সোমবার   ১৬ জুন ২০২৫ || ১ আষাঢ় ১৪৩২

জাগ্রত জয়পুরহাট

প্রকাশিত : ১৬:০৩, ১৪ জুন ২০২৫

ব্যবহারকারীদের পরীক্ষায় নকল ও ন্যুড ছবি তৈরির চ্যাট ফাঁস করল মেটা

ব্যবহারকারীদের পরীক্ষায় নকল ও ন্যুড ছবি তৈরির চ্যাট ফাঁস করল মেটা
সংগৃহীত

আপনার ইন্টারনেট সার্চ হিস্টরি যদি হঠাৎ জনসমক্ষে চলে আসে, তাহলে অস্বস্তি অনুভব করাই স্বাভাবিক। ঠিক এমন পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন মেটা এআই ব্যবহারকারীরা। কারণ, বহু মানুষের প্রম্পট ও এআইয়ের জবাব এখন দেখা যাচ্ছে মেটার পাবলিক ফিডে।

একজন ইন্টারনেট নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ একে বলছেন ‘ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এটি এক বড় সমস্যা’। কারণ কিছু পোস্ট সহজেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্টের তথ্য (প্রোফাইল ছবি বা ইউজার নেম) দেখা যায়।

এর ফলে কেউ কেউ হয়তো না জেনেই বিশ্বকে জানিয়ে দিচ্ছেন, তারা স্বল্পবসনা চরিত্র তৈরি করতে বলছেন অথবা পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনে সাহায্য চাইছেন।

এ বিষয়ে মেটা বলছে, ব্যবহারকারীর চ্যাটগুলো ডিফল্টভাবে ব্যক্তিগত থাকে। যদি কেউ কোনো পোস্ট প্রকাশ করতে চান, তারা তা পরে সরিয়ে ফেলতেও পারেন।

তবে পোস্ট শেয়ার করার আগে একটি সতর্কবার্তা ভেসে ওঠে, যেখানে লেখা থাকে—‘আপনার প্রম্পটগুলো পাবলিক এবং সবার কাছে দৃশ্যমান হবে। ব্যক্তিগত বা সংবেদনশীল তথ্য শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন।’

তবে অনেকে ব্যবহারকারীরাই হয়তো জানেন না, তাদের দেওয়া প্রম্পট আর জবাবগুলো মেটা এআই-এর ‘ডিসকভার’ নামের পাবলিক ফিডে সবাই দেখতে পাচ্ছে। আর অনেক ক্ষেত্রেই প্রোফাইল ছবি ও ব্যবহারকারীর নামের মাধ্যমে তাদের ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট চিহ্নিত করা যাচ্ছে।

যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম বিবিসি এমন অনেক চ্যাট উদাহরণ খুঁজে পেয়েছে, যেখানে কেউ স্কুল বা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে মেটা এআইকে তার উত্তর চেয়েছেন।

এ ধরনের একটি চ্যাটের শিরোনাম ছিল ‘Generative AI tackles math problems with ease’ (জেনারেটিভ এআই অনায়াসে গণিত সমস্যার সমাধান করছে)।

আরেকজন ব্যবহারকারীর চ্যাটে দেখা যায়, তিনি তার লিঙ্গ পরিচয় এবং নিজেকে রূপান্তর করা উচিত কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন করছেন। এই আলাপও প্রকাশ্যে চলে এসেছে।

একটি সার্চে ব্যবহারকারী এআইকে বলেছে, এমন একটি অ্যানিমেটেড চরিত্র আঁকতে, যেখানে চরিত্রটি শুধু অন্তর্বাস পরা অবস্থায় রয়েছে।

এই সার্চের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট পর্যন্ত শনাক্ত করা গেছে, কারণ সেখানে তার প্রোফাইল ছবি ও নাম ছিল।

মেটা এআই ব্যবহার করা যায় ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে। এ ছাড়া এটি একটি পৃথক অ্যাপ হিসেবেও ব্যবহারযোগ্য, যেখানে রয়েছে একটি পাবলিক ‘ডিসকভার ফিড’।

ব্যবহারকারীরা চাইলে তাদের সার্চ বা প্রম্পট প্রাইভেট রাখতে পারেন, সেটিংসে গিয়ে তা পরিবর্তন করা যায়।

যুক্তরাজ্যে এটি এখন ব্রাউজারভিত্তিক আর যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাপের মাধ্যমে ব্যবহার করা যায়।

চলতি বছরের এপ্রিল মাসে মেটা যখন তাদের এআই টুলটি চালুর ঘোষণা দেয়, তখন একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তারা জানায়—

ডিসকভার ফিড হবে এমন একটি জায়গা, যেখানে অন্যরা কীভাবে এআই ব্যবহার করছে, তা শেয়ার ও এক্সপ্লোর করা যাবে।’

তারা আরও জানায়, ‘আপনি নিজের তথ্য কতটুকু শেয়ার করবেন তার নিয়ন্ত্রণে আছেন—আপনি না চাইলেই কিছু শেয়ার হবে না।’

তবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান সোশ্যাল প্রুফ সিকিউরিটির প্রধান নির্বাহী র‍্যাচেল টোব্যাক এক্সকে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে বলেন, ‘যদি কোনো টুল সম্পর্কে ব্যবহারকারীর ধারণা বাস্তব ব্যবহারের সঙ্গে না মেলে, তাহলে সেটি তাদের অভিজ্ঞতা ও নিরাপত্তার জন্য গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মানুষ সাধারণত আশা করে না, যে একটি চ্যাটবটের সঙ্গে তাদের কথোপকথন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মতো ফিডে প্রকাশ পাবে।

টোব্যাক বলেন, ‘এ কারণেই অনেক ব্যবহারকারী অজান্তেই ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করে ফেলছেন, যার সঙ্গে তাদের পরিচয় যুক্ত হয়ে যাচ্ছে।’

২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম উন্মোচন করা হয় ‘মেটা এআই’। এরপর ধীরে ধীরে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার ও ওয়েব প্ল্যাটফর্মে একে সংযুক্ত করে মেটা। ব্যবহারকারীরা তাদের দৈনন্দিন কাজ, প্রশ্নোত্তর, কনটেন্ট সাজেশন, এমনকি রেস্তোরাঁ খোঁজার মতো কাজেও মেটা এআই ব্যবহার করতে শুরু করে।

সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক শেয়ারহোল্ডার সভায় মেটা সিইও মার্ক জাকারবার্গ জানিয়েছেন, তাদের এআই অ্যাসিস্ট্যান্টের মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা এক শ কোটির বেশি। গত বছর সেপ্টেম্বরে যেখানে এই সংখ্যা ছিল প্রায় ৫০ কোটি, মাত্র কয়েক মাসেই তা দ্বিগুণ হয়েছে। তবে ব্যবহারকারীর সংখ্যায় সবচেয়ে বড় ঝাঁপ দেখা যায় ২০২৪ সালের জুনে, যখন মেটা এআই ভারতের বাজারে উন্মুক্ত হয়।

সূত্র: আজকের পত্রিকা

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ