শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ || ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকাশিত: ০৪:৫৬, ২৯ এপ্রিল ২০২১

আক্কেলপুরে অনাবৃষ্টিতে জলাশয়গুলোতে পানি সংকট, হুমকির মুখে মৎস চাষ

আক্কেলপুরে অনাবৃষ্টিতে জলাশয়গুলোতে পানি সংকট, হুমকির মুখে মৎস চাষ

জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে তীব্র খরা ও অনাবৃষ্টির প্রভাবে উপজেলার প্রায় শতাধিক পুকুরে পানি সংকটের প্রভাবে মৎস চাষ পড়েছে হুমকির মুখে। বিপাকে পড়েছেন মৎস চাষীরা। ষড়ঋতুর এ দেশে এ সময় প্রতি বছর অনেক বৃষ্টি হলেও এখন পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের কোনো লক্ষণ দেখা না দেয়ায় অনেক পুকুর, ডোবা ও নালা শুকিয়ে গোচারণ ভুমি হয়েছে। এতে দেশীয় প্রজাতির মাছসহ নানা প্রজাতির চাষকৃত মাছ উৎপাদন এখন হুমকির মুখে পড়েছে।

জানা গেছে, চলতি মৌসুমের এ সময় মাছের প্রজণন ও রেণু ফোটানোর মক্ষম সময় । গত মৌসুমেও সঠিক সময়ে পরিমান মতো বৃষ্টিপাত না হওয়ায় জলাশয় গুলোতে দেশীজাতের মাছ সময় মতো ডিম ছাড়তে না পারাই উৎপাদন ব্যহত হয়েছিল। সেই একই প্রভাব পড়েছে চলতি মৌসুমে। এ বছরও সঠিক সময়ে বৃষ্টিপাত না হওয়ার ফলে মাছ উৎপাদনে কিছুটা ধস নামে উৎপাদনকারী খামারী সহ সাধারণ পুকুর মালিকদের। বিলুপ্তির সাথে যোগ হচ্ছে অনেক প্রজাতির দেশীয় মাছ। মাছের বাড়ন কম এবং গুনগত মান নিম্নমুখী হতে চলেছে। একই সাথে বাজারে বেড়ে যাচ্ছে মাছের দাম।

উপজেলা মৎস অফিস সুত্রে জানা গেছে, আক্কেলপুর উপজেলায় সরকারী ও বেসরকারীসহ মোট ৫ হাজার ৩শ ১৩টি পুকুর ও জলাশয় রয়েছে। যার আয়তন ৮’শ ১৪ পয়েন্ট ২২ হেক্টর। সরকারী পুকুর ৪‘শ ৮০টি।আয়তন ১’শ ৫০ হেক্টর। বে-সরকারী পুকুরের সংখ্যা ৪‘শ ৩৩টি। আয়তন ৬’শ ৬৪ পয়েন্ট ২২ হেক্টর। সরকারী কোনো হ্যাচারী না থাকলেও বে-সরকারী হেচারী রয়েছে ৫ টি। নদীর সংখ্যা ২টি এর মধ্যে তুলশীগঙ্গা নদীর আয়তন ৮০ হেক্টর ও ছিরি নদীর আয়তন ৫ পয়েন্ট ৫ হেক্টর। মৎস খামার ২৫ টি তাদের পুকুরের সংখ্যা ২‘শ ৩৩ টি। আয়তন ১‘শ ৭ হেক্টর। সরকারী ভাবে বিলের সংখ্যা ২টি। আয়তন ২২ হেক্টর। খাল ও নালা রয়েছে প্রায় ২৫ হেক্টর।

উপজেলার শান্তা গ্রামের মৎস চাষী ও হ্যাচারী মালিক মোহসীন আলী সরদার ও রায়কালী গ্রামের গোলাম মওলা, তিলকপুরের সিরাজুল ইসলাম জানান, তীব্র খরায় পুকুরের পানি সংকটের প্রভাবে মাছ চাষ করা সম্ভব হয়ে উঠছে না । দিন দিন পানির তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে পুকুরের পানিতে অক্সিজেনের পরিমান কম তা দাবদাহে অনেক মাছ মরে যাচ্ছে।এ কারণে মাছ চাষ হুমকির মুখে পড়ছে।

তারা আরো বলেন, বৈদ্যুতিক মটর, শ্যালো মেশিনের নলকুপের সাহায্য পানি সরবরাহ ব্যবস্থা চালু করা হলেও তাতে একদিকে খরচ বেশি এবং পানির স্তর নীচে নামায় ঠিকমতো পানি উঠছে না। বেড়ে যাচ্ছে তাদের মাছ উৎপাদন খরচ।

উপজেলার হাস্তাবসন্তপুর গ্রামের মৎস চাষী বাবলু জানান, পুকুরে পানি সংকটের কারণে তাদের সমিতির নামে নেয়া লিজকৃত পুকুরে এবার মাছ উৎপাদনে প্রায় লক্ষাধিক টাকা লোকশান গুনতে হবে। একই ধরণের বিপাকের কথা জানোলেন মৎস সমিতির রতন মন্ডল,তাজু হোসেন, আব্দুল কুদ্দুস, সুজন প্রামানিক, শাকিল আহম্মেদ, মাহতাব উদ্দিন সহ অনেকে।

আক্কেলপুর কলেজ বাজারের মৎস আড়ৎদার বাবলু, ও মাহতাব হোসেন জানান, অন্যান্য উপজেলার চেয়ে এ উপজেলায় সবচেয়ে সরকারী ও বে-সরকারী পুকুর এবং জলাশয় রয়েছে। বৃষ্টির পানি সংকটের কারণে বাজারে মাছের আমদানী কম।পুর্বের তুলনায় দাম অনেকটা বেশি হওয়ায় ক্রেতাদের উপস্থিতি অনেকটায় কম হওয়ায় তারা সমস্যায় পড়েছেন।

এদিকে সারা বির্শ্বে ছড়িয়ে পড়া অতিমারি করোনা ভাইরাসের প্রভাবও খরার কারণে শ্রমজীবী লোকজনের কাজকর্ম করতে না পারা ও কাজ না থাকায় উপার্জন কমে যাওয়ার জন্য মাছের বাজারে যেতে পারছেন না। ফলে দেখা দিয়েছে তাদের আমিষের ঘাটতি। এমনটায় জানালেন হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পঃপঃ অফিসার ডাঃ রাধেম্যাম আগরওয়ালা ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ রুহুল আমিন সরকার ।

তিনি জানান, প্রতিদিন একজন মানুষের জন্য আমিষের প্রয়োজন হয় কমপক্ষে ৫০ তেকে ৭৫ গ্রাম । যার বৃহৎ যোগান আসে মাছ থেকে। কিন্ত এ দরিদ্র অঞ্চলের অনেক পরিবার প্রতিদিন গড়ে ২৫ গ্রামেরও কম আমিষের জোগান করতে পারেন।

উপজেলা মৎস অফিসার মহিদুল ইসলাম বলেন, খরা মোকাবেলায় মৎস চাষীদের মাটপর্যায়ে গিয়ে পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। তাঁরা মৎস্য চাসীদের খরা ও তাপ মোকাবেলায় পুকুরের কোন কোন স্থানে পােিনত কচুরী পানা অথবা পুকরের পানির উপরে আচ্ছাদন তৈরী করে পানিকে শীতল রাখার পরামর্শ প্রদান করছেন। এ ছাড়া উপজেলার মৎস চাষীরা নিজ উদ্দ্যেগে নলকুপ, বিদ্যু চালিত পাম্প ও শ্যালো মেশিনের সাহায্য পানি সরবরাহ করে মৎস উৎপাদন অব্যাহত রেখেছেন। বৃষ্টিপাত হলে মাছের উৎপাদন স্বাভাবিক হয়ে ওঠবে এমনটায় আশাবাদ ব্যক্ত করলেন ওই মৎস কর্মকর্তা মহিদূল ইসলাম ।

জাগ্রত জয়পুরহাট

সর্বশেষ

জনপ্রিয়