শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ || ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ১৭ মার্চ ২০২১

গরমে বেল খাওয়ার ১০ স্বাস্থ্য উপকারিতা

গরমে বেল খাওয়ার ১০ স্বাস্থ্য উপকারিতা

শীতকে বিদায় দিয়ে আগমন ঘটেছে গরমের। এই গরমে নানা রকম পুষ্টিকর ফলের দেখা মেলে। তেমনি একটি সুস্বাদু ফল হচ্ছে বেল। এটি খুবই পুষ্টিকর ও উপকারী ফল। প্রকৃতিতে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকা গরমে আপনার প্রাণ জুড়াতে বেলের সরবতের জুড়ি নেই। এছাড়া বেলের রয়েছে অনেক স্বাস্থ্য গুণাগুণও।  

নিম্নে বেলের পুষ্টিগুণ এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

বেলের পুষ্টিগুণ   

বেলের পুষ্টিগুণ অন্যান্য ফলের চেয়ে অত্যন্ত বেশি। কাঁচা কিংবা পাকা দুইভাবেই বেল খাওয়া যায়। বেলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, এ, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও পটাসিয়ামের মত মূল্যবান পুষ্টি উপাদান রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম বেলের শাঁসে পানির পরিমাণ ৫৪.৯৬-৬১.৫ গ্রাম, প্রোটিন ১.৮-২.৬২ গ্রাম, স্নেহ পদার্থ ০.২-০.৩৯ গ্রাম, শর্করা ২৮.১১- ৩১.৮ গ্রাম, ক্যারোটিন ৫৫ মিলি গ্রাম, থায়ামিন ০.১৩ মিলিগ্রাম, রিবোফ্লেবীন ১.১৯ মিলিগ্রাম, এসকরবিক এসিড ৮-৬০ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন ১.১ মিলিগ্রাম ও টারটারিক এসিড ২.১১ মিলিগ্রাম।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে

বেল রক্তকে পরিষ্কার রাখা ছাড়াও রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখতে ভুমিকা রাখে। বেল শরীর থেকে টক্সিন দূর করে শরীরকে ভেতর থেকে পরিষ্কার রাখতে ভুমিকা রাখে। বেলে রয়েছে ভিটামিন সি যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বাড়িয়ে দেয়। এছাড়াও গ্রীষ্মকালে অনেক সময় অনেক ছোঁয়াচে রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এসব ছোঁয়াচে রোগ মোকাবেলায় বেলের ভুমিকা অনস্বীকার্য।

কিডনি সুস্থ রাখতে

কিডনি ভালো রাখতে বেলের গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা রয়েছে। বেলে রয়েছে এমন কিছু উপকারী উপাদান যা কিডনিকে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে। ফলে দেহ বিভিন্ন প্রকার অসুখ থেকে কিডনিকে মুক্ত থাকে। এজন্য কিডনির সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকরা রোগীকে বেল খেতে বলে থাকেন।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে   

যারা কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য পাকা বেলের সরবত খুব উপকারি। বেল যেহেতু খাবার হজমে সাহায্য করে তাই দেহে কোষ্ঠকাঠিন্যর মত সমস্যা বাসা বাঁধতে পারেনা। কেউ যদি নিয়মিত বেলের সরবত খান তাহলে দুই তিন মাসের মধ্যেই তার কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা আর থাকবেনা। তাছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্যর জন্য যে পেটব্যথা হয় তাও রোধ করে এই বেল। অন্যদিকে কাঁচা বেল খেলে তা ডায়রিয়া ও আমাশয় রোগ সারাতে অনেক কাজ করে।

ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা প্রতিরোধে

বেলে রয়েছে ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা প্রতিরোধী উপাদান। তাই কারো সর্দি-জ্বর হলে এক চামচ বেলপাতার রস খাওয়ান। দ্রুত সেরে উঠবে। এছাড়া বেলপাতার রস ঠাণ্ডা ও ক্রনিকের জন্যও অনেক উপকারী।

ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষায়

বেলে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য আঁশ থাকে যা ত্বকের জন্যও খুব উপকারী। নিয়মিত বেল খেলে তা ত্বককে মসৃণ রাখতে সহায়তা করে। এছাড়া এটি ব্রণের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে।

হজম শক্তি বৃদ্ধিতে  

গরমকালে প্রায়ই বদহজম, গ্যাস, অম্বল, পেটব্যথা এসব সমস্যা লেগেই থাকে। এসব সমস্যা থেকে রেহাই পেতে বেলের সরবত খুবই কাজের। বেল খেলে তা খাবার হজম হতে সাহায্য করে। এছাড়া ফলটি পেট ঠাণ্ডা রাখতেও সাহায্য করে। ফলটি হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে বলে গ্যাস, অম্বল, বমির মত সমস্যা সহজে হয় না। তাই গরমের সময় রোজ বেলের সরবত খেলে এসব সমস্যা থেকে সহজেই বেঁচে থাকা যায়।

শরীরকে সতেজ রাখতে

গরমে শরীর যখন খুব ক্লান্ত লাগে তখন একগ্লাস বেলের সরবত খেয়ে নিলে মুহূর্তেই দেহে এনার্জি পাওয়া যায়। প্রতি  ১০০ গ্রাম বেলের মধ্যে ১৪০ গ্রাম ক্যালোরি পাওয়া যায়। ক্যালোরি ছাড়াও এতে থাকে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন যা দেহের এনার্জি বাড়াতে ভুমিকা রাখে। ফলটি পেশিকে মজবুত করা সহ দেহকে সচল রাখতে সাহায্য করে। তাই গরমের সময় শরীরের ক্লান্তিভাব দূর করে শরীরকে সতেজ রাখতে বেলের জুড়ি নেই।

গ্যাসট্রিক ও আলসার প্রতিরোধে

বেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ। এছাড়া বেল হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। এর ফলে পেটে গ্যাসের সমস্যা তেমন হয় না। তাই নিয়মিত বেল খেলে গ্যাসট্রিক, আলসার সহ পেটে গ্যাসজনিত ব্যথা জাতীয় সমস্যা থেকে সহজেই মুক্ত থাকা যায়।

চোখের দৃষ্টিশক্তি প্রখর করতে

বেল চোখের জন্যও খুব উপকারী। এতে প্রচুর ভিটামিন এ থাকে, যা চোখের জন্য একটি উপকারী উপাদান এবং এটি চোখে পুষ্টি যোগায়। ফলটি চোখের দৃষ্টিশক্তি প্রখর করতে সহায়তা করে। এছাড়া চোখের বিভিন্ন রোগ যেমন গ্লুকোমা, জেরসিস রোগ হবার হাত থেকে চোখকে রক্ষা করতেও এর বিশেষ ভুমিকা রয়েছে। বেলপাতার রস মধুর সঙ্গে মিশিয়ে পান করলে চোখের ছানি কমে যায়। যারা নিয়মিত বেল খায়, তাদের চোখের বিভিন্ন অসুখ হওয়ার প্রবণতা তুলনামূলকভাবে কম থাকে।

ক্যান্সার প্রতিরোধে

বেলে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টাল গুণাগুণ, যা ক্যান্সার প্রতিরোধক। এর রয়েছে স্তন ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার ও জরায়ু ক্যান্সার রোধে বিশেষ ভুমিকা। বেল থেকে পাওয়া বিটাক্যারোটিন মানবদেহের টিউমার কোষের বৃদ্ধি রোধ করে। তাই বিশেষ করে নারীরা নিয়মিত বেল বা বেলের শরবত খাওয়ার মাধ্যমে ব্রেস্ট ক্যান্সার ও জরায়ু ক্যান্সারের ঝুঁকি থেকে দূরে থাকতে পারেন।    

সবশেষে বলতেই হয়, নানাবিধ শারীরিক উপকারিতা পেতে এই গরমে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় অবশ্যই বেল রাখা জরুরি। শারীরিক পরিশ্রেমের ধকল দূর সহ দেহকে প্রাণবন্ত রাখতে একগ্লাস বেলের শরবত অতুলনীয়।

জাগ্রত জয়পুরহাট

সর্বশেষ

জনপ্রিয়