যুক্তরাজ্যে সার্চ ব্যবস্থা বদলাতে বাধ্য হতে পারে গুগল

যুক্তরাজ্যের সার্চ সিস্টেমে পরিবর্তন আনতে বাধ্য হতে পারে মার্কিন সার্চ জায়ান্ট গুগল। যুক্তরাজ্যের প্রতিযোগিতা পর্যবেক্ষক ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি বলেছে, বিভিন্ন কোম্পানির মধ্যে আরও বেশি প্রতিযোগিতার বিষয়টি নিশ্চিত করতে যুক্তরাজ্যে কোম্পানিটির বিভিন্ন সার্চ পরিষেবায় পরিবর্তন আনতে বাধ্য করা হতে পারে গুগলকে।
নতুন এক আইনের আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি জায়ান্ট গুগলের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে যুক্তরাজ্যের ‘কম্পিটিশিন অ্যান্ড মার্কেটস অথরিটি’ বা সিএমএ।
আইনে বলা হয়েছে, বড় কোম্পানি যদি নির্দিষ্ট কোনও বাজারে একচেটিয়া আধিপত্য বা খুব বেশি নিয়ন্ত্রণ রাখে বলে প্রমাণ মেলে তবে সেই কোম্পানিকে তাদের নিয়ম পরিবর্তনে বাধ্য করতে পারে সরকার বা নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
যুক্তরাজ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি অনলাইন সার্চ করা হয় গুগলের মাধ্যমে। একইসঙ্গে প্রায় ২ লাখ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তাদের গ্রাহকদের কাছে পৌঁছাতে গুগলের সার্চ বিজ্ঞাপন ব্যবহার করে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
এ বিষয়ে মার্কিন কোম্পানি অ্যালফাবেটের মালিকানাধীন গুগল বলেছে, সিএমএ-এর এসব প্রস্তাব ‘অতিরিক্ত বিস্তৃত ও অস্পষ্ট’। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে ‘গঠনমূলকভাবে কাজ করবে’ বলেও জানিয়েছে তারা।
সিএমএ বলেছে, তারা এখনই গুগলের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা বিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগ তুলছে না। তবে তারা একটি ‘রোডম্যাপ’ বা পরিবর্তনের প্রস্তাবনা তৈরি করেছে, যেখানে গুগলকে তাদের ব্যবসায় কী কী পরিবর্তন আনতে হতে পারে তার উল্লেখ রয়েছে। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে অক্টোবরে।
এসব প্রস্তাবনার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে ব্যবহারকারীদের জন্য একটি ‘পছন্দের স্ক্রিন’ চালু করা, যাতে তারা গুগল ছাড়াও অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিন বেছে নিতে পারে। আরেকটি হচ্ছে, যাদের লেখা বা ওয়েবসাইট গুগলে দেখানো হয়, তারা যেন বুঝতে পারে সেটা কীভাবে দেখানো হচ্ছে এবং চাইলে কিছু নিয়ন্ত্রণও যাতে করতে পারেন।
নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি বলেছে, যুক্তরাজ্যে গড়ে প্রতিদিন একজন মানুষ প্রায় পাঁচ থেকে দশবার গুগলের সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করেন। বিভিন্ন ব্যবসা গুগলের বিজ্ঞাপনে প্রতি বছর গড়ে ৩৩ হাজার পাউন্ড খরচ করে। বাজারে যদি ভালো প্রতিযোগিতা থাকত তবে এসব ব্যবসাকে এত বেশি অর্থ খরচ করতে হত না।
সিএমএ-র প্রধান নির্বাহী সারা কার্ডেল বলেছেন, “গুগল সার্চ অনেক বড় সুবিধা দিলেও আমাদের তদন্তে এখন পর্যন্ত উঠে এসেছে এসব বাজারকে আরও উন্মুক্ত, প্রতিযোগিতামূলক ও উদ্ভাবনী করার সুযোগ রয়েছে।”
তিনি বলেছেন, প্রস্তাবিত ‘লক্ষ্যভিত্তিক ও সঠিক মাত্রার’ এসব পরিবর্তন ‘যুক্তরাজ্যের ব্যবসা ও গ্রাহকদের গুগলের সার্চ পরিষেবার সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে আরও বেশি বাছাই করার ও নিয়ন্ত্রণের সুযোগ দেবে”।
তবে গুগল বলেছে, তদন্তের ফলাফল ও এসব প্রস্তাবিত পরিবর্তন ‘যুক্তরাজ্যের ব্যবসা ও গ্রাহকদের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে’।
নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি গুগলের বিরুদ্ধে এ তদন্ত শুরু করেছে এ বছরের জানুয়ারিতে, যার লক্ষ্য হচ্ছে অনলাইন সার্চে ন্যায্য প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা। অন্যান্য নিয়ন্ত্রণ সংস্থার কাছেও কঠোর নজরদারির মুখে পড়েছে গুগলের সার্চ কার্যক্রম।
গত অগাস্টে একজন মার্কিন বিচারক রায় দিয়েছেন, গুগল অবৈধভাবে সার্চ বাজারে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ চালিয়ে যাচ্ছে।
এ ছাড়াও, ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মুখেও পড়েছে গুগল, যার মধ্যে রয়েছে গুগল নিজেদের শপিং পরিষেবাকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে অন্যান্য প্রতিযোগীদের প্রতিযোগিতার সুযোগ কমিয়ে দিয়েছে। ফলে প্রযুুক্তি কোম্পানিটিকে দুইশ কোটি পাউন্ড জরিমানা করেছে ইইউ।
সূত্র: প্রথম আলো