শিশুদের টাইফয়েড টিকা নেওয়া এত জরুরি কেন

সালমোনেলা টাইফি নামের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হলে টাইফয়েড জ্বর হয়। এটি মারাত্মক সংক্রমণ। এই জীবাণু সাধারণত দূষিত খাবার ও পানির মাধ্যমে ছড়ায়। উন্নয়নশীল দেশগুলোয় এটি একটি গুরুতর জনস্বাস্থ্য সমস্যা।
বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে এর জটিলতা এবং এ রোগের কারণে মৃত্যুর হার বেশি। এই রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো টিকা। সেই সঙ্গে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের নিশ্চয়তা এবং পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা।
টাইফয়েড টিকা কী
টাইফয়েড টিকা রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা গড়ে তোলে। বর্তমানে বাংলাদেশে শিশুদের জন্য টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (টিসিভি) দেওয়া হচ্ছে। এটি মাংসপেশিতে ইনজেকশন হিসেবে দিতে হয়। এটি একধরনের সাব-ইউনিট টিকা, যা ব্যাকটেরিয়ার একটি অংশকে একটি ক্যারিয়ার প্রোটিনের সঙ্গে যুক্ত করে তৈরি করা হয়। এ আধুনিক টিকাটি আগের টিকার তুলনায় শিশুদের মধ্যে শক্তিশালী ও দীর্ঘস্থায়ী সুরক্ষা দেয়।
টাইফয়েড টিকা কেন নেওয়া দরকার
১. এটি মারাত্মক টাইফয়েড জ্বর ও এর জটিলতা, যেমন অন্ত্রে ছিদ্র, মস্তিষ্কের প্রদাহ প্রতিরোধ করে।
২. এটি অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী টাইফয়েডের বিস্তার রোধে সহায়ক।
৩. বাংলাদেশে ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী শিশু–কিশোরেরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। তাই টিকার মাধ্যমে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি।
দেশে টিকাদান কর্মসূচি
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ২০২৫ সালের ১২ অক্টোবর থেকে জাতীয় টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে। এ কর্মসূচিতে ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী প্রায় পাঁচ কোটি শিশু-কিশোরকে বিনা মূল্যে এক ডোজ টিভিসি টিকা দেওয়া হচ্ছে। এই টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বীকৃত ও সুপারিশকৃত, যা এর নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করে। এটা কোনো ট্রায়াল ভ্যাকসিন নয়।
কাদের জন্য বেশি প্রয়োজন
৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী সব শিশু-কিশোরের জন্য এই টিকা বেশি প্রয়োজন। তারা এই ক্যাম্পেইনের আওতায় টিকা গ্রহণ করবে। এ ছাড়া ১৫ বছরের বেশি বয়সী যে কেউ চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে নিজ উদ্যোগে টিকা নিতে পারেন।
কারা নিতে পারবে না
-
যাদের জ্বর (১০০ ফারেনহাইটের বেশি) আছে।
-
আগে কোনো টিকা নেওয়ার পর মারাত্মক অ্যালার্জির ইতিহাস থাকলে।
-
অন্তঃসত্ত্বা বা স্তন্যদানকারী মা।
-
৯ মাসের কম বয়সী শিশু।
সতর্কতা
অনেক অভিভাবকই এই টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং এর কার্যকারিতা নিয়ে ভয় পাচ্ছেন। তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বারবার আশ্বস্ত করেছেন, এই টিকা পুরোপুরি নিরাপদ এবং বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি শিশু এটি গ্রহণ করেছে। টিকার কোনো গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই এবং এটি শিশুর গর্ভকালীন জটিলতা বা প্রজননক্ষমতায় কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে না।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
টাইফয়েড টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সাধারণত খুবই হালকা ও সাময়িক। যেমন টিকা দেওয়ার স্থানে সামান্য ব্যথা, লাল হওয়া বা ফুলে যাওয়া। অল্প জ্বর, মাথাব্যথা, ক্লান্তি ভাব। এসব মৃদু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অল্প সময়ের মধ্যেই আপনাআপনি ঠিক হয়ে যায়।