মঙ্গলবার   ০১ জুলাই ২০২৫ || ১৬ আষাঢ় ১৪৩২

জাগ্রত জয়পুরহাট

প্রকাশিত : ১২:১১, ২৮ জুন ২০২৫

প্রধান উপদেষ্টা ও সিইসির একান্ত সাক্ষাৎ ঘিরে ‘আগ্রহ’, কী ছিল আলোচনায়

প্রধান উপদেষ্টা ও সিইসির একান্ত সাক্ষাৎ ঘিরে ‘আগ্রহ’, কী ছিল আলোচনায়
সংগৃহীত

নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় জানিয়ে ‘যৌথ ঘোষণার’ পরে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের বৈঠক হল, সেখান থেকে শিগগিরই অনেক বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ দৃশ্যমান হবে বলে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে।

নির্বাচনি প্রস্তুতির মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধান উপদেষ্টা ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার-সিইসির এটাই প্রথম বৈঠক। লন্ডনে যৌথ ঘোষণা এলেও সরকারের সঙ্গে আলোচনার পর ভোটের সম্ভাব্য সময়ের ধারণা পাওয়া যাবে-সিইসির এমন বক্তব্যের ১২ দিনের মাথায় সরকারপ্রধানের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হল।

বৃহস্পতিবার বিকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সিইসির বৈঠককে ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর। তবে সিইসির তরফ থেকে বৈঠকের বিষয়বস্তু নিয়ে কিছু জানানো হয়নি। পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশনের মধ্যে সিইসি একাই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান।

জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ মুহূর্তে বলার কিছু নেই। আমরা যা জেনেছি যে (প্রধান উপদেষ্টা ও সিইসি) সৌজন্য সাক্ষাৎ ছিল। সৌজন্য সাক্ষাতের মধ্যে নির্বাচনের কথা হয়ত আসতেই পারে। তবে এখন কোনো অগ্রগতি জানানো যাচ্ছে না।”

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদারের মতে, একান্ত এ বৈঠকের গুরুত্ব অনেক। অনেকগুলো বিষয়, যেগুলোতে এখন সরকার, নির্বাচন কমিশন অগ্রসর হতে হবে এবং অনেক ক্ষেত্রে একত্রে কাজ করতে হবে।

তিনি আশা করেন, আগামী কয়েকদিনে এটা খোলাসা হবে-এ বৈঠকে কী সিদ্ধান্ত হল, এখন সরকার কী কী বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে। এদিকে, প্রধান উপদেষ্টার সাথে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সাক্ষাতের বিষয়বস্তু প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।

শুক্রবার গুলশানে নিজের বাসায় এক সাংবাদিককের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “গতকাল আশা করেছিলাম হয় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে অথবা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের কিছু জানানো হবে, কী বিষয়ে আলাপ হল, কী বিষয়ে বৈঠক হল।

“যদি উভয় পক্ষ থেকে বিষয়টি পরিস্কার করা হয় জাতির সামনে তাহলে আমরা আশস্ত হবো।” ৬ জুন জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা এপ্রিলের প্রথমার্ধে যে কোনো দিন নির্বাচনের আভাস দেন।

এক সপ্তাহের মাথায় ১৩ জুন যুক্তরাজ্যের লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর যৌথ ঘোষণা আসে।

লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। ফাইল ছবি

সেখানে বলা হয় “আজ (শুক্রবার) বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন সফররত প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। অত্যন্ত সৌহার্দ্যমূলক পরিবেশে তাদের বৈঠক হয়।

“তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার কাছে আগামী বছরের রমজানের আগে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব করেন। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও মনে করেন ওই সময় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ভালো হয়।”

যৌথ ঘোষণায় বলা হয়, “প্রধান উপদেষ্টা বলেন যে তিনি আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালে রোজা শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি‌অর্জন করা প্রয়োজন হবে।

“তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার এ অবস্থানকে স্বাগত জানান। ধন্যবাদ জানান দলের পক্ষ থেকে। প্রধান উপদেষ্টাও তারেক রহমানকে ফলপ্রসূ আলোচনার জন্য ধন্যবাদ জানান।”

এর দুদিন পর ১৫ জুন ‘সরকারের সঙ্গে আলোচনা না হলে নির্বাচনের তারিখ বিষয়ে ধারণা পাওয়া যাবে না’ তুলে ধরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নাসির উদ্দিন বলেন, ফেব্রুয়ারি বা এপ্রিলের যে সময়েই নির্বাচন হোক না কেন নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি রয়েছে।

তিনি বলেছিলেন, “সরকার আলোচনা করছে, আলোচনার অগ্রগতি, ভিত্তি কী, চিন্তাভাবনা, আমাদের বুঝতে হবে। সরকারের সাথে আমাদের যখন কথাবার্তা হবে, কী ধরনের চিন্তাভাবনা করছে, তখন আমরা ধারণা পাব, তখন সিদ্ধান্তে আসতে পারবো।”

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর সিইসির সঙ্গে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম কথা বলার চেষ্টা করেছিল, তবে তার সাড়া মেলেনি।

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের একগুচ্ছ সুপারিশসহ প্রতিবেদন সরকারের কাছে রয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনকে দায়বদ্ধ করতেও সুপারিশ রয়েছে; যা নিয়ে বর্তমান কমিশনের আপত্তি রয়েছে।

এছাড়া জাতীয় ঐকমত্য কমিশনও সংস্কার সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে নিয়ম মাফিক প্রস্তুতিও নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন।

বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ ভোটার তালিকা, আইন-বিধি-নীতিমালা সংস্কার, নতুন দল নিবন্ধন, পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন, সীমানা নির্ধারণ, নির্বাচনি সামগ্রী কেনাকাটা সম্পন্ন করার বিষয়ে কমিশনের প্রস্তুতি-অগ্রগতি নিয়ে কথা বলেছেন।

শিগগির খোলাসা হবে, আশা বদিউল আলমের

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা বদিউল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কাল (বৃহস্পতিবার) যে বৈঠক হল। এ বৈঠকটা তো গুরুত্বপূর্ণ, হতে পারে এটা সৌজন্য সাক্ষাৎ, তবে এটা সৌজন্য সাক্ষাতের চেয়ে বেশি কিছু হতে হবে। কারণ, অনেকগুলো বিষয়, যেগুলোতে এখন সরকার, নির্বাচন কমিশন অগ্রসর হতে হবে এবং অনেক ক্ষেত্রে একত্রে কাজ করতে হবে।

“এখন এখন আশা করি, আগামী কয়েকদিনে এটা খোলাসা হবে এ বৈঠকে কী সিদ্ধান্ত হল, এখন সরকার কী কী বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে। নির্বাচন কমিশন তো অনেকগুলো কাজ শুরু করেছে। কতটুকু আমাদের সংস্কার সুপারিশগুলো আমলে নিচ্ছে আমরা নিশ্চিত নই।”

নির্বাচন কমিশনকে দায়বদ্ধ করার যে সুপারিশ সংস্কার কমিশন করেছে, তার গুরুত্বও সম্প্রতি পরিলক্ষিত হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

বদিউল আলম বলেন, “আমরা যেগুলো আমলে নেওয়ার কথা বলেছিলাম, যে নির্বাচন কমিশনকে দায়বদ্ধ হতে হবে। এখন তো, গত সপ্তাহে যা ঘটল (সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদা ও হাবিবুল আউয়াল গ্রেপ্তার), এ দায়বদ্ধতা যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা আমাদের কাছে আরও সুস্পষ্ট হল, যে নির্বাচন কমিশনকে দায় নিতে হবে।”

দায় নেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলে হয়ত তারা নির্বাচন বাতিল বা নির্বাচনেই অগ্রসর হত না বলে ধারণা নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধানের।

“আগামী কিছুদিনের মধ্যে কতগুলো বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে হবে, কতগুলো সংস্কার বাস্তবায়িত হতে হবে। যেগুলো অধ্যাদেশের মাধ্যমে কিংবা নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হতে হবে। কতগুলো সিদ্ধান্ত হতে হবে, নির্বাচনী প্রস্তুতিমূলক কাজ এগিয়ে নিতে হবে,” বলেন তিনি

ঐকমত্য কমিশনের এই সদস্য বলেন, “অনেকগুলো সুপারিশের তালিকার মধ্যে যেগুলো বাস্তবায়ন করতে পারে, অধ্যাদেশের মাধ্যমে কিংবা তাদের নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে, সরকার এগুলো বিবেচনা করছে। আশা করা যায়, দ্রুতই হবে, দ্রুতই হওয়া দরকার।”

তার মতে, দলগুলো ছাড় দিলে দ্রত সময়ের মধ্যে ঐকমত্যও প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে।

ঐকমত্য প্রক্রিয়ার সবশেষ অগ্রগতি বিষয়ে বদিউল আলম বলেন, “এখন তো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কোনো ঐক্যমত সৃষ্টি হচ্ছে না। এখন যদি দলগুলো ছাড় দেয়; বিশেষ করে বড় দল যদি ছাড় দেয় তাহলে আমরা দ্রুত শেষ করতে পারবো।”

‘সৌজন্য সাক্ষাত হলেও ভোটের কথা আসবে’

প্রধান উপদেষ্টা ও প্রধান নির্বাচন কমিশনের একান্ত বৈঠককে সৌজন্য সাক্ষাৎ হিসেবে দেখছেন নির্বাচন কমিশনার মাছউদ।

তিনি বলেন, “এটা সৌজন্য সাক্ষাৎ ছিল। সৌজন্য সাক্ষাতে, যেহেতু নির্বাচন বিষয় এখন জড়িত, কাজেই নির্বাচনের ব্যাপারে তো আলাপ হতেই পারে। আমার মনে হয়, আমাদের সার্বিক অগ্রগতি কি এই ব্যাপারে হয়তো আলাপ হয়েছে।”

ভোটকে সামনে রেখে প্রয়োজনীয় সংস্কার বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে, বলেন তিনি।

নির্বাচন প্রস্তুতির বিষয়ে এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, আচরণবিধির খসড়া করা হয়েছে। ঐকমত্যের ভিত্তিতে আরপিও তে কোনো পরিবর্তন এলে তা যুক্ত করা যেতে পারে। ভোটার তালিকা আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া নেওয়া হয়েছে। সীমানা নির্ধারণের প্রক্রিয়া, নির্বাচনি সামগ্রী কেনাকাটা সেপ্টেম্বরে শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।

 

আব্দুর রহমানেল মাছউদ। ফাইল ছবি

আব্দুর রহমানেল মাছউদ। ফাইল ছবি

ভোটের সম্ভাব্য সময় ফেব্রুয়ারি কিংবা এপ্রিল নিয়ে এখন আলোচনা না হলেও যথাসময়ে জানা যাওয়ার কথা বলেছেন তিনি।

মাছউদের মতে, সার্বিকভাবে সংস্কারের অগ্রগতি রাজনৈতিক ঐকমত্যের উপর নির্ভর করছে।

‘ইসির অবস্থান স্পষ্ট করার সময় এসেছে’

ইউনূস-নাসির সাক্ষাতের বিষয়ে নিজের ধারণা তুলে ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ বলছেন, “সময় এসেছে, নির্বাচন কমিশনের অবস্থানটা স্পষ্ট করার। ফেব্রুয়ারিতে পারবে নাকি এপ্রিলে নির্বাচনটা করতে পারবে তারা, সে তথ্যটা নির্বাচন কমিশনই সঠিক দিতে পারবে সরকারকে।

“আমার মনে হয়, এ বিষয়টা নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করতে (সিইসি) গেছেন, সরকারের তরফে কী সংকেত আসে, বোঝার চেষ্টা করবেন।”

তার মতে, নির্বাচনের সাথে তো শুধু নির্বাচন কমিশনই নয়, এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তেরও ব্যাপার, এ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত তো ইসিকে প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকে বুঝতে হবে।

“স্বাভাবিভাবে দুটো উদ্দেশ্যে আলোচনাটা হয়েছে বলে মনে হয়, সরকারের দিক থেকে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তটা কী, একই সাথে নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতিটাও অবহিত করবে সরকারকে।

“যেহেতু এখনও (প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনার) সিদ্ধান্তটা নির্বাচন কমিশন জানায়নি, এখন তো আমাদের অপেক্ষা একটু করতে হবে, সিইসি কিছু প্রকাশ করে কিনা।”

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির মধ্যে এমন এক সময়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সাক্ষাৎ হল, যখন একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন পরিচালনাকারী সাবেক দুই প্রধান নির্বাচন কমিশনার গ্রেপ্তার হয়েছেন।

অধ্যাপক সাব্বিরের মতে, দুটো বিষয়ই এক করে দেখার সুযোগ নেই। তবে সাবেক দুই সিইসির গ্রেপ্তার বর্তমান নির্বাচন কমিশনের উপরও মানসিক চাপ তৈরি করতে পারে। ভবিষ্যতে যারা আসবে, তাদের জন্যও চাপ তৈরি করতে পারে।

সূত্র: বিডি নিউজ ২৪

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ