সোমবার   ২৭ অক্টোবর ২০২৫ || ১১ কার্তিক ১৪৩২

জাগ্রত জয়পুরহাট

প্রকাশিত : ১০:২১, ২৭ অক্টোবর ২০২৫

অতিরিক্ত প্রোটিন খেলে কী সমস্যা হয়

অতিরিক্ত প্রোটিন খেলে কী সমস্যা হয়
সংগৃহীত

আজকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঢুকলেই প্রোটিন নিয়ে নানা আলোচনা চোখে পড়ে। অনেকেই বেশি বেশি প্রোটিন খাওয়ার পরামর্শ দেন। প্রোটিন শেক বা সাপ্লিমেন্টের বিজ্ঞাপনও দেখা যায় সর্বত্র। এমনকি অনেক খাদ্য প্রস্তুতকারকও তাদের পণ্যে ‘হাই প্রোটিন’ লেবেল লাগিয়ে বিক্রি বাড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু এই অতিরিক্ত প্রোটিন কি সত্যিই আমাদের কোনো উপকারে আসে? কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাণীজ উৎস থেকে অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণ করলে অকালমৃত্যুর ঝুঁকি বাড়তে পারে।

আমাদের কতটা প্রোটিন প্রয়োজন

প্রোটিন আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এটি আমাদের পেশি গঠন এবং এনজাইম ও হরমোন উৎপাদনে সহায়ক। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতেও ভূমিকা রাখে। সবচেয়ে বড় কথা, প্রোটিন আমাদের শক্তি জোগায়।

অস্ট্রেলিয়ার স্বাস্থ্য নির্দেশিকা অনুযায়ী—

  • একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের প্রতিদিন তাঁর প্রতি কেজি ওজনের জন্য শূন্য দশমিক ৮৪ গ্রাম প্রোটিন খেতে হয়।

  • নারীদের জন্য এই পরিমাণ প্রতি কেজি ওজনের জন্য শূন্য দশমিক ৭৫ গ্রাম।

  • অর্থাৎ ৯০ কেজি ওজনের একজন পুরুষের দৈনিক প্রায় ৭৬ গ্রাম প্রোটিন প্রয়োজন।

  • আর ৭০ কেজি ওজনের একজন নারীর প্রয়োজন প্রায় ৫৩ গ্রাম।

বেশির ভাগ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি তাঁদের দৈনন্দিন খাবার থেকেই এই পরিমাণ প্রোটিন পেয়ে যান। তবে যাঁরা ভারোত্তোলন বা রেজিস্ট্যান্স ট্রেনিং করে পেশি বানাতে চান, তাঁদের জন্য প্রোটিনের চাহিদা কিছুটা বেশি। তাঁরা প্রতিদিন প্রতি কেজি ওজনের জন্য ১ দশমিক ৬ গ্রাম পর্যন্ত প্রোটিন খেতে পারেন। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, এর চেয়ে বেশি প্রোটিন খেলে পেশি গঠনে অতিরিক্ত কোনো সুবিধা মেলে না।

অতিরিক্ত প্রোটিন খেলে কী হয়

অনেকে ভাবেন, অতিরিক্ত প্রোটিন খেলেও তা হয়তো শরীর থেকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বেরিয়ে যায়। এই ধারণা পুরোপুরি ঠিক নয়। অতিরিক্ত প্রোটিন শরীরেই থেকে যায় এবং এর কিছু প্রভাব শরীরে পড়ে।

আমরা যখন প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ক্যালরি গ্রহণ করি, তখন আমাদের শরীর সেই অতিরিক্ত অংশকে চর্বি হিসেবে জমা রাখে। এর ফলে—

  • ওজন বাড়তে পারে।

  • যাঁদের কিডনির দীর্ঘমেয়াদি রোগ আছে, তাঁদের জন্য অতিরিক্ত প্রোটিন হতে পারে খুব ক্ষতিকর।

  • কিডনির ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে।

  • এ ছাড়া ‘প্রোটিন পয়জনিং’ নামে একটি বিরল, কিন্তু মারাত্মক পরিস্থিতিও তৈরি হতে পারে। যখন কোনো ব্যক্তি প্রচুর প্রোটিন খান, কিন্তু পর্যাপ্ত ফ্যাট বা কার্বোহাইড্রেট খান না, তখনই এটি ঘটে।

প্রোটিনের উৎস বেশি গুরুত্বপূর্ণ

আপনি কত গ্রাম প্রোটিন খাচ্ছেন, তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো এর উৎস কী। প্রোটিনের উৎস মূলত দুই ধরনের—প্রাণীজ ও উদ্ভিজ্জ। ডিম, দুধ, মাংস বা মাছ হলো প্রাণীজ প্রোটিন। কারণ, এসব প্রাণী থেকে পাওয়া যায়। আর ডাল, মটরশুঁটির মতো বিভিন্ন শস্য উদ্ভিজ্জ প্রোটিন।

প্রাণীজ প্রোটিনের ঝুঁকি

  • গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাণীজ উৎস থেকে অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণ করলে অকালমৃত্যুর ঝুঁকি বাড়তে পারে।

  • বিশেষ করে ক্যানসারে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে।

  • পাশাপাশি টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও বাড়ায়।

  • প্রাণীজ প্রোটিনের অনেক উৎসে প্রচুর স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। এ ধরনের ফ্যাট হৃদ্‌রোগের ঝুঁকিও বাড়ায়।

উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের সুবিধা

  • ক্যানসার ও টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।

  • রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখে।

  • প্রচুর ডায়েটারি ফাইবার বা খাদ্য–আঁশও পাওয়া যায়, যা আমাদের অন্ত্র সুস্থ রাখে।

সুতরাং শুধু প্রোটিনের পরিমাণের কথা না ভেবে এর উৎসে বেশি মনোযোগ দেওয়া জরুরি। প্রাণীজ ও উদ্ভিজ প্রোটিনের মধ্যেই ভারসাম্য রাখা উচিত। প্রোটিন, ফ্যাট ও কার্বোহাইড্রেট—এই তিন উপাদান মিলেই আমাদের শরীর সুস্থ থাকে। সুস্বাস্থ্যের জন্য ভিটামিন ও খনিজের পাশাপাশি এসবেরও সঠিক অনুপাত প্রয়োজন।

সূত্র: প্রথম আলো

সর্বশেষ

শিরোনাম