বুধবার   ০২ জুলাই ২০২৫ || ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

জাগ্রত জয়পুরহাট

প্রকাশিত : ১৮:৫২, ১ জুলাই ২০২৫

ঘুম ভাঙে ঠিক অ্যালার্ম বাজার আগেই? জেনে নিন কেন এমন হয়

ঘুম ভাঙে ঠিক অ্যালার্ম বাজার আগেই? জেনে নিন কেন এমন হয়
সংগৃহীত

কখনও কি এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে যে, রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অ্যালার্ম দেওয়া সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে, কিন্তু চোখ খুলে গেছে ঠিক ৭টা ২৮ মিনিটে? হয়ত বিরক্ত হয়ে ভেবেছেন, দু’মিনিট ঘুম কম হল!

আবার মনে হতে পারে, ঘুমের মধ্যেও সময় বুঝে ওঠার কোনো অলৌকিক ক্ষমতা হয়ত নিজের মধ্যে আছে!

এই রহস্যময় বিষয়টি নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ স্লিপ মেডিসিন’-এর মুখপাত্র ও অভ্যন্তরীণ চিকিৎসা এবং ঘুমবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ডা. আন্দ্রেয়া মাতসুমুরা।

রিয়েলসিম্পল ডটকম-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে তিনি তিনটি সম্ভাব্য কারণ তুলে ধরেছেন। যার একটি সত্যিই আমাদের মানসিক ক্ষমতার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

ঘুমের রুটিন অত্যন্ত পরিপাটি ও স্বাস্থ্যকর

হয়ত অ্যালার্ম বাজার আগেই জেগে উঠছেন, কারণ আপনার ঘুমের অভ্যাস এতটাই পরিপাটি যে নিজ দেহ-মন অভ্যস্ত হয়ে গেছে নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে এবং জেগে উঠতে।

ডা. আন্দ্রেয়া মাতসুমুরা বলেন, “যদি প্রতিরাতে একই সময়ে ঘুমাতে যান, অন্তত সাত ঘণ্টা ঘুমান এবং প্রতিদিন একই সময়ে জেগে ওঠেন এবং তখন নিজেকে সতেজ অনুভব করেন, তাহলে আপনার শরীরের ‘সার্কাডিয়ান রিদম’ একেবারেই সঠিকভাবে কাজ করছে।”

‘সার্কাডিয়ান রিদম’ হল মানবদেহের ২৪ ঘণ্টার প্রাকৃতিক ঘড়ি, যা কখন ঘুমোতে হবে আর কখন জেগে উঠতে হবে, সে নির্দেশ দেয়।

এই ঘড়ি মস্তিষ্কের এমন একটি অংশের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়, যেটি আলো ও অন্ধকারের মতো বাইরের সংকেতগুলোর প্রতি সংবেদনশীল। সন্ধ্যা হলে দেহে মেলাটোনিন হরমোন নিঃসরণ হয়, যা ঘুমের জন্য সহায়ক। আবার ভোরের আলো চোখে পড়লে ঘুমভাঙার প্রাকৃতিক সংকেত সক্রিয় হয়।

অতএব, যদি প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যান ও জেগে ওঠেন এবং ঘুমের পরিবেশে আলো-অন্ধকারের সঠিক সমন্বয় বজায় রাখেন, তাহলে দেহের এই ঘড়ি একেবারে একটি সুসংগঠিত অর্কেস্ট্রার মতো কাজ করবে ঠিক সময়ে, নিখুঁতভাবে।

অতিরিক্ত দুশ্চিন্তায় অজান্তেই আগে জেগে উঠছেন

মনে ভয় থাকতে পারে যে ঘুমিয়ে থাকলে অ্যালার্ম শুনতে পাবেন না। বিশেষ করে যেদিন জরুরি মিটিং আছে বা কোনো ভ্রমণের সময় খুব ভোরে রওনা দিতে হবে। এই উদ্বেগের কারণে দেহ ‘অ্যাডভান্স ওয়ার্নিং সিস্টেম’-এর মতো আগে থেকেই সক্রিয় হয়ে ওঠে।

ডা. মাতসুমুরা বলেন, “যখন দেহের মনে হয় খুব ভোরে জেগে উঠতে হবে, তখন কর্টিসল এবং অ্যাড্রেনোকর্টিকোট্রপিন -এর মতো স্ট্রেস হরমোন নিঃসরণ শুরু হয় ঘুমের মধ্যেই। যার ফলে অনেকেই অ্যালার্মের আগেই জেগে যান।”

এই অবস্থায় ঘুমের মধ্যেও একাধিকবার জেগে উঠতে পারেন। যদিও তা মনে রাখতে নাও পারেন। আবার যদি এই ঘটনা বারবার ঘটে এবং প্রতিদিন উদ্বিগ্ন ও ভারী মাথা নিয়ে ঘুম থেকে ওঠেন, তাহলে এটি ‘সার্কাডিয়ান ডিসরাপশন’ বা ঘুমের সময়সূচির ব্যাঘাতের লক্ষণ হতে পারে।

বিশেষ করে যারা রাতজাগা অভ্যাসে অভ্যস্ত এবং মধ্যরাত বা এর পর ঘুমাতে যান, অথচ সকাল ৬টার মধ্যে জেগে উঠতে হয়, তাদের ঘুম হয় অস্থির। এই অবস্থায় মস্তিষ্ক যেন এক চোখ খোলা রেখে ঘুমায়। যার মানে ঘুম কখনই গভীর হয় না।

এই অবস্থার সমাধানে ঘুমের সময় ঠিক করা এবং ঘুমের আগে ‘স্ক্রিন টাইম’ কমানোসহ কিছু কার্যকর পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত।

মনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে-এক ধরনের মানসিক ক্ষমতা

এই কারণ একটু অদ্ভুত শোনালেও একেবারে অবাস্তব নয়। কিছু মানুষ সত্যিই এমনভাবে নিজেদের মনকে প্রশিক্ষিত করতে পারেন, যাতে তারা নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে জেগে ওঠেন অ্যালার্ম ছাড়াই।

ডা. মাতসুমুরা বলেন, “নিউরোসায়েন্স বা স্নায়ুবিজ্ঞানের গবেষণায় দেখা গেছে, ‘ম্যানিফেস্টেইশন’ এবং ‘পার্সুয়েইশন’য়ের ক্ষমতা মানুষের মস্তিষ্কে কাজ করতে পারে।"

তিনি উদাহরণ দেন খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে। একজন পেশাদার অ্যাথলেট যেভাবে মাঠে নিজের সাফল্যের ছবি কল্পনা করেন ও সেটিকে বাস্তবে রূপ দেন, তেমনিভাবে কিছু মানুষ নিজের মনের মধ্যে নির্দিষ্ট সময়ে জেগে ওঠার মানসিক প্রস্তুতি তৈরি করতে পারেন।

তবে কীভাবে এটা সম্ভব হয় বা কীভাবে আমরা এভাবে নিজেদের ঘুম ভাঙানোর ঘড়ি বানাতে পারি, তা এখনও গবেষণার বাইরে।

ডা. মাতসুমুরা নিজেও বলেন, “আমি জানি না, এটি কীভাবে করা যায়। তবে অনুমান করা যায় যে, এই মনোবলের মাধ্যমে আমরা ঘুমের সময় নিয়ন্ত্রণে আনতে পারি। যতক্ষণ না তা ‘সার্কাডিয়ান’ ছন্দের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে যায়।”

তাই চাইলে আজ রাতেই এমন মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে ঘুমাতে পারেন আর মনকে বলুন, ‘আমি ঠিক সকাল ৭টায় উঠব।’ তবে হ্যাঁ, অ্যালার্ম ঘড়িটা চালু রেখেই রাখুন, বাড়তি নিরাপত্তা হিসেবে।

সূত্র: বিডি নিউজ ২৪

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ