মতলব উত্তরের চারটি চর যেন করলার রাজ্য

মেঘনাপারের চরগুলো বালুময়। ধানসহ অন্যান্য ফসল তেমন হয় না সেখানে। ধানের আবাদ করে লোকসান গুনতে হয়েছে কৃষকদের। এটি কয়েক বছর আগের কথা। এখন সেই দৃশ্যপট পাল্টেছে। দু–তিন বছর ধরে সেখানে ব্যাপক হারে করলার চাষ হচ্ছে।
চলতি বর্ষা মৌসুমেও ওই সব চরে চাষ হয়েছে বিষমুক্ত করলার। ফলন হয়েছে বাম্পার। চরগুলো হয়ে উঠেছে করলার রাজ্য। করলা বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন স্থানীয় কৃষকেরা। তাঁদের সংসারে এসেছে সচ্ছলতা। মুখে হাসি, মনে স্বস্তি।
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় মেঘনা নদীর পশ্চিম পাশে ওই চরগুলোর অবস্থান। উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের নথি অনুসারে সেগুলো চর ওয়েস্টার, চর উমেদ, বাহেরচর ও বোরোচর নামে পরিচিত। উপজেলার এখলাছপুর ও মোহনপুর ইউনিয়নে ওই চারটি চরের অবস্থান।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্র জানায়, গত শীত মৌসুম ও চলতি বর্ষা মৌসুমে ওই চারটি চরে শতাধিক হেক্টর জমিতে করলার আবাদ হয়। চলতি জুলাই মাসেও সেখানে প্রায় ৫০ হেক্টর জমিতে করলার আবাদ হয়। এ মৌসুমে করলার ফলন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয় ৫৮৮ মেট্রিক টন। প্রতি হেক্টর জমিতে গড়ে করলার ফলন হচ্ছে ১৪ মেট্রিক টন করে।
গত বৃহস্পতিবার ওই চারটি চর এলাকায় দেখা যায়, বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে করলার খেত। বাঁশের মাচায় করলাগাছগুলো দোল খাচ্ছে বাতাসের ঢেউয়ে। করলার তেতো ঘ্রাণে ছেয়ে আছে গোটা চরাঞ্চল। পাতার ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে সবুজ করলা। কৃষকদের কেউ কেউ করলাখেতের পরিচর্যা করছেন। কেউ বিক্রির জন্য খেত থেকে তাজা করলা তুলছেন। কেউ আবার বিক্রির জন্য খেতের পাশে স্তূপ করে রাখছেন। গোটা চর এলাকাই হয়ে উঠেছে করলাময়।
বোরোচর এলাকার সিরাজ মিয়াজী, জয়নাল আবেদীন, সেরাজুল ইসলাম ও তোফাজ্জল হোসেনসহ আরও অন্তত দশজন কৃষক বলেন, চরের মাটি মূলত বালুময়। আগে সেখানে বোরো, ইরি ও পাইজাম ধান চাষ করতেন। ফলন ভালো না হওয়ায় প্রতি মৌসুমে বড় লোকসান গুনতেন। দু-তিন বছর ধরে সেখানে করলাসহ অন্যান্য সবজি চাষ করছেন। চরে বর্ষায় পলি জমা হওয়ায় সবজির ভালো ফলন হচ্ছে। বেশি চাষ হচ্ছে করলার। আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার করলার বাম্পার ফলন হয়েছে। উৎপাদন খরচ কম ও বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় চরের অধিকাংশ কৃষক করলা চাষে ঝুঁকছেন।
কৃষকেরা আরও বলেন, প্রতি ৫ কেজি করলা উৎপাদনে গড়ে খরচ পড়ে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা। পাঁচ কেজি করলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৭৫ টাকায়। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে কৃষকেরা বিক্রি করছেন উদ্বৃত্ত করলা। লাভ ভালো হওয়ায় তাঁরা খুশি। চরের এই বিষমুক্ত করলার চাহিদা ভালো। স্থানীয় বাজার ছাড়াও সেগুলো বিক্রি হচ্ছে ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফয়সাল মোহাম্মদ আলী জানান, করলা চাষে কৃষকদের নানাভাবে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে কৃষি বিভাগ থেকে। চরের মাটি বালুময় হলেও পলি জমার কারণে উর্বর। সার ও কীটনাশক দিতে হচ্ছে না। উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় কৃষকেরা অধিক লাভবান হচ্ছেন।
সূত্র: প্রথম আলো