শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ || ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ২৩ মে ২০২৩

হাঁস পালন করে স্বাবলম্বী সীমান্তবাসী

হাঁস পালন করে স্বাবলম্বী সীমান্তবাসী

একটা সময় অভাব-অনটনের সংসারে খেয়ে না খেয়ে দিন চলত সীমান্ত ঘেঁষা গ্রামের বেশিরভাগ মানুষদের। তবে গত কয়েক বছর হাঁস পালনে তারা পেয়েছেন সচ্ছলতা। কেউ কেউ গড়েছেন একাধিক খামার। এসব খামারে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে অনেক বেকারের।

তবে সরকারি চিকিৎসক না পাওয়ার অভিযোগ খামারিদের। এদিকে জেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগ বলছে, ওইসব অঞ্চলে চিকিৎসা সেবা জোরদার করা হবে।

সরেজমিনে শেরপুর জেলার সীমান্তের শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলা ঘুরে জানা যায়, এসব এলাকায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় দেড়শ হাঁসের খামার রয়েছে। এসব খামারে তিন লাখের বেশি হাঁস পালন করা হচ্ছে।

duck

হাঁস পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন শেরপুরের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর বাসিন্দারা। নিজেরা যেমন স্বাবলম্বী হচ্ছেন, তেমনই আশপাশের মানুষদের দিচ্ছেন পরামর্শ। অনেকের হয়েছে কর্মসংস্থানও। তাই দিন দিন এলাকাবাসীর হাঁস পালনে আগ্রহ বাড়ছে।

শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তবর্তী বাবলাকোনা ও হারিয়াকোনা গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, ভারত থেকে নেমে আসা ঢেউফা নদীতে হাঁসের মিছিল। আর নদীর আশপাশের বাড়িতে খামার। খামারে দুই ধরনের হাঁস পালন করা হয়। ডিম দেয় এমন একটি জাত, আরেকটি মাংসের জন্য। এসব ডিম ও হাঁস রাজধানীতে বিক্রি করা হয়। সেখানকার পাইকাররা এ গ্রামে গাড়ি নিয়ে এসে হাঁস ও ডিম নিয়ে যায়।

শুক্কুর আলী (৫০)। ছোটখাটো ব্যবসা করলেও ছিল না স্বচ্চলতা। পরে তিনি নিজ উদ্যোগে দেন হাঁসের খামার। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এ এলাকার সবচেয়ে বেশি হাঁস পালন করেন তিনি।

শুক্কুর আলী বলেন, আমার ৫টি খামার রয়েছে। এর মধ্যে একটি খামারে নূরনবী মিয়ার দায়িত্বে রয়েছে ২ হাজার, লাল মিয়ার দায়িত্বে রয়েছে ২ হাজার ৫০০ ও সুজন মিয়ার দায়িত্বে রয়েছে ১ হাজার ৩০০ হাঁস।

duck

তিনি আরও বলেন, আমার খামারগুলোতে সবচেয়ে বেশি বেইজিং জাতের হাঁস। এ জাতের হাঁসগুলো ডিমের জন্য খুব ভালো।

শুক্কুর আলীর বাবলাকোনা খামারে কাজ করেন মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, আমরা সহালে (সকালে) খানা খাইয়ে নদঢু নামাই দেয়। আবার রোদ বেশি পড়লে নদীত থেকে দুপুরে হাঁসগুলো খামারে নিয়ে আসি। ফের বিকেলে আবার নদীতে দিয়াই। নদীর পানিতে সাঁতার কাটলে হাঁস তাড়াতাড়ি বড় হয়। আর নদীর খাবার খেলে ডিমও বড় হয়।

সীমান্তবর্তী এসব এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়েক বছর আগেও শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তঘেঁষা গ্রামের বাসিন্দাদের অভাব-অনাটন ছিল। ঠিকমতো তিন বেলা খাবার খেয়ে না খেয়ে চলত তাদের দিন। এরই মধ্যে তারা ধীরে ধীরে শুরু করেন হাঁস পালন। আর এতেই সংসারে আসে সচ্ছলতা। জলাশয়ে প্রাকৃতিক খাবার থাকায় বাড়তি তেমন খরচ হয় না।

অনেক খামারি সরকারি চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগ করেন প্রাণিসম্পদ বিভাগের বিরুদ্ধে। স্থানীয় অন্তত ১০ জন খামারি জানান, তারা পাহাড় থেকে বয়ে আসা ঝোপঝাড়ে এসব হাঁসের দল নামিয়ে দেন। সেখান থেকে প্রাকৃতিক খাবার খেয়ে নেয় হাঁসের দল। তাই খুব বেশি একটা বাড়তি খাবারের প্রয়োজন হয় না। তবে রোগের দেখা দিলে, তারা দ্রুত হাঁস বিক্রি করে খামার খালি করেন। এতে তাদের অনেক ক্ষতি হয়। বাবলাকোনা সেতুর পাশে একটি হাঁসের খামারে সম্প্রতি রোগ দেখা দিলে ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে না পেরে প্রায় ৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। তবে খবর দিলেও প্রাণিসম্পদ বিভাগের চিকিৎসকদের এসব এলাকায় দেখা মেলে না বলে তাদের অভিযোগ।

Duck

অভাবের সংসারে হাঁস পালন করে স্বাবলম্বী হতে দেখে দেখে হাঁস পালনে আগ্রহ বাড়ছে এলাকার অনেকের। বাবলাকোনা গ্রামের দালবত মারাক বলেন, আমাদের এখানে ঢেউফা নদী আছে। সেই নদীতেই হাঁসের খাবার জোগাড় হয়। তাই আমরা দ্রুত একটি হাঁসের খামার দেব। খামারের জন্য একটি ঘরও আমরা তুলেছি।

কীটতত্ত্ববিদ আরিফুর রহমান সজীব বলেন, সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর জলাশয়ে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার রয়েছে। সেসব খাবার হাঁসের দেহে পুষ্টি উপাদানের জোগান দেয়। আর এসব পুষ্টি উপাদান দেহের ওজন বৃদ্ধি ও ডিম উৎপাদনে সহায়ক। এসব খাবার পাওয়ার ফলে বাড়তি তেমন খরচ হচ্ছে না। এজন্য হাঁস পালনে উপযোগী এসব এলাকা।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সীমান্তবতী এলাকার খামারগুলোর আশপাশের পাহাড়ি ছড়া ও জলাশয় থাকায় প্রাকৃতিক খাবারের যথেষ্ট জোগান রয়েছে। এখানে হাঁস পালন করে অনেকেই লাভবান হয়েছেন। চিকিৎসকদের গাফিলতির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাঁসের খামারিরা যদি সঠিক পরামর্শ ও চিকিৎসাসেবা না পান তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জাগ্রত জয়পুরহাট

সর্বশেষ

জনপ্রিয়