শনিবার   ০৮ নভেম্বর ২০২৫ || ২৩ কার্তিক ১৪৩২

জাগ্রত জয়পুরহাট

প্রকাশিত : ১১:১৮, ৮ নভেম্বর ২০২৫

প্রতিদিন ডিম খাওয়া শরীরের জন্য উপকারী নাকি ক্ষতিকর?

প্রতিদিন ডিম খাওয়া শরীরের জন্য উপকারী নাকি ক্ষতিকর?
সংগৃহীত

বহুমুখী, পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু – ডিম হলো পুষ্টির এক অফুরন্ত ভান্ডার, যা পরিমিত পরিমাণে প্রতিদিন খেলে আপনার শরীরের জন্য আশ্চর্যজনক কাজ করতে পারে। একসময় বলা হতো কোলেস্টেরল বৃদ্ধির জন্য ডিম দায়ী। তবে সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে ভিন্ন কথা।

পেশি তৈরিতে সহায়ক

ডিম হলো সম্পূর্ণ প্রোটিনের উৎস। এতে পেশি ঠিক ও বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় ৯টি অ্যামিনো অ্যাসিডই থাকে। ‘পোল্ট্রি সাইন্স’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা অনুসারে, নিয়মিত ডিম খেলে পেশীর ভর বৃদ্ধি পায়, বিশেষত যদি আপনি ব্যায়াম করেন। এটি সহজে হজম হয় এবং ব্যায়ামের পর দ্রুত শক্তি জোগাতে সহায়তা করে। সকালে দুটি সেদ্ধ ডিম খেলে তা সারাদিন শক্তি জোগায় এবং আপনার মেটাবলিক স্বাস্থ্যকে উন্নত করে।

হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নত করে

বহু বছর ধরে ডিমকে কোলেস্টেরলের কারণে সন্দেহের চোখে দেখা হলেও, নতুন গবেষণা বলছে পরিমিত ডিম হৃদস্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে। ২০২৩ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ডিম খেলে এইচডিএল (ভালো কোলেস্টেরল) বাড়ে এবং বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। ডিমের মধ্যে থাকা কোলিন এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে রেখে কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যকে সহায়তা করে। পুষ্টিবিদদের মতে, সুস্থ প্রাপ্তবয়স্করা প্রতিদিন এক থেকে দুটি ডিম নিরাপদে খেতে পারেন।

মস্তিষ্ক ও চোখ থাকে আরও সজাগ

ডিম কোলিনে ভরপুর—যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা, স্মৃতিশক্তি এবং মেজাজ নিয়ন্ত্রণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি পুষ্টি উপাদান। এটি নিউরোট্রান্সমিটার উৎপাদনে সাহায্য করে, যা মস্তিষ্ককে সক্রিয় ও মনোযোগী রাখে। এছাড়াও, ডিমের কুসুমে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লুটেইন এবং জিয়াজ্যানথিন চোখকে নীল আলোর ক্ষতি এবং বয়সজনিত দৃষ্টিশক্তি হ্রাস থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।

ওজন নিয়ন্ত্রণে সুবিধা

আপনি যদি ওজন কমাতে বা বজায় রাখতে চান, তবে ডিম একটি বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। ডিমে থাকা উচ্চ প্রোটিন আপনাকে দীর্ঘ সময় পেট ভরা অনুভব করায় এবং অপ্রয়োজনীয় খাবার গ্রহণে বিরত থাকতে সাহায্য করে। ২০০৯ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নাস্তায় ডিম খান, তারা সারা দিনে কম ক্যালোরি গ্রহণ করেন। তবে মনে রাখবেন, এটি আপনি কীভাবে রান্না করছেন তার উপর নির্ভর করে। ভাজার বদলে সেদ্ধ, পোচ বা হালকা ভাজা ডিম বেছে নেওয়া সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর।

ত্বক ও চুল দেখায় স্বাস্থ্যকর

ডিম শুধু শরীরের জন্যই নয়, আপনার বাহ্যিক সৌন্দর্যও বাড়াতে পারে। এতে বায়োটিন, ভিটামিন ডি, এবং অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে যা ত্বক, চুল ও নখের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়তা করে। বায়োটিন চুলকে শক্তিশালী করে ও ভাঙা কমায়, আর প্রোটিন কোলাজেন উৎপাদনে সহায়তা করে ত্বককে মসৃণ ও কোমল করে তোলে।

দিনে কতগুলো ডিম খাওয়া নিরাপদ?

পুষ্টিবিদরা মনে করেন, সুস্থ প্রাপ্তবয়স্করা প্রতিদিন দুই থেকে তিনটি ডিম নিরাপদে খেতে পারেন। তবে যাদের উচ্চ কোলেস্টেরল বা ওজনের সমস্যা আছে, তাদের ক্ষেত্রে দুই বা তিনটি ডিমের সাদা অংশ এবং একটি কুসুম খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। মনে রাখা জরুরি, ভিটামিন এ, ডি, ই এবং বি১২ সহ বেশিরভাগ পুষ্টি উপাদান কুসুমেই থাকে।

ডিম খাওয়ার সেরা সময় হলো সকালবেলা বা ওয়ার্কআউটের পর, কারণ এর উচ্চ প্রোটিন রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে এবং পেশি ঠিক করতে সাহায্য করে। সঠিক পরিমাণে ও সঠিক উপায়ে তৈরি করে খেলে ডিম আপনার দৈনিক খাদ্যতালিকায় অন্যতম কার্যকরী সংযোজন হতে পারে।

সূত্র: ঢাকা পোষ্ট

সর্বশেষ

শিরোনাম