শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪ || ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রকাশিত: ১৭:০৯, ৪ অক্টোবর ২০২১

মুসলিম সভ্যতায় নগরজীবন

মুসলিম সভ্যতায় নগরজীবন

কর্ডোভা থেকে দামেস্ক ও বাগদাদ—ইসলামী সভ্যতার প্রাচীন শহরগুলোর সড়ক ও অলিগলিতে এখনো টিকে আছে হাজার বছরের আগেকার জীবনধারার বহু নিদর্শন। স্পেনের কর্ডোভা ও সেভিল শহরে এখনো প্রাচীন এলাকাগুলো চিহ্নিত করা আছে, যা ভ্রমণ করলে সহজেই বোঝা যায়, মুসলিম শাসনামলে স্পেনের জীবনধারা কেমন ছিল। মুসলিম শাসকরা এসব অঞ্চলের জীবনযাত্রার উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখেন। শাসকদের প্রচেষ্টায় মুসলিম নগরগুলো শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা লাভ করে।

মসজিদকেন্দ্রিক নগর : মুসলিম সভ্যতায় নগর পরিকল্পনা হতো মসজিদকেন্দ্রিক। কেননা মুসলমানের সামাজিক ও ধর্মীয় জীবনে মসজিদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগ থেকে ইসলামের ইতিহাসের সোনালি সময় পর্যন্ত মসজিদগুলো ছিল মুসলিমসমাজের প্রাণকেন্দ্র। মসজিদকে কেন্দ্র করেই পরিচালিত হলো মুসলমানের ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবন। ইসলামী জ্ঞানচর্চার মূলকেন্দ্রও ছিল মসজিদগুলো। ফলে মসজিদের পাশেই থাকত বাজার, যেখানে খাবার, মসলা, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য, মোমবাতি ও আতর বিক্রি হতো। এ ছাড়া এসব ব্যাবসায়িক এলাকায় বইয়ের দোকান, পাঠাগার ও চিকিৎসা কেন্দ্রও থাকত।

হাম্মামের আভিজাত্য : হাম্মাম বা গোসলখানা ছিল প্রতিটি শহরের সাধারণ বৈশিষ্ট্য। অভিজাত হাম্মামখানার ভবনগুলোতে থাকত টালিযুক্ত দেয়াল, ঝরনা ও মনোরম পুল বা জলাধার। সেখানে ব্যবস্থা থাকত ‘বাষ্পায়িত কক্ষ’, উষ্ণ ও ঠাণ্ডা পানির ব্যবস্থা। শহরের মুসলিমরা নিয়মিত হাম্মামে যাতায়াত করত এবং নারী ও পুরুষ দিনের ভিন্ন ভিন্ন সময় গোসল করত।

কোলাহলমুক্ত আবাসিক এলাকা : প্রাচীন মুসলিম শহরগুলোর আবাসিক এলাকাগুলো হতো শহরের কোলাহল থেকে দূরে নীরব এলাকায়। প্রধান সড়কগুলো থেকে ছোট ছোট গলি ধরে এসব এলাকায় প্রবেশ করতে হতো। প্রতিটি বাড়ির উঠানে থাকত বাগান ও চত্বর। সীমানা প্রাচীরগুলো এতটুকু উঁচু হতো যে কেউ উটের পিঠে আরোহণ করেও ভেতরে দেখতে পারত না। বর্জ্যব্যবস্থা, পাকা সড়ক ও ঢাকা-নর্দমা ইত্যাদি নাগরিক সুবিধার বিচারে তৎকালীন ইউরোপীয় শহরগুলোর তুলনায় মুসলিম শহরগুলো অনেক এগিয়ে ছিল। খ্রিস্টীয় দশম শতাব্দীতে কর্ডোভা ছিল বিশ্বের সর্বাধুনিক শহরগুলোর অন্যতম। মুসলিম শাসকদের স্থাপিত সড়ক-বাতিগুলো এখনো সেখানে টিকে আছে। তারও আগে কায়রোতে বহুতল ভবন ও ছাদ বাগানের চর্চা দেখা যায়।

বাগান ও ঝরনা : মুসলিম সভ্যতায় গড়ে ওঠা বাগানগুলোকে অনেকে স্বর্গীয় উদ্যান হিসেবেও অবহিত করত। খ্রিষ্টীয় অষ্টম শতকে স্পেন থেকে ভারতবর্ষ পুরো মুসলিম বিশ্বে মননশীলতা, বাগান প্রতিষ্ঠা ও বনায়নের অনুপ্রেরণা ছড়িয়ে পড়ে। প্রাচীন মুসলিম শহর ও শহর অঞ্চলের কৃষি ও বাগানের নকশায় এখনো মুসলিম কৃষি ও বনায়ন পদ্ধতির প্রভাব দেখা যায়। খ্রিস্টীয় নবম শতকে বাগানচর্চায় মুসলিম শাসকরা জ্যামিতিক নকশা, অগভীর খাল ও ঝরনার সংস্কৃতি যুক্ত করেন। মুসলিম বিশ্বের আবাসিক ভবন ও মসজিদগুলোয় ঝরনা ও বাগান স্থাপনের ধারণা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। যদিও গ্রীষ্মপ্রধান দেশগুলোতে পানির সংকট ছিল।

ইসলামী সভ্যতার নগরজীবন ও নগরায়ণের অনেক কিছু বহু বছর পরে গড়ে ওঠা ইউরোপীয় আধুনিক ও পরিকল্পিত শহরকে প্রভাবিত করেছে।

মোটকথা, প্রাচীন মুসলিম শহরগুলো আধুনিক নগর পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনাকে প্রভাবিত করেছে নানাভাবে। তাকে পথ দেখিয়েছে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে।

মুসলিম ইনভেনশন ওয়ান থাউজেন্ট ওয়ান অবলম্বনে

জাগ্রত জয়পুরহাট

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ