মঙ্গলবার   ১৪ অক্টোবর ২০২৫ || ২৮ আশ্বিন ১৪৩২

জাগ্রত জয়পুরহাট

প্রকাশিত : ১২:৩৩, ১৩ অক্টোবর ২০২৫

নারী বাঁকা পাঁজর থেকে সৃষ্টি—এ কথার প্রকৃত অর্থ কী?

নারী বাঁকা পাঁজর থেকে সৃষ্টি—এ কথার প্রকৃত অর্থ কী?
সংগৃহীত

নারীর সৃষ্টি নিয়ে অনেকেই  একটি হাদিসের উদ্ধৃতি দেন। যেখানে বলা হয়েছে— ‘নারীকে সৃষ্টি করা হয়েছে বাঁকা পাঁজর থেকে।’ কেউ কেউ মনে করেন, এটি নারীর প্রতি একধরনের অবমূল্যায়ন। কিন্তু আসলেই কি তাই? প্রকৃতপক্ষে এই হাদিসটি অবমাননা নয়, বরং দয়ার বার্তা। নবী করিম (সা.) নারী সম্পর্কে পুরুষদের উদ্দেশে এক চমৎকার শিক্ষা দিয়েছেন—‘নারীদের প্রতি সদয় আচরণ করো।’

 হাদিসের প্রকৃত শিক্ষা

আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন— আমি তোমাদের নারীদের বিষয়ে উপদেশ দিচ্ছি। তাদের প্রতি সদয় হও, কারণ নারীকে সৃষ্টি করা হয়েছে পাঁজর থেকে। আর পাঁজরের সবচেয়ে বাঁকা অংশ হলো এর উপরের দিক। যদি সেটাকে সোজা করতে চাও, তবে তা ভেঙে যাবে। আর যেমন আছে তেমনি রাখলে তা বাঁকাই থাকবে। সুতরাং নারীদের প্রতি সদয় আচরণ করো।
(সহিহ বুখারি ও মুসলিম)

এই বাণীটি শুরু ও শেষ দুটোই একই উপদেশে— নারীদের প্রতি সদয় হও। এটি অপমান নয়, বরং করুণা ও সহানুভূতির নির্দেশনা।

বাঁকা পাঁজরের উপমা কেন?

নবী (সা.) নারীদের ‘বাঁকা পাঁজর থেকে সৃষ্টি’ বলে বোঝাতে চেয়েছেন—তাদের স্বভাব পুরুষের তুলনায় কোমল ও ভিন্ন। পাঁজর যেমন প্রাকৃতিকভাবে বাঁকা, সেটাই তার পূর্ণতা। কেউ যদি তা জোর করে সোজা করতে চায়, তবে সেটি ভেঙে যাবে। একইভাবে, নারীর স্বভাবকে জোর করে বদলাতে গেলে সম্পর্ক ভেঙে যায়।অর্থাৎ, নারীর কোমলতা ও ভিন্ন স্বভাবই তার সৌন্দর্য ও পূর্ণতা।

 মহানবীর দৃষ্টিতে নারী

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, নারীরা পুরুষের সহচর।  (সুনান আবু দাউদ) তিনি নারীদের দুর্বল নয়, বরং সংবেদনশীল ও আবেগপ্রবণ সত্তা হিসেবে বর্ণনা করেছেন—তাদের যত্ন ও কোমল ব্যবহারের প্রয়োজন।

আরেক হাদিসে তিনি বলেছেন, নারীদের সঙ্গে কাঁচের পাত্রের মতো আচরণ করো। (সহিহ বুখারি) অর্থাৎ, নারীরা নাজুক, তাই তাদের সঙ্গে আচরণে সতর্কতা ও মমতা থাকা চাই।

পারস্পরিক পরিপূরক সম্পর্ক

ইসলাম পুরুষ ও নারীকে প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, বরং ‘পরিপূরক সত্তা’ হিসেবে উপস্থাপন করেছে। পুরুষ রক্ষক, নারী রক্ষণশীল ও লালনকারী। একে অপরের দায়িত্ব ও মর্যাদা ভিন্ন হলেও, উভয়েই সমাজ গঠনের অপরিহার্য অংশ।

যেমন পাঁজর বুকের ভেতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে সুরক্ষা দেয়, তেমনি নারী তার পরিবার ও সন্তানদের ভালোবাসা ও যত্নে আগলে রাখে।

‘বাঁকা পাঁজর’ বলাটা নারীর অপমান নয়—বরং তার স্বাভাবিক কোমলতা ও সংবেদনশীলতার প্রতীক। নবী করিম (সা.) পুরুষদের শিখিয়েছেন, নারীর স্বভাব পরিবর্তন নয়, বরং তাকে বুঝে, শ্রদ্ধা করে ও মমতা দিয়ে পাশে রাখতে হবে।

এটাই ইসলামের ভারসাম্যপূর্ণ ও মানবিক শিক্ষা—যেখানে করুণা, বোঝাপড়া ও সম্মানই নারী-পুরুষ সম্পর্কের মূল ভিত্তি।

সূত্র: ঢাকা পোষ্ট

সর্বশেষ

শিরোনাম