শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ || ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকাশিত: ০৭:১৭, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১

মহানবী (সা.)-এর পাঁচ অর্থনৈতিক কর্মসূচি

মহানবী (সা.)-এর পাঁচ অর্থনৈতিক কর্মসূচি

সম্পদ মানবজীবনের অন্যতম প্রধান অবলম্বন। পৃথিবীতে জীবনধারণের জন্য সম্পদের প্রয়োজন। আল্লাহ মানুষের ভেতর সম্পদের ভালোবাসা দান করেছেন, যেন সে জীবনের জন্য অপরিহার্য ও প্রয়োজনীয় সম্পদ উপার্জনে আগ্রহী হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘নারী, সন্তান, রাশিকৃত স্বর্ণরৌপ্য আর চিহ্নিত অশ্বরাজি, গবাদি পশু এবং ক্ষেতখামারের প্রতি আসক্তি মানুষের কাছে সুশোভিত করা হয়েছে।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৪)। তবে ইসলাম সম্পদের মোহে আচ্ছন্ন হতে নিষেধ করে, যা মানুষের ভেতর অপরাধপ্রবণতা তৈরি করে। ইসলাম মানুষকে আর্থিক জীবনে ভারসাম্য রক্ষা ও কল্যাণকামী হওয়ার শিক্ষা দেয়। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবন ও শিক্ষায় আছে সেই কল্যাণ-অর্থনীতির নির্দেশনা।

 

অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নবীজি (সা.)-এর সম্পৃক্ততা

জীবনের বিভিন্ন স্তরে রাসুলুল্লাহ (সা.) একাধিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হন। শৈশব ও কৈশোরের পশু চরানোর মাধ্যমে শুরু হয় তাঁর আর্থিক কর্মকাণ্ড এবং পরিণত বয়সে তিনি খাদিজা (রা.)-এর বাণিজ্য-প্রতিনিধি হয়ে সিরিয়ায় গমন করেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘এমন কোনো নবী প্রেরিত হননি, যিনি বকরি চরাননি।’ সাহাবিরা বললেন, আপনিও? তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি কয়েক কিরাতের বিনিময়ে মক্কাবাসীর পশু চরাতাম।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২২৬২)

মদিনায় হিজরতের পর মহানবী (সা.) মদিনার মুসলিমদের জন্য বাজার প্রতিষ্ঠা করেন এবং ভারসাম্যপূর্ণ এক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন, যা মদিনার মুহাজিরদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আনসার সাহাবিদের কৃষিনির্ভরতা কমাতে সাহায্য করে এবং স্থানীয় অর্থনীতিতে ইহুদিদের প্রভাব হ্রাস করে।

মহানবী (সা.)-এর পাঁচ অর্থনৈতিক কর্মসূচি

মদিনায় হিজরতের পর মহানবী (সা.) মদিনায় একটি ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনীতির ‘মডেল’ প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাফল্যের পেছনে ছিল আল্লাহর নির্দেশনা ও অনুগ্রহ এবং তাঁর দূরদর্শী কিছু সিদ্ধান্ত ও কর্মসূচি। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর এমন পাঁচটি কর্মসূচির বর্ণনা তুলে ধরা হলো—

মদিনায় কল্যাণ-অর্থনীতির প্রবর্তন : ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর রাসুলুল্লাহ (সা.) সেখানে কল্যাণ-অর্থনীতির প্রবর্তন করেন। যে অর্থনীতির ভিত্তি ছিল ঈমান ও সামাজিক সাম্য। ঈমানের কারণে মুসলিমরা তাদের অর্থনৈতিক জীবনে পরকালীন জবাবদিহি ও মুক্তিকে প্রাধান্য দিত। এবং সামাজিক সাম্যের কারণে মুসলিম সহমর্মিতার ভিত্তিতে সুখ-দুঃখ ভাগ করে নিত। মদিনার আনসার ও মুহাজির, ধনী ও দরিদ্র শ্রেণির মধ্যে ভ্রাতৃবন্ধন স্থাপন ছিল মহানবী (সা.)-এর একটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক উদ্যোগ। এই উদ্যোগের প্রতিবাদ্যই ছিল পার্থিব প্রয়োজন পূরণের ক্ষেত্রে অন্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সামগ্রিক সংকট দূর করা।

অর্থনীতির নৈতিক ভিত্তি দান : রাসুলুল্লাহ (সা.) ইসলামী অর্থনীতির একটি নৈতিক ভিত্তি দাঁড় করান, যেন মানুষ নীতিনৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে অর্থোপার্জনের পেছনে না ছোটে এবং ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে মানবকল্যাণকে অগ্রাধিকার দেয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত ব্যবসায়ীদের (হাশর হবে) নবী, সিদ্দিক ও শহীদের সঙ্গে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১২০৯)

সামাজিক দায়বদ্ধতা সৃষ্টি : যারা অর্থ উপার্জন করে বা অর্থের মালিক হয়,  ইসলামের দৃষ্টিতে সামাজিক দায়িত্ব ও দায়বদ্ধতা আছে। এই সামাজিক দায়িত্ব আদায়ে ইসলাম জাকাত, সদকা, কাফফারার মতো বিধানের প্রবর্তন করেছে। ধনীদের মানবিক কাজে অর্থ ব্যয়ের নির্দেশ প্রদান করে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আত্মীয়-স্বজনকে দেবে তার প্রাপ্য এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও এবং কিছুতেই অপব্যয় কোরো না।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৬)

জনস্বার্থকে প্রাধান্য দান : ইসলামী অর্থনীতিতে ব্যক্তিগত মুনাফার চেয়ে জনস্বার্থকে প্রাধান্য দেয়। ফলে জনস্বার্থকে ক্ষুণ্ন করে—এমন অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় কোরো এবং নিজ হাতে নিজেদের ধ্বংস ডেকে এনো না। তোমরা সৎকাজ কোরো, আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের ভালোবাসেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৯৫)

সম্পদ সংরক্ষণ : সম্পদ ধ্বংস হয় এমন সব কাজ থেকে আল্লাহ বিরত থাকার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘তোমাদের সম্পদ, যা আল্লাহ তোমাদের জন্য উপজীবিকা করেছেন, তা নির্বোধ মালিকদের হাতে অর্পণ কোরো না।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৫)। আল্লাহ সবাইকে কল্যাণের পথে পরিচালিত করুন। আমিন।

জাগ্রত জয়পুরহাট

সর্বশেষ

জনপ্রিয়