিকে চাহিদা ও পণ্যের দাম কম থাকায় তারা পড়েছেন চরম বিপাকে।

joypurhat

সরেজমিনে জয়পুরহাট সদর খঞ্জনপুর ও পাঁচবিবির দমদমা মাহালি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আগে যে সময়টাতে মাহালী সম্প্রদায়ের গ্রামে সকাল থেকে শুরু করে রাত পযন্ত বাঁশের জিনিস তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করতেন তারা এখন বসে থেকে সময় পার করছেন। এমন পরিস্থিতিতেও দৃঢ় মনোবল নিয়ে বাঁশের পণ্য তৈরি ও তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন পাঁচবিবি উপজেলা দমদমা এলাকার দ্বীনেশ চন্দ্রের ৬ সদস্যের পরিবারটি।

দ্বীনেশ চন্দ্রের স্ত্রী পার্বতী রানী বলেন, আমরা পরিবারের ৬ জন লোক। আমার স্বামী রাস্তার পাশে দোকানে বিক্রি করে, আর আমরা ৫ জন মানুষ বাঁশের পণ্য তৈরি করে থাকি। বিভিন্ন এলাকা থেকে বাঁশ সংগ্রহ করার পর তা দা-ছুড়ি দিয়ে তা চিরানো হয়। পরে বাঁশগুলো পণ্যের মানভেদে চিকন আকারের শলা বা বাতি তৈরি করে রোদে শুকাতে হয়। এরপর বানানো হয়ে থাকে নানা দ্রব্যসামগ্রী। এ কাজটি তার বাপের বাড়িতেও করেছেন। তবে বর্তমানে পরিশ্রমের দাম ওঠে না। এজন্য খুব কষ্টে দিন কাটছে তাদের।

joypurhat

জয়পুরহাট খঞ্জনপুর মাহালি পরিবারের ধীরেন চন্দ্র বলেন, বর্তমানে বাঁশের তৈরি পণ্যের আর কদর নেই বললেই চলে। প্লাস্টিক ও অনন্য জিনিস পত্রের ব্যবহার বেশি হওয়ায় বাঁশের তৈরি জিনিস ঠিকমতো বিক্রি হয় না। এক সময় গ্রামীণ জনপদের মানুষ গৃহস্থালি, কৃষি ও ব্যবসা ক্ষেত্রে  বাঁশের তৈরি সরঞ্জাম ব্যবহার করত।

তিনি আরও বলেন, একটি বাঁশ ১৬০ থেকে ১৮০ টাকাতে কিনতে হয়। সেই বাঁশ দিয়ে ২ দিনে তৈরি করি দুটি চাঙ্গারি। সে দুটি চাঙ্গারি বিক্রি হয় ৩০০ টাকায়। এই টাকাতে কিভাবে চলি বলেন? প্লাস্টিক ও অনন্য জিনিস পত্র ব্যবহার বেশি হওয়ায় আমাদের বাঁশের তৈরী জিনিস বিক্রি ঠিকমতো হয় না। বাজারে সব জিনিসের দাম বেশি হওয়ায় চরম বিপদে পরেছি আমরা।

জয়পুরহাট বিসিক শিল্পনগরী উপ ব্যাবস্থাপক লিটন চন্দ্র ঘোষ বলেন, জয়পুরহাট এলাকায় প্রচুর মানুষ বাঁশের তৈরি এ শিল্পে যুক্ত আছেন। বর্তমানে এসব পণ্যের ব্যবহার কমে যাওয়ায় তারা খুব কষ্টে জীবন যাপন করছেন। সরকারিভাবে কোনো সাহায্য সহযোগিতা আসলে আমরা তা তাদের মধ্যে বন্টন করে থাকি । তারা চাইলে প্রশিক্ষণ ও ঋণ সহায়তা দেওয়া হবে।

জাগ্রত জয়পুরহাট

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ