বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪ || ১৩ চৈত্র ১৪৩০

প্রকাশিত: ১৮:১৪, ১০ মে ২০২১

পৃথিবী থেকে মহাকাশ পর্যন্ত লিফট: আসলেই সম্ভব?

পৃথিবী থেকে মহাকাশ পর্যন্ত লিফট: আসলেই সম্ভব?

বড় বড় দালান কিংবা শপিং মলে ঢুকেই আমরা লিফট খুঁজি। যত তলায় যাব, সেই সুইচে চাপ দিলেই পৌঁছে যাই খুব কম সময়ে। কিন্তু তেমনই লিফট বা এলিভেটরে করে পৃথিবী থেকে মহাকাশে গেলে কেমন হয়? ভাবছেন, পাগলের মতো কথা বলছি! তবে এমনটা ভাবছেন বিজ্ঞানীরা।

কয়েক বছর ধরে এমন স্পেস-এলিভেটর তৈরির পরিকল্পনাতেই ডুবে রয়েছেন জাপানের বিজ্ঞানীরা। গবেষণার কাজ চলছে খুব মনোযোগ দিয়েই। এটিকে মূলত ম্যাগনেটিক কার বলা হচ্ছে; যার মাধ্যমে মহাকাশ ভ্রমণ করতে পারবেন নভোচারী ছাড়া সাধারণ মানুষও।

ম্যাগনেট কারের এই চিন্তার বীজটা আরও প্রায় ১২৫ বছর আগে বুনন করেছিলেন রাশিয়ান পদার্থবিজ্ঞানী কনস্ট্যান্টাইন সিওলকোভস্কি। তবে চিন্তাটা ঠিক এমন ছিল না, আরেকটু ভিন্নভাবে মাথায় এসেছিল তার। ১৮৯৫ সালে প্যারিসের আইফেল টাওয়ারকে দেখে ভেবেছিলেন তৈরি করবেন এমনই এক জিওসিঙ্ক্রোনাইজড টাওয়ার। যার উচ্চতা হবে ৩৬ হাজার কিলোমিটার। ভরকেন্দ্র থাকবে পৃথিবীর আকর্ষণ ক্ষেত্রের বাইরে। তবে সেই ভাবনা শুধুই খাতা-কলমে; কারণ তা অসম্ভব!

আশির দশকে বিষয়টি আবারো মাথা তুলে দাঁড়ালো। পৃথিবীর মতো ঘূর্ণন ঘতির কোনো কৃত্রিম উপগ্রহের সঙ্গে পৃথিবীর সংযোগ করা হবে। অর্থাৎ সেই জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট থেকেই কেবল সংযোগে জুড়ে দেয়া হবে নীল গ্রহকে। কিন্তু বায়ুমণ্ডলের এবং ঘূর্ণনের চাপ সহ্য করার মতো দৃঢ় কোনো পদার্থই খুঁজে পাচ্ছিলেন না বিজ্ঞানীরা। আর তাই এই পরিকল্পনাও বিজ্ঞানসম্মতভাবে অসম্ভব মনে হলো বিজ্ঞানীদের।

তবে ১৯৯১ সালে জাপানি বিজ্ঞানী সুমিও ইজিমা বিষয়টিকে আবার সামনে আনলেন। সন্ধান মিললো লোহার থেকেও বহুগুণ দৃঢ় কোনো অধাতব পদার্থ; নাম কার্বন ন্যানোটিউব। যা প্রায় হালকা লোহার থেকে ৬ গুণ। তবে তাতেও খুব একটা লাভ হলো না। কার্বন ন্যানোটিউবও পৃথিবীর ঘূর্ণনের চাপের কাছে টিকতে পারছে না!

এরপর কার্বন ন্যানোটিউবের থেকেও দৃঢ় বোরন নাইট্রেট ও আরও বেশ কিছু পদার্থের ন্যানোটিউবও তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি জাপানের বিজ্ঞানীরা সেই দৃঢ়তাকে আরও খানিকটা বাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

জাপানের ওবায়াসি কর্পোরেশন নামক একটি সংস্থা এই দায়িত্বটি নিয়েছেন। হিসাব অনুযায়ী, পুরো পরিকল্পনার জন্য খরচ হবে প্রায় ৯-১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। গবেষণায় অর্থসাহায্য দিয়ে ইন্ধন যোগাচ্ছে নাসাও। ২০২৫ সালের মধ্যেই তৈরি হয়ে যাবে ঘূর্ণনের চাপ সহনশীল পদার্থ, এমনটাই আশাবাদী তারা।

এই প্রকল্পের খরচ শুনে মাথা ঘোরানোর কথা! তবে এটা ঠিক যে, এমনটা যদি সম্ভব হয়, মহাকাশ অভিযানের খরচ একেবারেই নেমে যাবে। মহাকাশ স্টেশনে খাবার ও নভোচারী পাঠাতে খরচ কমবে অবিশ্বাস্যভাবে। সময় লাগবে মাত্র ৮ ঘণ্টা!

পৃথিবীর নিরক্ষ রেখা থেকে ম্যাগনেটিক যান ঠিক কবে ওপরে উঠবে তা একেবারেই বলা যাচ্ছে না। তবে এমনটা সম্ভব হলে অনেক মানুষই গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে কক্সবাজার কিংবা বান্দরবান না গিয়ে মহাকাশ ঘুরে বেড়াবেন!

জাগ্রত জয়পুরহাট

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ