বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪ || ১৩ চৈত্র ১৪৩০

প্রকাশিত: ১২:০৫, ১৪ নভেম্বর ২০২২

যে নারীর বুদ্ধিমত্তার প্রশংসা করেছেন নবীজি

যে নারীর বুদ্ধিমত্তার প্রশংসা করেছেন নবীজি

আসমা বিনতে ইয়াজিদ (রা.) ছিলেন বিখ্যাত সাহাবি মুয়াজ ইবনে জাবালের ফুফাত বোন। তবে ইবনে হাজার আসকালানি তাঁকে মুয়াজ (রা.)-এর চাচাতো বোন বলেছেন। (আল-ইসাবা: ৪/২২৫)

বহু গুণের অধিকারি ছিলেন আসমা (রা.)। বিশুদ্ধ ভাষা, বাকপটুতা, ধর্মভীরুতা, হাদিস বর্ণনা, অতিথি পরায়নতা, নেতৃত্ব, সাহসী যোদ্ধা—এসব তাঁর বৈশিষ্ট্যের উল্লেখযোগ্য দিক ছিল। এছাড়াও বুদ্ধিমত্তার জন্য তিনি ব্যাপক প্রসিদ্ধ ছিলেন। (আল-ইসতিয়াব: ৩/৭২৬; মুসনাদে আহমদ: ৬/৪৫৮)

মদিনায় ইসলাম গ্রহণে অগ্রগামী মহিলা ছিলেন তিনি। মদিনার নারীরা তাঁকে প্রতিনিধি হিসেবে মহানবী (স.)-এর কাছে পাঠালে তিনি নবী (স.)-এর কাছে এমন সুন্দর ও যুক্তিপূর্ণ ভাষায় নিজেদের দাবি উত্থাপন করেন যে রাসুলুল্লাহ (স.) তাঁর হৃদয়গ্রাহী বর্ণনা শুনে সাহাবিদের জিজ্ঞাসা করেন, আসমা বিনতে ইয়াজিদের আগে তোমরা কি কোনো নারীকে দীনের ব্যাপারে এর চেয়ে উত্তম প্রশ্ন করতে শুনেছ? তারা বললেন, না। (মারিফাতুস সাহাবা: ৭৫১২)

আসমা (রা.) মদিনায় নিযুক্ত কোরআনের শিক্ষক মুসআব ইবনে উমায়ের (রা.)-এর হাতে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। ইবনে সাআদের বর্ণনামতে, তিনি ছিলেন নবীজি (স.)-এর কাছে বাইআত গ্রহণকারী তিন নারীর মধ্যে একজন। তিনি নিজেও বলতেন, ‘নারীদের মধ্যে আমিই নবী (স.)-এর হাতে বাইআত গ্রহণ করি।’ একটি বর্ণনামতে, তিনি আকাবার শেষ বাইআতে নবীজির (স.) তার হাতে স্পর্শ করে বাইয়াত করতে চাইলে মহানবী (স.) বলেন, ‘আমি মহিলাদের সঙ্গে করমর্দন করি না।’ (মুসনাদে আহমদ: ৬/৪৫৩, ৪৫৪, ৪৫৮, ৪৬ ০, ৪৬১)

হাদিসের ব্যাখ্যাকাররা বলেন, ইসলামের প্রাথমিক যুগে বিবাহবিচ্ছেদের পর নারীদের ‘ইদ্দত’ পালন করার রীতি ছিল না। অতঃপর আসমা বিনতে ইয়াজিদ (রা.) তালাকপ্রাপ্তা হলে আল্লাহ তাআলা কোরআনের আয়াত অবতীর্ণ করেন, ‘তালাকপ্রাপ্তা নারী তিন ঋতুস্রাবকাল নিজেদের বিরত রাখবে’ (সুরা বাকারা: ২২৮)। আসমা বিনতে ইয়াজিদ (রা.) ছিলেন ইসলামের ইতিহাসে প্রথম ইদ্দত পালনকারী নারী।

বহুমুখী প্রতিভা
১. হাদিস বর্ণনা: আসমা বিনতে ইয়াজিদ (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে ৮১টি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তাঁর থেকে প্রসিদ্ধ তাবেয়ি ও ইমাম মুসলিম (রহ.) ছাড়া সিহাহ সিত্তার (হাদিসের বিশুদ্ধতম ছয় গ্রন্থ) সব ইমাম হাদিস বর্ণনা করেছেন।

২. নারীদের মুখপাত্র: আল্লামা ইবনে আসির (রা.) তাঁর ‘উসগুল গাবাহ’ গ্রন্থে এই নারী সাহাবিকে ‘খাতিবাতুন নিসা’ বা নারীদের বক্তা আখ্যা দিয়েছেন। তাঁর জীবনী রচয়িতা বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনার পাশাপাশি নারীদের উপদেশ দিতেন, তাদেরকে দীনি বিধি-বিধান শেখাতেন।

৩. সাহসী নারী: আসমা বিনতে ইয়াজিদ (রা.) ছিলেন অত্যন্ত সাহসী নারী। তিনি নবীজি (স.)-এর সঙ্গে খন্দক ও খায়বারের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং হুদাইবিয়ার সন্ধির সময় সফরসঙ্গী হন। উসমান (রা.)-এর হত্যার সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে অন্যান্য সাহাবির সঙ্গে তিনিও জিহাদের বাইআত গ্রহণ করেন। মহানবী (স.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি মদিনা থেকে শামে হিজরত করেন। সেখানে ইয়ারমুক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মূলত তিনি অন্য নারীদের মতো যুদ্ধাহতদের সেবাযত্ন করেন। ইয়ারমুক যুদ্ধের সময় তাঁবুর খুঁটি দিয়ে আঘাত করে তিনি ৯ জন রোমান সেনা হত্যা করেন।

৪. সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ: আসমা বিনতে ইয়াজিদ ছিলেন সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ। নারীরা সাজসজ্জা বিষয়ে তাঁর পরামর্শ ও সহযোগিতা গ্রহণ করত। আয়েশা (রা.) যেদিন স্ত্রী হয়ে নবীজি (স.)-এর ঘরে আসেন, সেদিন তিনি তাঁকে সাজিয়ে দেন।

ইসলামের জন্য আত্মত্যাগ
উহুদ যুদ্ধের সময় আসমা বিনতে ইয়াজিদ (রা.)-এর পরিবারের একাধিক সদস্য শহীদ হন। তাঁর ভাই আম্মারা বিন ইয়াজিদ নবী (সা.)-কে শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করার সময় শহীদ হন। এই যুদ্ধে তাঁর পিতা ইয়াজিদ বিন সাকান, চাচা জিয়াদ বিন সাকান এবং আরেক ভাই আমির বিন জিয়াদ (রা.) শাহাদাত বরণ করেন। পরিবারের এতজন শহীদ হওয়ার পরও তিনি নবীজি (স.)-কে হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকেন। অতঃপর যখন তাঁকে খুঁজে পান তিনি বলেন, ‘আপনাকে দেখার পর সব দুঃখই হীন।’

ইন্তেকাল
আসমা বিনতে ইয়াজিদ (রা.) ৬৯ হিজরিতে খলিফা আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ানের শাসনামলে ইন্তেকাল করেন। তাঁকে দামেস্কের বাবুস সগিরে দাফন করা হয়। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সাহাবিদের জীবনী থেকে শিক্ষা নেওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

জাগ্রত জয়পুরহাট

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ