বৃহস্পতিবার   ১৩ নভেম্বর ২০২৫ || ২৮ কার্তিক ১৪৩২

জাগ্রত জয়পুরহাট

প্রকাশিত : ১৭:৪৭, ১৬ আগস্ট ২০২৫

বেকারদের স্বপ্ন ভেঙে দিল ভুয়া এনজিও, ৬ মাসে উধাও ৬০ লাখ

বেকারদের স্বপ্ন ভেঙে দিল ভুয়া এনজিও, ৬ মাসে উধাও ৬০ লাখ
সংগৃহীত

চাকরি পাওয়ার আশায় একের পর এক বেকার তরুণ-তরুণী ৩০ হাজার টাকা করে জামানত জমা দিয়েছিলেন। প্রতিশ্রুতি ছিল মাসে ৪০ হাজার টাকা বেতনের চাকরি, সঙ্গে থাকা-খাওয়া ও অন্যান্য সুযোগ। কিন্তু ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও চাকরি তো মেলেনি, বরং এখন ‘সমাধান ফাউন্ডেশন’ নামের সেই এনজিওর কোনো অস্তিত্বই নেই।

ভুয়া এই প্রতিষ্ঠানের ফাঁদে পড়ে জয়পুরহাট ও বগুড়ার অন্তত ৫০০ জন তরুণ চাকরিপ্রত্যাশী প্রায় ৬০ লাখ টাকা হারিয়েছেন।

ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বগুড়ার নামাজগড় এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে ‘সমাধান ফাউন্ডেশন’ নামের একটি সংগঠন কয়েক মাস ধরে কার্যক্রম চালায়। নিজেদের উন্নয়নমূলক এনজিও হিসেবে পরিচয় দিয়ে প্রচার চালায়, তারা দেশের বিভিন্ন জেলায় ফুড প্রোডাক্ট, সুপারশপ, রিসোর্ট, ইটভাটা ও পানির ফ্যাক্টরি চালু করবে। এসব প্রকল্পে বিপুল জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে।

তাদের দাবি অনুযায়ী, মাসিক ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা বেতনের চাকরিতে নিয়োগ পেতে হলে প্রার্থীদের ৩০ হাজার টাকা করে জামানত জমা দিতে হবে, যা চাকরির কিছুদিন পর ফেরত দেওয়া হবে।

এই প্রলোভনে পড়ে জয়পুরহাট জেলার ১৯৭ জন এবং বগুড়ার প্রায় ৩০০ জন তরুণ-তরুণী জামানতের টাকা জমা দেন। কিন্তু ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও কেউ চাকরি পাননি। বরং এখন প্রতিষ্ঠানটির অফিসই আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

কান্নাজড়ানো কণ্ঠে সাইফুলের গল্প

জয়পুরহাটের কালাই পৌর শহরের আঁওড়া মহল্লার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এক বন্ধুর মাধ্যমে ‘সমাধান ফাউন্ডেশন’-এ যাই। অফিসে গিয়ে দেখি, কয়েকজন নিজেকে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে নানা ধরনের চাকরির অফার দিচ্ছে। আমি বিশ্বাস করে ৩০ হাজার টাকা দিই। পরে আমার মাধ্যমে আরও ২৫ জনও টাকা জমা দেন। এখন তারাও আমার কাছে চাপ দিচ্ছে।’

বগুড়ার মালতিনগরের বাসিন্দা নাফিউর রহমান জানান, তিনিও একইভাবে প্রতারিত হয়েছেন।‘আমি চেয়ারম্যান খন্দকার মেহেদী হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে বগুড়া আমলী আদালতে মামলা করেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘সমাধান ফাউন্ডেশন শুধু জয়পুরহাট বা বগুড়ায় নয়, দেশের বিভিন্ন জেলায় এইভাবে প্রতারণা চালিয়েছে। ঢাকা উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরে থাকা ঠিকানা ব্যবহার করে মূল প্রতারক ঢাকায় বসে সব নিয়ন্ত্রণ করতেন।’

প্রশাসনের বক্তব্য

বগুড়া সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াজেদ আলী বলেন, ‘আমাদের তালিকায় ‘সমাধান ফাউন্ডেশন’ নামে কোনো এনজিও নেই। এখনো কেউ সরাসরি অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

প্রতারিতরা জানিয়েছেন, এই ধরনের প্রতারণা যেন আর কেউ করতে না পারে, সে জন্য প্রশাসনকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। অনেকে জানিয়েছেন, বিষয়টি সামাজিকভাবে ও আর্থিকভাবে তাদের ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এখন তারা অর্থ ফেরত পেতে এবং দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন।

সর্বশেষ

শিরোনাম