শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪ || ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রকাশিত: ১২:০৬, ১ মার্চ ২০২৩

পরকালে যে বিষয়গুলো নিয়ে মানুষ আফসোস করবে

পরকালে যে বিষয়গুলো নিয়ে মানুষ আফসোস করবে

পরকালে মানুষ দুনিয়ার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আফসোস করবে। এজন্য কেয়ামতের একটি নাম ইয়াওমুল হাসরা বা আফসোসের দিন। সেদিন জাহান্নামিরা এই কারণে পরিতাপ করবে যে দুনিয়ায় তারা ঈমান আনলে ও সৎকর্ম করলে জান্নাত লাভ করতে পারত। একইসঙ্গে জান্নাতিরাও বিশেষ এক প্রকার আফসোস করবে। নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

পরকালে মুমিনদের আফসোস
নেতৃত্বের কারণে: যারা ক্ষমতা ও নেতৃত্বের জন্য লোভ করে এবং ক্ষমতা পাওয়ার পর যথাযথ দায়িত্ব পালন না করে। তারা কেয়ামতের দিন আফসোস করবে। আবু হুরায়রা (রা.) নবী (স.) থেকে বর্ণনা করেন, ‘অচিরেই তোমরা শাসক হওয়ার লোভ করবে। অথচ তার শেষ ফল লজ্জাকর ও অনুতাপের হয়। কেননা তা অতি উত্তম দুগ্ধদায়িনী (অর্থাৎ যখন তা লাভ হয়, তখন তো খুবই উত্তম মনে হয়) আর অতি নিকৃষ্ট ছাড়ানদাত্রী  (অর্থাৎ যখন তা চলে যায়, তখন খুবই বেদনাদায়ক হয়)। (নাসায়ি: ৪২১১)

লোক দেখানো আমলের কারণে: কেয়ামতের দিন কিছু মানুষ এমন নেক আমলের ওপর আফসোস করবে যে আমলগুলো ছিল লোক দেখানো বা সুনাম খ্যাতির উদ্দেশ্যে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘এবং তাদের জন্য আল্লাহর কাছ থেকে এমন কিছু প্রকাশিত হবে, যা তারা ধারণাও করেনি।’ (সুরা জুমার: ৪৭)

জিকিরবিহীন মজলিসের কারণে: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (স.) বলেন, যেসব লোক কোনো বৈঠকে বসেছে অথচ তারা আল্লাহ তাআলার জিকির করেনি এবং তাদের নবীর প্রতি দরুদও পড়েনি, তারা বিপদগ্রস্ত ও আশাহত হবে। আল্লাহ তাআলা চাইলে তাদের শাস্তিও দিতে পারেন কিংবা মাফও করতে পারেন। (তিরমিজি: ৩৩৮০)

সুরা বাকারা না পড়ার কারণে: সুরা বাকারা পড়ার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও না পড়া আফসোসের কারণ হবে। কেয়ামতের দিন যখন এই সুরার বরকত ও বিনিময় দেখবে তখন সে আফসোস করবে, কেন এই সুরা পড়েনি। আবু উসামা আল বাহিলি (রা.) বলেন, আমি রাসুল (স.)-কে বলতে শুনেছি, তোমরা কোরআন পাঠ করো। কারণ কিয়ামতের দিন তা পাঠকারীর জন্য শাফায়াতকারী হিসেবে উপস্থিত হবে। তোমরা দুটি উজ্জ্বল সুরা অর্থাৎ সুরা বাকারা এবং সুরা আলে ইমরান পড়ো। কিয়ামতের দিন এ দুটি সুরা এমনভাবে আসবে যেন তা দুই খণ্ড মেঘ অথবা দুটি ছায়াদানকারী অথবা দুই ঝাঁক উড়ন্ত পাখি, যা তার পাঠকারীর পক্ষ হয়ে কথা বলবে। আর তোমরা সুরা বাকারা পাঠ করো। এ সুরাটিকে গ্রহণ করা বরকতের কাজ এবং পরিত্যাগ করা পরিতাপের কারণ। (মুসলিম: ১৭৫৯)

অনর্থক কথা-কাজের কারণে: মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) হতে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘জান্নাতিদের জান্নাতে যাওয়ার পর দুনিয়ার কোনো জিনিসের জন্য আফসোস থাকবে না। শুধু ওই সময়ের জন্য আফসোস হবে, যা আল্লাহর স্মরণ ব্যতীত অনর্থক কথা বা কাজে অতিবাহিত হয়েছে।’ (বায়হাকি: ৫০৯)

 পরকালে কাফেরদের আফসোস
জান্নাতিদের সুখ-শান্তি দেখে: যখন নেককার লোকদেরকে জান্নাতে সুখ ও শান্তিময় জীবন যাপন করতে দেখবে এবং নিজেদেরকে জাহান্নামের অধিবাসী হিসাবে দেখতে পাবে তখন আফসোস ও পরিতাপ করে বলবে, হায়! আমরাও যদি এ জীবনের জন্য সৎকর্ম সম্পাদন করতাম, তাহলে আজ আমাদের এই দুর্দশার শিকার হতে হতো না। পবিত্র কুরআন শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং সেদিন জাহান্নামকে আনা হবে, সেদিন মানুষ স্মরণ করবে, কিন্তু এই স্মরণ তার কী কাজে আসবে? সে বলবে, হায়, এ জীবনের জন্যে আমি যদি কিছু অগ্রে প্রেরণ করতাম!’ (সুরা ফাজর: ২৩-২৪)

অসৎ বন্ধুত্বের কারণে: দুনিয়াতে যারা অসৎ লোককে বন্ধু বানিয়েছে এবং তাদের কারণে সেসব মানুষ বিপথগামী হয়েছে, সেদিন এর কারণে তারা আফসোস করবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অপরাধী সেদিন স্বীয় হস্তদ্বয় দংশন করতে করতে বলবে, ‘হায় আফসোস! আমি যদি রাসুলের সাথে পথ অবলম্বন করতাম। হায়, দুর্ভোগ আমার! আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম! আমাকে তো সে বিভ্রান্ত করেছিল, আমার কাছে উপদেশ পৌঁছার পর। আর শয়তান মানুষের জন্য মহাপ্রতারক।’(সুরা ফুরকান: ২৭-২৯)

পথভ্রষ্ট নেতাদের অনুসরণের কারণে: দুনিয়াতে যারা ভ্রান্ত নেতাদের অনুসরণ করেছে এবং তাদের কথামতো নিজেদের জীবন-যাপন পরিচালনা করেছে, সেদিন তারা এর জন্য আফসোস করবে। কারণ তারা তখন বিশ্বাস করবে যে তারা দুনিয়াতে ভ্রান্ত পথে ছিল। আল্লাহ বলেন, ‘তারা আরো বলবে, ‘হে আমাদের রব, আমরা আমাদের নেতা ও বড় লোকদের আনুগত্য করেছিলাম এবং তারা আমাদের পথভ্রষ্ট করেছিল। হে আমাদের রব, আপনি তাদের দ্বিগুণ শাস্তি দিন এবং তাদের দিন মহা অভিসম্পাত।’ (সুরা আহজাব: ৬৭-৬৮)

পরকালীন শাস্তি সম্পর্কে গাফেল থাকার কারণে: কেয়ামতের ভয়াবহ দৃশ্য দেখে কাফেররা আফসোস করবে, আর মাটি হওয়ার ইচ্ছা করবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি তোমাদের আসন্ন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করলাম; যেদিন মানুষ তার কৃতকর্ম দেখতে পাবে এবং কাফের বলবে, হায়! আমি যদি  মাটি হতাম! (সুরা নাবা: ৪০)

মৃত্যু হবে না জেনে সবচেয়ে বেশি আফসোস: জাহান্নামিরা সবচেয়ে বেশি আফসোস করবে, যখন দেখবে মৃত্যুকে জবাই করে দেওয়া হচ্ছে, অর্থাৎ জীবনে আর কোনো দিন তাদের মৃত্যু হবে না। এ কথা যখন তারা বুঝতে পারবে তখন তাদের আফসোসের শেষ থাকবে না। ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, জান্নাতিরা জান্নাতে যাওয়ার পর আর জাহান্নামিরা জাহান্নামে যাওয়ার পর মৃত্যুকে উপস্থিত করা হবে, এমনকি জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যস্থানে রাখা হবে। এরপর তাকে জবাই করে দেওয়া হবে, অতঃপর একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দেবে যে হে জান্নাতিরা, (আর) মৃত্যু নেই। হে জাহান্নামিরা, (আর) মৃত্যু নেই। তখন জান্নাতবাসীদের আনন্দের ওপর আনন্দ হবে। আর জাহান্নামিদের দুঃখের ওপর দুঃখ হবে। (বুখারি: ৬৫৪৮)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে মৃত্যুর আগে আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভে বিশুদ্ধ ঈমানের সঙ্গে বেশি বেশি নেক আমলের তাওফিক দান করুন। কোরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

জাগ্রত জয়পুরহাট

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ