বৃহস্পতিবার   ১০ অক্টোবর ২০২৪ || ২৪ আশ্বিন ১৪৩১

জাগ্রত জয়পুরহাট

প্রকাশিত : ১১:৪৭, ৩০ জুলাই ২০২৪

জয়পুরহাটে মুষ্টি চালে গড়া হাঁসের খামারে ভাগ্য বদল

জয়পুরহাটে মুষ্টি চালে গড়া হাঁসের খামারে ভাগ্য বদল
সংগৃহীত

ইচ্ছাশক্তি, আত্মবিশ্বাস ও শ্রম দিয়ে যেমন একজন পুরুষ ভাগ্য বদলাতে পারেন, তেমনি একজন নারীও হতে পারেন স্বাবলম্বী। হয়ে উঠতে পারেন সফল একজন উদ্যোক্তা। তারই অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত গড়েছেন জয়পুরহাটের কালাই পৌরশহরের আওড়া মহল্লার মর্জিনা বেগম। হাঁস পালন করে স্বামীর সংসারে হয়ে উঠেছেন স্বাবলম্বী ও আত্মনির্ভরশীল।

জানা যায়, প্রায় এক যুগ আগে মুষ্টির চাল সংগ্রহ করে ৪০টি হাঁস দিয়ে খামার শুরু করেন মর্জিনা। বর্তমানে তাঁর খামারে ৩ হাজারের বেশি হাঁস দাঁড়িয়েছে। এক সময় কখনও আধা পেট খেয়ে, না খেয়ে দিন পার করত মর্জিনার পরিবার। এখন হাঁস পালন করে নিজের পরিবারের ভাগ্য বদলের পাশাপাশি এলাকার অন্য নারীদেরও স্বাবলম্বী হতে সাহস জোগাচ্ছেন।

মর্জিনা বেগম জানান, জন্মের পর পরই তাঁর বাবা মারা যান। দারিদ্র্যের কারণে অল্প বয়সে একই মহল্লার ভ্যানচালক আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তখন তাঁর স্বামী অন্যের ভ্যান ভাড়ায় চালাতেন। স্বামীর ভ্যান চালানোর টাকায় মালিকের ভাড়া পরিশোধের পর যা থাকত, তা দিয়ে খুব কষ্ট করে খেয়ে, না খেয়ে সংসার চালাতেন। এক পর্যায়ে তাদের সংসার চলার মাঝে যোগ হয় ছেলেমেয়েও। খরচও বেড়ে যায় সংসারের।

 ২০১২ সালের প্রথম দিকে প্রতিদিন ভাতের চাল থেকে এক মুষ্টি করে সরিয়ে রেখে ৬ মাসে মোট এক হাজার ৪০০ টাকার চাল বিক্রি করে স্থানীয় পুনট হাট থেকে ৪০টি হাঁসের বাচ্চা কেনেন। বাচ্চাগুলো বড় হলে সেগুলো বিক্রি করে আবার ছোট ছোট হাঁসের বাচ্চা কিনে লালনপালন করেন। এভাবেই তাঁর খামারে প্রতিবছর হাঁসের সংখ্যা বাড়তে থাকে। সেই থেকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। বর্তমান বাজার মূল্য অনুযায়ী, তাঁর খামারের হাঁসের দাম প্রায় ১৫ লাখ টাকা। মাত্র ১২ বছরে ৪০টি হাঁস তাঁর সংসারে ভাগ্য বদলে দিয়েছে। এখন তাঁর স্বামীকে আর ভ্যান চালাতে হয় না। ছেলেমেয়েও পড়াশোনা করছে।

মর্জিনা বলেন, শুরুতে তিনি দেশি জাতের হাঁস পালতেন। পরে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের পরামর্শে বিদেশি খাকি ক্যামবেল জাতের হাঁস লালনপালন করেন। এই হাঁসগুলো তিন-চার মাসেই পূর্ণ বয়স হয়, রোগবালাই কম এবং জলবায়ুসহিষ্ণু। পূর্ণবয়স্ক একটি হাঁসের ওজন প্রায় দেড় থেকে দুই কেজি হয়। প্রতি কেজি হাঁস বিক্রি করে আয় হয় ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। হাঁস পালন করে সব মিলিয়ে সুখে সংসার চলছে।

মর্জিনার স্বামী আনোয়ার হোসেন জানান, এক সময় অভাবের তাড়নায় সংসার চালাতে পারতেন না। অভাব-অনটন ছিল নিত্যসঙ্গী। সবসময় হতাশায় ভুগতেন। আজ তাঁর স্ত্রীর জন্য সংসারে অনেক উন্নতি হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে তাদের নিজস্ব জায়গায় মুরগির খামার গড়বেন। প্রাথমিকভাবে ২ হাজার মুরগি পালনের সেড তৈরি করা হবে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. হাসান আলী বলেন, কালাই উপজেলায় হাঁসের প্রায় ৬০টি খামার রয়েছে। খাকি ক্যামবেল জাতের হাঁস সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং পুষ্টিগুণের দিক দিয়েও অনেক এগিয়ে। দিন দিন এ জাতের হাঁসের চাহিদা বাড়ছে। রোগবালাই কম বলে ঝুঁকি কম এবং অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয় না বলে এ হাঁসের মাংস নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত।

সূত্র: সমকাল

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ