মঙ্গলবার   ৩০ এপ্রিল ২০২৪ || ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

জাগ্রত জয়পুরহাট

প্রকাশিত: ১১:৫২, ১২ এপ্রিল ২০২৪

স্টকহোম সিনড্রোম: মানসিক অসুস্থতা নাকি অপার প্রেম!

স্টকহোম সিনড্রোম: মানসিক অসুস্থতা নাকি অপার প্রেম!
সংগৃহীত

প্রাণীদের মধ্যে সবচেয়ে জটিল হলো মানবদেহ। আর তার চেয়েও জটিল হলো মানুষের মন। প্লাবনের জলের মতো এই মন ধাবিত হতে পারে স্থান-কাল-দিকের তোয়াক্কা না করেই। ভাবুন তো, আপনাকে তুলে নিয়ে গেল কেউ, মুক্তিপণ হিসাবে টাকা চাইলো, টাকা পেয়ে আবার ছেড়েও দিল, কিন্তু আপনার আর ফিরে আসতে ইচ্ছা করছে না। কী হবে তখন?

গত কয়েক যুগে এমনটা বেশ কয়েকবার ঘটেছে বলে জানা যায় যখন কিডন্যাপ হওয়া আর খুব খারাপ লাগেনি। বরং ভিকটিম হয়ে উঠেছিল সহানুভূতিশীল, এমনকি বিশ্বস্তও। মনের এই পরিবর্তিত অবস্থার নামই স্টকহোম সিনড্রোম (Stolkholm Syndrome)। একই অবস্থা ঘটতে পারে স্ত্রী নির্যাতন, শিশু নির্যাতন, এমনকি ধর্ষণের ক্ষেত্রেও! সেগুলোও এই স্টকহোম সিনড্রোমেরই আলাদা প্রকার।

অপরাধীর প্রতি ভিকটিমের সহানুভূতিশীল হয়ে ওঠার এই মানসিক সমস্যার নাম স্টকহোম সিনড্রোম। কীভাবে হল এবার আসি সেই কথায়। ১৯৭৩ সালে যখন চারজনকে অপহরণ করা হয় সুইডেনের স্টকহোমে অবস্থিত একটি ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনায়, তখন পর্যন্ত এর সাধারণ নাম ছিল “Capture bonding syndrome”।

দিনটি ছিল ১৯৭৩ সালের ২৩ অগাস্টের সকাল, স্টকহোমের ব্যাংকটিতে এমন নাটকীয়তার সূত্রপাত হল, যা সারা বিশ্বের খবরের কাগজের প্রথম পাতায় জায়গা করে নিল এবং মনোবিজ্ঞানের জগতে স্টকহোম সিনড্রোম নামের এক নতুন বিস্ময়ের জন্ম দিল।

ব্যাংকে ঢুকে অপরাধীরা তাদের বন্দুক চালিয়ে ঘোষণা করলো যে “The party has just begun”। দুজন ডাকাত তখন পরবর্তী প্রায় ১৩১ ঘন্টার জন্যে চারজনকে জিম্মি করলো, যার মধ্যে তিনজন ছিলো মহিলা এবং একজন পুরুষ। স্টকহোম সিনড্রোম নামটা তখন থেকেই চালু হয় যখন এই চারজন অপহৃত ব্যক্তি মুক্তি পাবার পর অদ্ভুত ব্যবহার করা শুরু করে।

মুক্তি পাবার পর গণমাধ্যমে দেওয়া তাদের সাক্ষাৎকারে বিষয়টি আস্তে আস্তে পরিষ্কার হয়ে ওঠে যে, তারা মানসিকভাবে তাদের অপহরণকারীদের সমর্থন করা শুরু করেছে এবং মনে করছে আইনরক্ষাকারী বাহিনী তাদের আঘাত দেওয়ার চেষ্টা করছে। তারা মনে করতে থাকলো যে, অপরাধীরাই তাদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে।

তারা শুধু অপরাধীদের কোর্টে দোষী হিসেবে চিহ্নিত করতে অস্বীকারই করেনি, বরং তাদের মুক্তির জন্য অর্থ সংগ্রহ করা শুরু করে। এমনকি তাদের মধ্যে একজন মহিলা অপহরণকারীদের একজনের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে যান। স্পষ্টভাবে এই ঘটনাটিতে অপরাধীদের সাথে অপরাধের শিকার ব্যক্তিরা মানসিকভাবে আবদ্ধ হয়ে যায়।

অত্যন্ত চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার পর থেকেই আক্রান্ত ব্যক্তির মনের এই অবস্থাকে স্টকহোম সিনড্রোম বলে ডাকা শুরু হয়। এখন ইতিহাসের সবচেয়ে বিখ্যাত কিছু স্টকহোম সিনড্রোমের গল্প শুনে নেয়া যাক।

প্যাটি হার্স্ট ছিল একজন কোটিপতি প্রকাশকের উত্তরাধিকারী। সে অপহৃত হয়েছিলো সিমবায়োনিজ লিবারেশন আর্মি (SLA) নামের একটা গ্রামীণ গেরিলা দল দ্বারা। কিন্তু ঘটনার দু’মাস পরেই তাকে দেখা যায় অপহরণকারীদের সাথেই স্বতস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করতে একটা ডাকাতিতে।

পুলিশের কাছে ধরা পড়ার পরও সে পারিবারিক পরিচয় গোপন করে এবং নিজেকে একটি মিথ্যা নামে (তানিয়া) পরিচয় দেয়। আদালতে এক পর্যায়ে যখন SLA এর প্রতি তার সহানুভূতির কথা সে প্রকাশ্যে জানায় তখন ৭ বছরের কারাদন্ডের আদেশও তাকে তার অবস্থান থেকে সরাতে পারেনি। পরবর্তীতে মানসিক অসুস্থতার কথা বলে এফ. লি বেইলি নামের একজন উকিল তার মুক্তির ব্যবস্থা করেন।

২০০২ সালে মাত্র ১১ বছর বয়সে স্টন হর্ণব্যাক নামের আরেকজনকে অপহরণ করা হয়েছিল। দুই বছর পর অপহরণকারীর বাসা থেকে যখন তাকে উদ্ধার করা হয়, তখন দেখা যায় অনেক সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সে পালানোর কোনও চেষ্টা করেনি। এমনকি তার কাছে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পর্যন্ত ছিল।

সূত্র: ডেইলি বাংলাদেশ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ