জরুরি প্রয়োজনে খরচ, কী প্রস্তুতি থাকা দরকার
জরুরি প্রয়োজনে যেকোনো সময় মানুষের টাকার প্রয়োজন হতে পারে। এ নিয়ে কারও কোনো আপত্তি থাকতে পারে না। এটাই নির্জলা বাস্তবতা। কিন্তু সমস্যা হলো দেশের অনেক মানুষ এই জরুরি পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে কোনো সঞ্চয়ের পরিকল্পনা করেন না। পরিস্থিতি মোকাবিলায় কোনো পরিকল্পনাও থাকে না। তাই হঠাৎই যখন এমন বিশেষ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তখন মানুষ খেই হারিয়ে ফেলেন।
বিশেষ পরিস্থিতি কী? ধরা যাক, পরিবারের কোনো সদস্য হঠাৎই দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন কিংবা কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লেন। চিকিৎসার জন্য ভালো পরিমাণের টাকার প্রয়োজন হয়। আবার পরিবারের কোনো সদস্য বিদেশে পড়াশোনা করতে পারেন, তখন এক ধাক্কায় অনেক টাকার প্রয়োজন হয়। আবার এমন হতে পারে, আপনি ব্যবসা করতে চাচ্ছেন, তখন হঠাৎ একটা বিনিয়োগের সুযোগ চলে এল। ওই সময় হাতে টাকা থাকলে সেই বিনিয়োগটা করা যায়। এভাবেই জরুরি প্রয়োজনে টাকা খরচের বাস্তবতা তৈরি হয়। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় একটু পরিকল্পনা করলেই হয়।
এবার দেখা যাক, কী ধরনের প্রস্তুতি নিতে হবে
১. মাসিক সঞ্চয়
মাসিক আয়ের একটি অংশ শুরুতেই সরিয়ে রাখুন। বেতন অল্প হলে এ ধরনের সঞ্চয় প্রকল্প খুব কার্যকর। ব্যাংকে ডিপিএস করতে পারেন। কিংবা কিছু টাকা জমলে সঞ্চয়পত্র কিনে রাখতে পারেন।
২. আয়-ব্যয়ের হিসাব
সঞ্চয়ের অন্যতম শর্ত হলো নিজের আয়-ব্যয়ের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব রাখা। যেমন ব্যাংক হিসাবে কত টাকা আছে, তার সুদ কত আসছে, সে বিষয়ে খেয়াল রাখা দরকার। আবার কোথায় কত টাকা খরচ হচ্ছে, এর সঠিক হিসাব রাখা। সংসারের অপ্রয়োজনীয় খরচ হচ্ছে, তা নজরে রাখতে হবে।
৩. সন্তানের উচ্চশিক্ষার খরচ
উচ্চমাধ্যমিক পাসের সন্তানের উচ্চশিক্ষার খরচ নিয়ে অনেক পরিবার বিপাকে পড়ে যান। বহু পরিবারের সন্তান অর্থের অভাবে নিজের পছন্দমতো বিষয়ে বা পছন্দ মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারেন না। সেই সময়ে তার পড়াশোনার জন্য মোটা অঙ্কের টাকার দরকার হতে পারে। সেই সময় খেয়াল করে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করুন, যাতে প্রয়োজনের সময়ে হাতে টাকা পাওয়া যায়। এর জন্য কার্যকর মাধ্যম হতে পারে দেশের প্রচলিত শিক্ষাবিমা। চাইলে অনেকে সঞ্চয়পত্রও করতে পারেন, যদি একসঙ্গে বড় অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করার সক্ষমতা থাকে।
৪. চিকিৎসার খরচ
হঠাৎ পরিবারের কেউ গুরুতর অসুস্থ হতে পারেন। তাঁদের চিকিৎসার জন্য মোটা অঙ্কের টাকার দরকার হয়। হঠাৎ বিপাকে পড়া এমন পরিবারের প্রধান অবলম্বন হতে পারে স্বাস্থ্যবিমা। এ ছাড়া অনেক পরিবারের সদস্যের ক্যানসারসহ বিভিন্ন রোগের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। এমন জরুরি খরচও বিমা থেকে করা যায়। এ জন্য প্রয়োজন কয়েক বছর আগে থেকে বিমা পরিকল্পনা করা।
৫. ভরসা যখন ক্রেডিট কার্ড
বিপদের সময় ক্রেডিট কার্ডও ভরসা হয়ে ওঠে। তাই প্রয়োজন মতো ক্রেডিট কার্ড রাখুন। এ ক্ষেত্রে কোন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড নিলে সুদের অঙ্ক কম হবে, তা বুঝে নিতে হবে। অনেক সময় আচমকা টাকার দরকার হলে ক্রেডিট কার্ড কাজে লাগতে পারে। তবে সময় মতো সেই ধার শোধ করা জরুরি। একই সঙ্গে দেশের এমএফএস সেবা বিকাশও এখন অ্যাপ থেকে গ্রাহকদের ঋণ দিচ্ছে। ব্যাংকঋণের সুদের হারেই এই সুদ নেওয়া হয়। ফলে স্বল্পকালীন ছোট খরচ মেটানোর জন্য এই ঋণ হতে পারে খুবই কার্যকর মাধ্যম। ঋণের অঙ্ক নির্ভর করে গ্রাহকের লেনদেনের অঙ্কের ওপর।
সঞ্চয়ের কার্যকর তিন ধরন
জরুরি পরিস্থিতির জন্য কার্যকর সঞ্চয় পরিকল্পনায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো সময়ভিত্তিক সঞ্চয়ের ভারসাম্য তৈরি করা। অর্থাৎ সব টাকা এক জায়গায় না রেখে আয় ও প্রয়োজন অনুযায়ী স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি—এই তিন ধরনের সঞ্চয়ের ব্যবস্থা রাখা।
হঠাৎ চিকিৎসা, ভ্রমণ বা অপ্রত্যাশিত খরচের জন্য নগদ ব্যবহারযোগ্য সঞ্চয় রাখুন। এটি হতে পারে ব্যাংক হিসাব, মোবাইল ওয়ালেট বা সঞ্চয়পত্র। সাধারণত তিন থেকে ছয় মাসের খরচের সমপরিমাণ অর্থ এখানে রাখা নিরাপদ।
যেসব লক্ষ্য দুই থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে পূরণ করতে চান। যেমন সন্তানের স্কুল-কলেজ ফি, বাড়ি সংস্কার ইত্যাদি। এ জন্য মধ্যমেয়াদি সঞ্চয় দরকার। এ জন্য ব্যাংকে এফডিআই বা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা যেতে পারে।
অবসরজীবন, সন্তানের উচ্চশিক্ষা বা বড় সম্পদ গঠনের জন্য দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ জরুরি। এটি হতে পারে সরকারঘোষিত পেনশন প্রকল্প, জীবনবিমা বা দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয়পত্র। এতে মূলধন অক্ষুণ্ন রেখে নিয়মিত আয় পাওয়া সম্ভব।
সূত্র: প্রথম আলো














