বুধবার   ২৯ অক্টোবর ২০২৫ || ১৩ কার্তিক ১৪৩২

জাগ্রত জয়পুরহাট

প্রকাশিত : ১২:০৪, ২৯ অক্টোবর ২০২৫

আলুর দর পতনে ক্ষতি ১৩ কোটি টাকা

আলুর দর পতনে ক্ষতি ১৩ কোটি টাকা
সংগৃহীত

জয়পুরহাটের আক্কেলপুরের কৃষ্ণকোলা গ্রামের কৃষক আবু বক্কর সিদ্দিক ১০ বিঘা জমিতে ডায়মন্ড ও স্টিক জাতের আলু আবাদ করেছেন। এক হাজার মণ আলু পেয়েছেন। মৌসুমের শুরুতে প্রতিমণ আলু ৪৭০ থেকে ৪৮০ টাকায় বিক্রি করেছেন। ৭৫০ মণ বিক্রি হয়েছে। এতে ৯০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ২৫০ মণ আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করেন। হঠাৎ দরপতনে সেখানেও ২ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে তাঁর। 

একই অবস্থা ব্যবসায়ী হারুনুর রশিদেরও। আলু কেনা থেকে হিমাগারে সংরক্ষণ পর্যন্ত প্রতি কেজিতে ২৩ টাকা খরচ হয়েছিল তাঁর। বর্তমানে বাজারে প্রতিকেজি ৮ থেকে সাড়ে ৮ টাকায় আলু বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজিতে ১৫ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে তাঁকে। এ বছর এক হাজার বস্তা আলু হিমাগারে রেখে ৯ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে তাঁর।
বনিক সমিতির সভাপতি কাজী শফি উদ্দিন জানান, প্রতি মণ আলু বিক্রি করে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা পাওয়া যাচ্ছে। এতে মণ প্রতি ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা লোকসান হচ্ছে। পুরো উপজেলায় এ ক্ষতির পরিমান ১৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক কেজি আলু উৎপাদন করতে কৃষকের ১০ থেকে ১৩ টাকা খরচ হয়েছে। এরপর বস্তা কেনা, পরিবহন ও শ্রমিক খরচ এবং হিমাগারের ভাড়াসহ প্রতিকেজিতে খরচ হয়েছে পড়েছে ২৩ টাকা। সংরক্ষণের পাঁচ মাস পরে এখন বাজারে ৭ থেকে ৮ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হচ্ছে। এতে প্রতিকেজিতে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের ১৫ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। 
কৃষি দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর উপজেলায় ৫ হাজার ৯২০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছে। ভালো দাম পেয়ে এই বছর ৬ হাজার ৬শ হেক্টর জমিতে আবাদ করেন কৃষকেরা। এবারে মোট উৎপাদিত আলুর পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার টন; যা গত বছরের তুলনায় বেশি। 

এদিকে দাম বাড়ার আশায় হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করেছিলেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। হঠাৎ আলুর দর পতনে প্রতিকেজি ৭ থেকে ৮ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। অথচ বিগত বছরগুলোতে ৪০ টাকা পর্যন্ত দরে আলু বিক্রি হয়েছে। 
সরকার আলু কেনার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় হতাশা আরও বেড়েছে কৃষকদের মধ্যে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী মৌসুমে এ ফসল আবাদ করে অর্থ সংকটে পড়ার আশঙ্কা করছেন তারা। 

পড়ে আছে দুই লাখ ২৫ হাজার মণ 
উপজেলায় দীনা কোল্ড স্টোরেজ এবং গোপীনাথপুর হিমাগারে এখনও এক লাখ ৫০ হাজার বস্তা (দুই লাখ ২৫ হাজার মণ) আলু আটকে আছে; যা মোট ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক। প্রতি মণে ৬০০ টাকা লোকসান ধরলে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। হিমাগার থেকে কিছুদিন আগে বের হওয়া আলুর হিসাব করলে লোকসান দ্বিগুণ হবে। আলুর দর পতনের কারণে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা হিমাগার থেকে আলু তোলার সাহস পাচ্ছেন না। এতে বিপাকে পড়েছেন হিমাগার কর্তৃপক্ষ। তারা আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে আলু তুলে নেওয়ার জন্য এলাকায় মাইকিং করেছেন। তাতেও সাড়া মিলছে না। 

বাস্তবায়ন হয়নি সরকারের প্রতিশ্রুতি 
সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন গত ৫ সেপ্টেম্বর আকস্মিক সফরে আক্কেলপুরে আসেন। ওই দিন তিনি সরকারিভাবে আলু কিনে টিসিবির মাধ্যমে বিক্রি হবে বলে আশ্বাস দেন। হিমাগার গেটেও ২২ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি ও রপ্তানির লক্ষ্য অর্জনেও সরকার কাজ করছে বলে জানান। তাঁর আশ্বাসে কৃষকরা আশায় বুক বেঁধেছিলেন। হঠাৎ দর পতনের সে আশাভঙ্গ হয়েছে। 
তিলকপুর ইউনিয়নের কৃষক আবু হাসান বলেন, ‘বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেছিলেন সরকারিভাবে আলু কেনা হবে। সেটি হলে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যেত। তবে একটি আলুও কেনা হয়নি। এদিকে বাজারে দাম কমায় হিমাগার থেকে আলু তুলিনি।’ 

তিলকপুর দীনা কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থাপক লিটন কুমার নাথ বলেন, ‘আলুর দর পতনের প্রভাব হিমাগারেও পড়েছে। কৃষক ও ব্যবসায়ীদের ব্যাপক লোকসান হয়েছে। তারা আলু বের করছেন না। এ দিকে সংরক্ষণের সময় ফুরিয়ে আসছে। মাইকিং ও বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তাগাদা দিচ্ছি। এরপরও ৫৫ শতাংশ আলু পড়ে আছে হিমাগারে।’ 

জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, ‘এ বছর উৎপাদন বেড়েছে, তাই বাজারে সরবরাহও বেশি। সরকারিভাবে ২২ টাকা কেজি দরে কেনার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে সিদ্ধান্ত হলেও এখনও কোনো নির্দেশনা আসেনি। এ কারণে আলু কেনা সম্ভব হয়নি। আমরা রপ্তানি ও বিকল্প বাজার সৃষ্টি নিয়ে কাজ করছি।’ শিক্ষক আমজাদ হোসেনের দাবি, প্রয়োজনীয় কিছু কাজ করা হয়েছে ওই টাকা দিয়ে। আত্মসাতের অভিযোগ মিথ্যা। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রেজোয়ান হোসেন বলেন, সোনাতলায় অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত চলছে। অন্য উপজেলায় অনিয়ম হয়ে থাকলে সেখানেও তদন্ত করা হবে। যেখানেই দুর্নীতি হবে, শুধু তথ্য দেবেন, তৎক্ষণাৎ

সর্বশেষ

শিরোনাম