শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ || ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ৬ জানুয়ারি ২০২৩

নবীজির দৃষ্টিতে সবচেয়ে বুদ্ধিমান মানুষ

নবীজির দৃষ্টিতে সবচেয়ে বুদ্ধিমান মানুষ

যাদের বুদ্ধিমত্তা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তাদেরকে আমরা ‘বুদ্ধিমান’ বলি। কিন্তু তারা কারা? পৃথিবীর ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী মহানবী হজরত মুহাম্মদ (স.) বিষয়টি মুমিনদের পরিষ্কার করে দিয়েছেন। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-এর সঙ্গে ছিলাম। এ অবস্থায় এক আনসারি নবীজি (স.)-এর কাছে এসে তাঁকে সালাম দিল। অতঃপর বলল, হে আল্লাহর রাসুল, মুমিনদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম কে?

তিনি বলেন, স্বভাব-চরিত্রে তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি বেশি উত্তম। সে পুনরায় জিজ্ঞেস করল, মুমিনদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বুদ্ধিমান কে? তিনি বলেন, তাদের মধ্যে যারা মৃত্যুকে বেশি স্মরণ করে এবং মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের জন্য উত্তমরূপে প্রস্তুতি গ্রহণ করে, তারাই সর্বাধিক বুদ্ধিমান।’ (ইবনে মাজাহ: ৪২৫৯)

বোঝা গেল- মৃত্যুকে বেশি স্মরণ ও পরকালের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণই সর্বাধিক বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক। কেননা মৃত্যুর স্মরণই মানুষকে পরকালের প্রস্তুতি গ্রহণের দিকে মনোযোগী করে। উল্লেখিত হাদিস সে কথারই প্রমাণ। সুতরাং পার্থিব জীবনটাকেই জীবন ও মৃত্যুর মাধ্যমে চূড়ান্ত সমাপ্তির মতো সরল চিন্তা করা বুদ্ধিমানদের কাজ হবে না। আল্লাহ বলেন, ‘প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে এবং কেয়ামতের দিন তোমরা পূর্ণ বদলাপ্রাপ্ত হবে। অতঃপর যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে ও জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সে সফলকাম হবে। আর পার্থিব জীবন প্রতারণার বস্তু ছাড়া কিছুই নয়।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৮৫)

যারা পরকালের বিষয়ে গাফেল কিংবা অসচেতন তারা নবীজির ভাষ্য অনুযায়ী নিতান্তই বোকা। তাদের সতর্ক করে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘তোমরা কীভাবে আল্লাহকে অস্বীকার করো? অথচ তোমরা ছিলে প্রাণহীন, তিনি তোমাদের জীবন দান করেছেন। আবার তোমাদের মৃত্যু দেবেন ও পুনরায় জীবন দেবেন এবং চূড়ান্ত পরিণতিতে তোমরা তাঁর দিকেই ফিরে যাবে।’ (সুরা বাকারা: ২৮) 

প্রকৃতপক্ষে মৃত্যু হলো অন্তহীন জীবনের শুরু। এর মাধ্যমে শুধু শারীরিক অস্তিত্বের বিনাশ ঘটে। কোরআনে এই অবস্থাকে চিহ্নিত করা হয়েছে ‘মউত’ হিসেবে। এই মউতের পর কাউকেই আমল করতে দেওয়া হবে না, দুদিনের জন্য আবার দুনিয়াতে পাঠানো হবে না। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আমার প্রতিপালক, যদি আপনি আমাকে আরো কিছু দিনের জন্য সময় দিতেন, তাহলে আমি সদকা করে আসতাম ও সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। অথচ নির্ধারিত সময়কাল যখন এসে যাবে, তখন আল্লাহ কাউকে আর অবকাশ দেবেন না।’ (সুরা মুনাফিকুন: ১০-১১)

আসলে রঙিন দুনিয়ার নেশায় মানুষ মৃত্যুকে ভুলে যায়। পরকালীন জীবনের চিন্তা তার মধ্যে কাজ করে না। আল্লাহ বলছেন, ‘বেশি থেকে বেশি (দুনিয়া) কামানোর লোভ তোমাদের গাফেল করে রাখে।’ (সুরা তাকাসুর: ১)

এই ফাঁকে শয়তান প্ররোচনা দেয়। এ কারণেই রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তোমরা বেশি করে স্বাদ বিনষ্টকারী বস্তুটির কথা তথা মৃত্যুকে স্মরণ করো’ (তিরমিজি: ২৩০৭)। আর আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই আল্লাহকে ভয় করে। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, পরম ক্ষমাশীল। (সুরা ফাতির: ২৮)

অতএব বুদ্ধিমান মুমিনরা সুখে-দুখে সবসময় মৃত্যুর কথা স্মরণ করবেন—এটি স্বাভাবিক। আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, সংকটময় মুহূর্তে বান্দা যখন মৃত্যুর কথা স্মরণ করে, মৃত্যুর এ স্মরণ তার সংকটকে দূর করে দেয় আবার সুখের সময় মৃত্যুকে স্মরণ করে তখন এ স্মরণ তার সুখ স্বাচ্ছন্দ্যকে দূর করে দেয়।’ অর্থাৎ পরকালের দিকে মনোনিবেশ করতে সাহায্য করে। প্রিয়নবী (স.)-এর হাদিসে প্রমাণিত মৃত্যুর স্মরণ মানুষকে আখেরাতের জন্য প্রস্তুতি নিতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে অন্তহীন জীবনের প্রস্তুতি হিসেবে এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য যতবেশি প্রয়োজন ততবেশি নেক আমল করার তাওফিক দান করুন। সবাইকে নবীজির হাদিস অনুযায়ী বুদ্ধিমান মুমিন হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

জাগ্রত জয়পুরহাট

সর্বশেষ

জনপ্রিয়