জনসচেতনতা
ইউনূসকে দাঁড়ি রাখতে বলেননি বাংলাদেশের ধর্ম উপদেষ্টা, ভাইরাল নিউজ কার্ডটি সম্পাদিত

গণঅভ্যুত্থানের কারণে গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। তারপর গত ৮ আগস্ট দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মহম্মদ ইউনূস। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ভবনে আয়োজিত তাঁর এই শপথ অনুষ্ঠানে বিএনপি-সহ দেশটির অন্যান্য বিরোধী দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
তবে এরই মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে মহম্মদ ইউনূসকে নিয়ে করা দেশটির ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেনের মন্তব্য সংক্রান্ত বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম দৈনিক ইত্তেফাকের একটি নিউজ কার্ড। ধর্ম উপদেষ্টার ছবি-সহ কার্ডটির শিরোনামে লেখা হয়েছে, “রাষ্ট্রের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি হিসেবে ড. ইউনুসের এখন দাড়ি রাখা উচিত।- ধর্ম উপদেষ্টা।”
উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল নিউজ কার্ডটি শেয়ার করে লিখেছেন, “শুধু দাড়ি নয় তাকে প্রকৃত মমিন মুসলমান হিসাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা উচিৎ এবং ওমরাহ হজ্জ করা উচিৎ।” সব বানান অপরিবর্তিত।) কার্ডটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, বাংলাদেশের ধর্ম উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূসকে দাঁড়ি রাখার কথা বলেছেন এবং সেই খবর দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত হয়েছে।
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, দৈনিক ইত্তেফাকের ভাইরাল নিউজ কার্ডটি ভুয়ো ও সম্পাদিত। এমনকি বাংলাদেশের ধর্ম উপদেষ্টা, মহম্মদ ইউনূসের দাঁড়ি রাখা সংক্রান্ত কোনও মন্তব্যও করেননি।
কীভাবে জানা গেল সত্য?
প্রথমত ভাইরাল নিউজ কার্ডটি সন্দেহজনক। কারণ বাংলাদেশের ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন যদি দেশটির প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূসকে দাঁড়ি রাখা নিয়ে কোনও অনুরোধ বা নির্দেশ প্রদান করে তাহলে সেই সংক্রান্ত খবর অবশ্যই বাংলাদেশ তথা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হত। কিন্তু আমরা আমাদের কিওয়ার্ড সার্চে এমন কোনও নির্ভরযোগ্য তথ্য বা প্রতিবেদন খুঁজে পাইনি যা থেকে এর সত্যতা প্রমাণ হয়।
তবে আমরা কিওয়ার্ড সার্চ করার সময় গত ১১ সেপ্টেম্বর দৈনিক ইত্তেফাকের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে অন্য একটি নিউজ কার্ড খুঁজে পাই। লেখার ধরণ ও ফ্রন্ট বাদে সেই নিউজ কার্ডের ডিজাইনের সঙ্গে আমরা ভাইরাল নিউজ কার্ডটির ডিজাইনের হুবহু মিল দেখতে পাই। দৈনিক ইত্তেফাকের সেই নিউজ কার্ডটির শিরোনামে লেখা হয়েছে, “দুর্গাপূজার নিরাপত্তায় থাকবে আকাশে হেলিকপ্টার, পানিতে ডুবুরি– ধর্ম উপদেষ্টা।” এর থেকে অনুমান করা যায় যে ভাইরাল নিউজ কার্ডটি দৈনিক ইত্তেফাকের এই নিউজ কার্ড থেকেই বানানো হয়েছে।
পরবর্তী সার্চে আমরা গত ২১ সেপ্টেম্বর দৈনিক ইত্তেফাকের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে ভাইরাল নিউজ কার্ডটি নিয়ে একটি পোস্ট দেখতে পাই। সেখানে ভাইরাল নিউজ কার্ডটিকে ভুয়ো বলে উল্লেখ করে লেখা হয়েছে, “প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে জড়িয়ে ধর্ম উপদেষ্টার বরাত দিয়ে ইত্তেফাকের সূত্র উল্লেখ করে একটি ভুল তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো হয়েছে।” পাশাপাশি উল্লেখ করা হয়েছে, ভাইরাল নিউজ কার্ডটি গত ১১ সেপ্টেম্বর দৈনিক ইত্তেফাকের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে প্রকাশিত নিউজ কার্ডকে এডিট করে বানানো হয়েছে। একই সঙ্গে একটি গ্রাফিক্সের উভয় নিউজ কার্ডকে সেখানে তুলনাও করা হয়েছে।
এরপর পরবর্তী সার্চে আমরা দৈনিক ইত্তেফাকের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে গত ২১ সেপ্টেম্বর এই সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনও দেখতে পাই। সেখানে লেখা হয়েছে, “প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে জড়িয়ে ধর্ম উপদেষ্টার বরাত দিয়ে ইত্তেফাকের সূত্র উল্লেখ করে একটি ভুল তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে ইত্তেফাকে প্রচারিত ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেনের অন্য একটি নিউজের পোস্টার এডিট করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।”
এর থেকে প্রমাণ হয় যে, বাংলাদেশের ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন দেশটির প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূসের দাঁড়ি রাখা নিয়ে কোনও মন্তব্যও করেননি। দৈনিক ইত্তেফাকের ভাইরাল নিউজ কার্ডটি ভুয়ো ও সম্পাদিত।