• সোমবার ০২ অক্টোবর ২০২৩ ||

  • আশ্বিন ১৬ ১৪৩০

  • || ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

জাগ্রত জয়পুরহাট

আলুর চিপসের গ্রাম আক্কেলপুরের শ্রীকৃষ্টপুর

জাগ্রত জয়পুরহাট

প্রকাশিত: ৩০ মে ২০২৩  

আলুর চিপস তৈরি ও বিক্রি করেই স্বাবলম্বী গ্রামের প্রায় ৪০০ পরিবার। তাই গ্রামটি এখন আলুর চিপসের গ্রাম নামেই পরিচিতি পেয়েছে। জয়পুরহাটের আক্কেলপুর পৌরসভার শ্রীকৃষ্টপুর গ্রামের লোকজন এখন আর বলতে পারেন না, ঠিক কবে থেকে তারা এ পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন। তবে অনেকেই বলছেন, বাপ-দাদার আমল থেকেই এ কাজ করছেন তারা।

মূলত ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল আলুর চিপস তৈরির কাজ করেন তারা। এ সময় গ্রামের শিশু-কিশোর, যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা কারও যেন দম ফেলার ফুসরত নেই। এটি তাদের সারা বছরের আয়-রোজগারের একমাত্র অবলম্বন।

আলুর চিপস তৈরির মাধ্যমে এসব পরিবারের অভাব দূর হয়েছে। হাতে তৈরি করা আলুর চিপস বা আলুর পাঁপড়ের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব চিপস রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়।

সরেজমিন শ্রীকৃষ্টপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়িতে কেউ আলু সেদ্ধ করছেন, আবার কেউ সেদ্ধ আলু ঝুরি-ঝুরি করে গোলাকার কাটছেন। এরপর কাটা আলুগুলো তুলসীগঙ্গা নদীর পাড়, বাঁধ, রাস্তা, পুকুরপাড়ে রোদে শুকাচ্ছেন।

কয়েকজন গ্রামবাসী জানান, তাদের গ্রামে ৪০০ পরিবার বসবাস করে। এর মধ্যে ১০-১২টি পরিবার বাদে সবাই আলুর চিপস তৈরি করে। মৌসুমি এ ব্যবসার আয়ে সারা বছর সংসার চলে। প্রতিদিন দেড় থেকে ২ হাজার মণ আলু সেদ্ধ করা হয়। এই চিপস তৈরি করতে একটু পরিশ্রম হয়। তবে আজ পর্যন্ত কেউই লোকসান করেননি। যেসব ব্যবসায়ীর পুঁজি বেশি, তারা বেশি করে আলু কিনে চিপস তৈরি করে সংরক্ষণ করেন। তারাই বেশি লাভ করেন।

তারা আরও জানান, আলুর চিপস তৈরির জন্য এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে আলু কিনতে হয়। সরকার যদি ছোট ব্যবসায়ীদের স্বল্পসুদে ঋণ দিত, তাহলে তারা উপকৃত হতেন।

শ্রীকৃষ্টপুর গ্রামের দুলাল হোসেন বলেন, ক্যাডিনাল জাতের আলু চিপসের কাজে ব্যবহার করা হয়। অন্য জাতের আলু দিয়ে চিপস তৈরি হলেও তেমন স্বাদ মেলে না। বাজার থেকে প্রতি মণ ক্যাডিনাল ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায় কেনা হয়। সেই আলুগুলো সেদ্ধ করার পর গোলাকার করে কেটে রোদে শুকিয়ে চিপস তৈরি করা হয়। পাঁচ মণ ক্যাডিনাল আলুতে এক মণ চিপস হয়।

আরেক স্থানীয় বাসিন্দা জবানুর রহমান বলেন, বিভিন্ন এলাকা থেকে মহাজনরা এসে আলুর চিপস নিয়ে যান। আবার তারা নিজেরাও ঢাকা, রাজশাহী, সিলেট, রংপুর, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় আলুর চিপস সরবরাহ করেন।

এ ব্যবসা করে পরিবারের উন্নতি হয়েছে। ছেলেমেয়েরা স্কুলে লেখাপড়া করছে। আবার বাড়িঘরেরও উন্নতি হয়েছে। এমনই একজন মুকুল হোসেন। তিনি বলেন, ‘১২৮ মণ আলু কিনে চিপস তৈরি করেছি। এক মণ শুকনো চিপস তৈরি করতে ২ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। সময় লাগে দুই দিন। আর এক মণ চিপস বাজারে পাইকারি বিক্রি হয় সাড়ে ৩ হাজার টাকায়। দুই দিনে লাভ হয় দেড় হাজার টাকা। আর তেলে ভেজে হাতে বিক্রি করলে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা লাভ হয়।’

শ্রীকৃষ্টপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুশান্ত কুমার ঘোষ বলেন, ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত গ্রামজুড়ে আলুর চিপস তৈরির বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু হয়। পরিবারের সবাই কাজ করেন। এ কারণে দুই মাস বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার কমে যায়।

আক্কেলপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসেন বলেন, আলুর বহুবিধ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, অন্যদিকে আলুচাষিরাও উৎপাদিত আলুর ন্যায্যমূল্য পাবেন।

আক্কেলপুর পৌরসভার মেয়র শহিদুল আলম চৌধুরী বলেন, পৌরসভার শ্রীকৃষ্টপুর গ্রামটি আলু ভাজার গ্রাম বলে অনেক আগে থেকে পরিচিতি পেয়েছে। সরকার যদি এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত পরিবারগুলোকে সহজ শর্তে ঋণসহায়তা দেয়, তাহলে এই পরিবারগুলো গ্রামীণ অর্থনীতিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।

জাগ্রত জয়পুরহাট
জাগ্রত জয়পুরহাট