শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪ || ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রকাশিত: ১৩:২৬, ২১ নভেম্বর ২০২১

যে কারণে লোক দেখানো আমল নিন্দনীয়

যে কারণে লোক দেখানো আমল নিন্দনীয়

মানবসৃষ্টির অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য মহান আল্লাহর ইবাদত ও বন্দেগি করা। ইবাদত-বন্দেগির উদ্দেশ্য মানবজাতির সৃষ্টি হলেও ইসলাম মানুষের জাগতিক জীবনকে অস্বীকার করে না; বরং ইসলামের ভাষ্য হল কোনো ব্যক্তি আল্লাহর নির্দেশনা অনুসরণ করলে তার পার্থিব জীবনের কাজগুলোও ইবাদতে পরিণত হয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি জিন ও মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছি শুধু আমার ইবাদতের জন্য।’ (সুরা জারিয়াত, আয়াত : ৫৬)

আখিরাত অস্বীকারে কঠোর নিন্দা
এ জন্য পবিত্র কোরআনে একদিকে সেসব মানুষের নিন্দা করা হয়েছে, যারা পরকালকে ভুলে গেছে— ‘যারা তাদের দ্বীনকে ক্রীড়া-কৌতুক রূপে গ্রহণ করেছিল এবং জাগতিক জীবন তাদের প্রতারিত করেছিল, আমি তাদের ভুলে যাব, যেমন তারা তাদের এই দিনের সাক্ষাতকে ভুলে গিয়েছিল এবং যেভাবে তারা আমার নিদর্শনগুলো অস্বীকার করেছিল।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ৫১)

অন্যদিকে তাদেরও নিন্দা করা হয়েছে, যারা স্বাভাবিক জীবন অস্বীকার করে। তাদের ব্যাপারে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা বলে, এ কেমন রাসুল! যে আহার করে এবং হাটে-বাজারে চলাফেরা করে; তার কাছে কোনো ফেরেশতা কেন অবতীর্ণ করা হল না, যে তার সঙ্গে থাকত সতর্ককারীরূপে?’ (সুরা ফোরকান, আয়াত : ৭)

 

ইবাদত পালনকারীদের তিন অবস্থা
আল্লাহর নির্দেশ পালন ও ইবাদতের ক্ষেত্রে মুমিন বান্দার তিন অবস্থা। নিম্নে এই তিন প্রকার ব্যক্তি সম্পর্কে আলোচনা করা হল।

মধ্যপন্থীরাই উত্তম
যারা কোনো কমানো ও বাড়ানো ছাড়াই যথাযথভাবে ইবাদত আদায় করে। এটাই মধ্যপন্থা ও ভারসাম্যপূর্ণ উপায়। কেননা সে কমায়নি যে নিন্দিত হবে এবং বাড়ায়ওনি যে অপারগ হয়ে যাবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা যথারীতি আমল করে নৈকট্য লাভ করো। তোমরা সকালে, বিকেলে এবং রাতের শেষভাগে আল্লাহর ইবাদত কোরো। মধ্যপন্থা অবলম্বন কোরো। মধ্যপন্থা তোমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৪৬৩)

আত্মপ্রবঞ্চনা থেকেই শিথিলতা
যারা ইবাদত পালনে শিথিলতা করে তারা মূলত ক্ষমা ও অনুগ্রহ লাভের প্রবঞ্চনা থেকেই তা করে থাকে। তাদের প্রবৃত্তি তাদের প্রতারিত করে এবং অজ্ঞতার কারণে তারা ধোঁকায় হাবুডুবু খায়। ধারণাই তাদের পুঁজি এবং মিথ্যা আশাই তাদের সম্বল। ঠিক যেমন কোনো ব্যক্তি কোনো প্রকার সম্বল ছাড়া দীর্ঘ পথ সফর করার উদ্দেশ্যে বের হল এই ধারণা থেকে যে পথে সে সম্বল সংগ্রহ করার সুযোগ পাবে। কিন্তু তার ধারণা তাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিল। কেন সে সতর্কতা অবলম্বন করল না। অথচ আল্লাহ সতর্ককারীর প্রশংসা করেছেন।

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ইন্তেকালের পর আমি আলী ইবনে আবি তালিব (রা.)-এর চিঠির আর কোনো কিছু দ্বারা এতটা উপকৃত হতে পারিনি এবং উপদেশ গ্রহণ করতে পারিনি। তিনি আমাকে লেখেন—‘মানুষ সে জিনিস আঁকড়ে ধরে আনন্দিত হয়, যা কখনো তার থেকে ছুটে যাবে না এবং এমন জিনিস ছুটে গেলে কষ্ট পায়, যা কখনো সে অর্জন করতে পারবে না।

সুতরাং পৃথিবীর কোনো অর্জনের কারণে তুমি আনন্দিত হয়ো না এবং তা থেকে কোনো কিছু হারিয়ে গেলে ব্যথিত হয়ো না। তাদের মতো হয়ো না, যারা কোনো আমল না করেই পরকালে মুক্তির আশা করে এবং দীর্ঘ আশার কারণে তওবা করতে বিলম্ব করে। তোমার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।’ (তারিখে দামেস্ক : ৪২/৫০৩)

লোক দেখানো বেশি আমল নিষিদ্ধ
যারা নির্দেশিত ইবাদত পালনে বৃদ্ধি করে তারা হয়তো এমনটি করে লোক দেখানোর জন্য। যেন মানুষ তাদের সৎ ও আল্লাহভীরু মনে করে। অথচ তারা মোটেই এমন নয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি তাঁর প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাতের আশা করে সে যেন নেক কাজ করে এবং তার প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকে শরিক না করে।’ (সুরা কাহফ, আয়াত : ১১০)। উল্লিখিত আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরবিদরা বলেন, ‘সে যেন লোক দেখানোর জন্য আমল না করে।’

এমন লোকদের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ঘোষণা হল, ‘যা তোমাকে দেওয়া হয়নি তা দেওয়া হয়েছে বলা এমন প্রতারকের কাজ যে প্রতারণার জন্য দুই প্রস্থ মিথ্যার পোশাক পরিধান করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫২১৯)।

সাওয়াবের আশায় বেশি আমল
কেউ যদি সাওয়াবের আশায় বেশি আমল করে, তবে তা নিন্দনীয় নয়। কেননা পরিশুদ্ধ হৃদয়ে বেশি আমলের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশা করে। তবে এ ক্ষেত্রেও ভারসাম্য রক্ষা করা আবশ্যক। যেমনটি নবী করিম (সা.) বলেন, ‘হে লোকেরা, তোমরা তোমাদের সাধ্যানুযায়ী আমল করতে থাকো। কেননা আল্লাহ ক্লান্ত হন না; বরং তোমরাই ক্লান্ত হয়ে পড়বে। আর আল্লাহর কাছে ওই আমলই সবচেয়ে প্রিয়, যা সর্বদা করা হয়, তা কম হলেও।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৮৬১)

জাগ্রত জয়পুরহাট

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ