শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ || ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকাশিত: ১০:৫০, ২৪ জানুয়ারি ২০২১

ব্যবহার বেড়েছে জৈবসারের

ব্যবহার বেড়েছে জৈবসারের

কৃষকদের কাছে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কেঁচো জৈবসার। সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের তিন গ্রামের কৃষকরা এখন জমিতে রাসায়নিক সার ব্যবহার না করে কেঁচো জৈবসার প্রয়োগ করে উৎপাদন করছেন শাকসবজিসহ বিভিন্ন ফসল। জৈবসার শুধু জমিতেই ব্যবহারই নয়, নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে অন্যের কাছে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবানও হচ্ছেন তারা। ইতিমধ্যে এটি সদর উপজেলা ছাড়িয়ে অন্য চার উপজেলায় ছড়িয়ে গেছে।

বালিয়া ইউনিয়নের কৃষকরা একসময় শুধুমাত্র রাসায়নিক সার ব্যবহার করে ফসল উৎপাদন করতেন। এতে জমির অম্ল ও ক্ষারত্ব বৃদ্ধি পায়। এ অবস্থায় পরিবেশবান্ধব কৃষি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে আরডিআরএস বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তায় সুশাসন প্রকল্পের আওতায় সদর উপজেলার বালিয়া দেবিপুর ও জগন্নাথপুর ইউনিয়নে ১০৫টি কেঁচোসার উৎপাদন প্ল্যান্ট স্থাপন করে। পরে ওই গ্রামের দুই শতাধিক কৃষক সিমেন্টের রিং ও বিশেষায়িত কেঁচো দিয়ে প্রথম শুরু করেন কেঁচো জৈবসার তৈরির কাজ।

সিমেন্টের তৈরি রিংয়ে গোবর দিয়ে সেখানে ২০০-২৫০টি কোঁচো ছেড়ে দিয়ে প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। ৩০-৪০ দিনের মধ্যে কেঁচোগুলো বিপাকীয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের মলত্যাগ এবং মুখের বিশেষ লালা দিয়ে তৈরি করে কেঁচো জৈবসার। ওই সার জমিতে প্রয়োগ করে আশানুরূপ উৎপাদন পেয়ে ওই সারের চাহিদা বেড়ে যায়।

পরের বার বগুলাডাঙ্গী গ্রামের তিনশ ও বানিয়াপাড়া গ্রামের দুই শতাধিক পরিবার নিজ বাড়িতে কেঁচোসার উৎপাদন করতে থাকে। এ সার প্রযোগ করলে জমিতে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয় না। জমির স্বাস্থ্য ও মাটির গুণাগুণ ভালো থাকে এবং উৎপাদন আগের চাইতে বৃদ্ধি পায়।

বড়বালিয়া গ্রামের কৃষক আলাউদ্দিন (৪০) ও ফাতেমা (৪৫) জানান, তারা পেঁয়াজ-মরিচ, আলু ও লালশাক খেতে কেঁচো জৈবসার প্রয়োগে আগের চেয়ে অনেক বেশি উৎপাদন পেয়েছেন। কেঁচো দিয়ে উৎপাদিত জৈবসার বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবানও হচ্ছেন তারা।

ছোটবালিয়া গ্রামের কৃষক ময়নুল ইসলাম এক বিঘা জমিতে এ সার প্রয়োগ করে লাউ ও করলার চাষ করেন। তাতে খরচ হয় প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। পরবর্তীতে ফলনকৃত লাউ-করলা বিক্রি করে পেয়েছেন এক লাখ ৫০ হাজার টাকা। এ ফলনে তিনি খুব খুশি।

সনেকা বেগম নামের এক কৃষাণি জানান, বাড়িতে রিং বসিয়ে নারীরাই এটি দেখাশুনা করতে পারেন। তিনি এ পর্যন্ত প্রায় এক হাজার টাকার সার বিক্রি করেছেন।

কৃষকরা জানান, ছোটবালিয়া গ্রামে দুই টন জৈবসার প্রস্তুত হয়। প্রস্তুতকৃত সার নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাইরে বিক্রি করে ওই গ্রামের কৃষকেরা মাসে ২৪ হাজার টাকা আয় করছেন।

এরই ধারাবাহিকতায় বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ২০০, রানীংশংকৈল উপজেলার ১৫০ ও হরিপুর উপজেলার ৫০ বাড়িতে কেঁচো জৈবসার উৎপাদন শুরু হয়েছে।

এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আফতাব হোসেন জানান, এ জেলার জমিতে ব্যাপক জৈবসারের ঘাটতি রয়েছে। জমির সুস্বাস্থ্য রক্ষায় জৈব সারের বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে সদর উপজেলার বালিয়া ও জগন্নাথপুর ইউনিয়নের ছয়টি গ্রামে ১০৫টি জৈবসার উৎপাদন শুরু হয়েছে। গ্রামের কৃষাণ-কৃষাণিরা বাড়িতে বসে গোবর থেকে কেঁচো জৈবসার তৈরি করে রাসায়নিক সার ছাড়াই ফসল উৎপাদন করছেন। অন্যদিকে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে অবশিষ্ট সার বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। এখানকার কৃষকদের লাভ দেখে অন্যান্য উপজেলার চাষিরাও জৈবসার তৈরিতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।’ইতোমধ্যে কেঁচো জৈবসার সদর উপজেলা থেকে রানীশংকৈল, বালিয়াডাঙ্গী ও হরিপুর উপজেলাতেও ছড়িয়ে পড়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে খুব শিগগির ঠাকুরগাঁও জেলা জৈবকৃষির আওতায় আসবে এবং মাটির উন্নয়ন ঘটিয়ে ফসলের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে বলে মন্তব্য করেন এই কৃষি কর্মকর্তা।

জাগ্রত জয়পুরহাট

সর্বশেষ

জনপ্রিয়