মঙ্গলবার   ৩০ এপ্রিল ২০২৪ || ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

জাগ্রত জয়পুরহাট

প্রকাশিত: ১৩:৩৩, ৬ এপ্রিল ২০২৪

কু*কি-চিনের আস্তানায় সেনাবাহিনীর রো*মহর্ষক অ*ভিযান

কু*কি-চিনের আস্তানায় সেনাবাহিনীর রো*মহর্ষক অ*ভিযান
সংগৃহীত

ফেসবুকে এক থেকে দুই বছর আগে পার্বত্য চট্টগ্রামের স*শস্ত্র গোষ্ঠী হিসেবে আ*ত্মপ্রকাশ করে কু*কি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। পাহাড়ের দুই জেলার ৯ উপজেলা নিয়ে একটি আলাদা রাজ্য গঠনের ঘোষণাও দেয় তারা। কয়েকটি স*শস্ত্র অ*ভিযান চালিয়ে চাঁদাবাজি ও  হ*ত্যার অ*ভিযোগ উঠতে থাকে তাদের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই।

এক সময়ে ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগও পাওয়া যায় তাদের বিরুদ্ধে। এরপরই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে তাদের সশস্ত্র সংঘাত হয় বার কয়েক। তারপর সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় ফেরে দলটি। এবছরের ২২ এপ্রিল সেই আলোচনায় আবার বসার কথা ছিল তাদের। কিন্তু এর আগেই পাহাড়ের দুই ব্যাংকের তিন শাখায় ডাকাতি করে পরিস্থিতিকে অশান্ত ও অস্থিতিশীল করেছে সশস্ত্র এই গোষ্ঠীটি। এমন প্রেক্ষাপটে সরকারের পক্ষ হতে শান্তি আলোচনার উদ্যোক্তারাও আর এ উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে যেতে চান না। কাজেই এক অনিশ্চয়তা ও ত্রাসের আবহ তৈরি হয়েছে  কেএনএফ নিয়ে।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের জুন মাসে কুকি-চিনের আস্তানায় রোমহর্ষক এক অভিযান পরিচালনা করেছিল সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এই অভিযানে গণমাধ্যমকর্মীদের অপারেশন দলের সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। নিচে গণমাধ্যমকর্মী কর্তৃক  অপারেশনটির ওপরে প্রচারিত একটা ভিডিওর ভিত্তিতে এই বর্ণনামূলক প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়েছে। 

ভিডিওটিতে অভিযান পরিচালনার সময়ে সেনাবাহিনীর টহলদলের সাথে থাকা গণমাধ্যমকর্মীদের বর্ণনা ছিল নিম্নরূপঃ "অনেক চেষ্টায় সেনাবাহিনীর টহল দল আমাদের সঙ্গে নিতে রাজি হয়। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে হেলমেট ও বিপি পরতে হবে বলে জানানো হয়। কেএনএফ মূলত এ এলাকা দখল করে বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতো। দোলপাড়ার দুর্গম রাস্তা আমরা পাড়ি দেব।....আমরা যখন এই পায়ে হাঁটা পথে এসেছিলাম, তখন সেনাবাহিনী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবাই আমাদের নিষেধ করেছিল। তাদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে তাদের একটি টহল টিমের সঙ্গে আমরা হিন্দোলতি পাড়াতে যাচ্ছি। মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে আমরা রওনা দেই সেনাবাহিনীর দলের সঙ্গে। দুর্গম পাহাড়ের পথে পথে আইডি বিস্ফোরণের ঝুঁকি, জান হাতে নিয়ে চলা। কখনো আঁকাবাঁকা কখনো ঢালু আবার কখনো সোজা ওপরে, পাশে হাজার ফুট কিংবা তারও বেশি গভীর খাদ। শেষমেষ থাইকং এর কেএন এর একটি ক্যাম্পে পৌঁছে যাই আমরা। ততক্ষণে ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। কিন্তু আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে তারা, যার কারণে হেলমেট ও বুলেট প্রুফ জ্যাকেট পরে ঢুকতে হয় আমাদের। 

কাছের ক্যাম্প থেকে গা-ঢাকা দেয় সন্ত্রাসীরা, তাই চোরাগোপ্তা হামলার শংকা থেকেই যায়। সেই ঝুঁকি মাথায় নিয়ে দুই হাজার ফুট নিচে নেমে আসি আমরা। এবার ঝিরি থেকে খাড়া পথে আবার উঠতে হবে প্রায় তিন হাজার ফুট। এমন পরিস্থিতিতে মোক্ষম সময়ের জন্য অপেক্ষা করে সন্ত্রাসীরা। পাহাড় বাইতে বাইতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে প্রতিপক্ষ তখনই টার্গেট ফায়ার করে। যেখানে তৃষ্ণা নিবারণের জন্য একমাত্র ভরসা বৃষ্টি কিংবা ঝিরির পানি। 

কেএন এর দলে যোগ না দিলে নির্যাতনের শিকার হতে হয় বলে স্থানীয়দের কয়েকজন জানান। 

সকাল হতে জানা যায়- পাশের একটি কেএন এর ক্যাম্পে অভিযান চালাতে বেরিয়ে পড়েছে সেনাবাহিনীর অন্য একটি দল। আমরা তার ঠিক পেছনে আরেকটি দলের সঙ্গে রওনা হলাম। প্রথমে কেএন এর মূল কেন্দ্র টাইগার পোস্টে পৌঁছালাম আমরা। টাইগার পোস্টটিতে ২০ থেকে ২৫ জন কেএন এর সদস্য ছিল, ছিল একটি বাংকার। সেখান থেকেই বিপরীত দিক থেকে আসা কাউকে টার্গেট ফায়ার করতো তারা।

কেএন এর ক্যাম্প এবং পোস্টের আশেপাশের এলাকাজুড়ে ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) দিয়ে ফাঁদ পেতে রেখেছিল সন্ত্রাসীরা। একে একে সব আইইডি বোমা নিষ্ক্রিয় করে সেনাবাহিনী। 

আমরা যখন সামনের দিকে যাচ্ছিলাম, তখন হঠাৎই খবর আসে- আইইডি বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন অগ্রবর্তী দলের এক সেনাসদস্য। তখনো অভিযান অব্যাহত রাখেন সেনাসদস্যরা। আহত সেই সেনা সদস্যকে নিতে আসে একটি হেলিকপ্টার। তাকে তুলে দিয়ে আবারো অভিযান শুরু করেন নির্ভিক দেশপ্রেমিক যোদ্ধারা।

খবর এলো সিলোভিপাড়া সন্ত্রাসমুক্ত হয়েছে। একইসঙ্গে দুঃসংবাদ এলো আহত সেনাসদস্য তুজাম আর নেই।

কারা এই কেএনএফ, কী চায় তারা:

২০২২ সালের গোড়ার দিকে কেএনএফের নাম নজরে আসে, প্রকাশ্যে আসতে থাকে তাদের নানা তৎপরতার খবরও। মূলত ফেসবুকে পেজ খুলে এই গোষ্ঠী তাদের অস্তিত্বের জানান দেয়। সঙ্গে ছিল সশস্ত্র তৎপরতা। বান্দরবানের বম জাতিগোষ্ঠীর কিছু ব্যক্তি এটি গড়ে তুলেছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা যায়। কেএনএফ ফেসবুক পেজে দাবি করে, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান অঞ্চলের ছয়টি জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করছে তারা। সেগুলো হলো- বম, পাংখোয়া, লুসাই, খিয়াং, ম্রো ও খুমি। তারা রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি এবং বান্দরবানের রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা ও আলীকদম- এই উপজেলাগুলো নিয়ে আলাদা রাজ্যের দাবি করে। তাদের কল্পিত সেই ‘রাজ্যের’ মানচিত্রও তাদের পেজে দিয়ে দেয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা একাধিক বিবৃতিতে কথিত এই সংগঠন জানায়, কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ) নামে একটি সশস্ত্র দল গঠন করেছে তারা। তাদের মূল সংগঠনের সভাপতি নাথান বম।

কেএনএফ সেই সময় দাবি করে, তাদের সামরিক শাখার শতাধিক সদস্য গেরিলা প্রশিক্ষণের জন্য মিয়ানমারের কাচিন প্রদেশে পাড়ি জমায় বছর তিনেক আগে। ২০২১ সালে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একটি দল ফিরে আসে। ২০২২ সালে তারা আত্মগোপনে চলে যায়। তবে একাধিক সূত্র বলছে, কেএনএফের সশস্ত্র সদস্যের সংখ্যা শুরুতে খুব বেশি ছিল না। তখন হয়তো ১৫ থেকে ২০ জনের মতো সদস্য ছিল। কিন্তু পরে তাদের সংখ্যা বাড়ে।

সূত্র: ডেইলি বাংলাদেশ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ