মঙ্গলবার   ২৮ অক্টোবর ২০২৫ || ১২ কার্তিক ১৪৩২

জাগ্রত জয়পুরহাট

প্রকাশিত : ১৮:০৬, ২৭ অক্টোবর ২০২৫

ইসলাম

নবীজির (সা.) সহধর্মিণী সাওদার (রা.) সরলতা ও উদারতা

নবীজির (সা.) সহধর্মিণী সাওদার (রা.) সরলতা ও উদারতা
সংগৃহীত

মহানবী (সা.)-এর স্ত্রীদের মধ্যে সাওদা বিনতে জামআ (রা.) ছিলেন সাহস, রসিকতা ও উদারতার অধিকারী। তিনি নবীজির পরিবারের সেবায় নিয়োজিত থাকার পাশাপাশি ইসলামের প্রাথমিক ইতিহাসে রেখেছেন অমর ছাপ। খাদিজা (রা.)-এর ইন্তেকালের পরে সাওদদা বিনতে জামআর (রা.) সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন রাসুল (সা.)।

অনেকে মনে করেন, নবীজি (সা.) তাকে বিবাহ করেছিলেন শুধু সন্তানদের দেখাশোনার জন্য। কিন্তু বাস্তবে তিনি ছিলেন এক সাহসী ও আনন্দপ্রিয় নারী। যিনি নবীজির জীবনে উষ্ণতা ও হাস্যরস এনে দিয়েছিলে, এবং মুসলিম উম্মাহর ইতিহাসে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

সাওদা (রা.) ছিলেন সাহসী ও ঈমানদার

প্রাথমিক সময়ে ইসলাম গ্রহণকারীদের একজন ছিলেন হজরত সাওদা (রা.)। মক্কার কঠিন সময়, নির্যাতন ও মৃত্যুর আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও তিনি আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.)-এর প্রতি ঈমান এনেছিলেন। এমনকি তার পরিবারে তিনিই প্রথম মুসলিম ছিলেন এবং তার মাধ্যমে স্বামীও ইসলামে প্রবেশ করেন।

তিনি ইসলামের স্বার্থে নিজের ঘরবাড়ি ছেড়ে হাবশায় (আবিসিনিয়া) হিজরত করেন। সেখানে মুসলমানরা নিরাপদে ধর্মচর্চা করতে পারতেন। কিন্তু সেখানে স্বামী মারা গেলে নিজের বংশের লোকদের সঙ্গে থাকার জন্য তিনি আবার সমুদ্র ও মরুভূমি পাড়ি দিয়ে মক্কায় ফিরে আসেন।

মক্কায় ফিরে এসে সাওদা (রা.) মুসলমানদের মাঝে হাবশার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতেন। তিনি নবীজির কন্যা রুকাইয়া (রা.) ও জামাতা উসমান ইবনে আফফান (রা.)-এর সঙ্গে কাটানো সময়ের গল্প বলতেন, আর নবী (সা.) গভীর আগ্রহে শুনতেন সেই স্মৃতিচারণ।

রসিক ও হাস্যরসপ্রিয় এক নারী

সাওদা (রা.) হাস্যরসে ভরপুর ছিলেন। নবী (সা.) যখন দুঃখিত হতেন, তিনি মজার গল্প শুনিয়ে নবীজির মুখে হাসি ফুটাতেন। তিনি একবার নামাজে এতো দীর্ঘ রুকুতে ছিলেন যে মনে করলেন, নাক থেকে রক্ত বেরিয়ে যাবে! তাই নাক চেপে রাখলেন— এ কথা নবীজিকে বললে তিনি হেসে উঠলেন।

আরেকবার আয়েশা (রা.) ও হাফসা (রা.) তাকে দাজ্জালের কথা বলে ভয় দেখালে, তিনি আতঙ্কে এক অন্ধকার ঘরে লুকিয়ে পড়েন। নবী (সা.) এসে যখন ঘটনা জানলেন, তখন তাকে ডেকে আনলেন। সাওদা (রা.) হাসতে হাসতে বেরিয়ে এলেন।

উদারতা ও সহমর্মিতা

সাওদা (রা.) ছিলেন অত্যন্ত দানশীলা। নবী (সা.)-এর ইন্তিকালের পর তিনি একা হয়ে যান। একদিন খলিফা ওমর (রা.) তার কাছে এক ব্যাগ দিরহাম পাঠান। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এটা কী? জানানো হলে বললেন, এটা আমার চেয়ে গরিবদের বেশি প্রয়োজন। তারপর সব টাকা দান করে দিলেন।

শুধু অর্থে নয়, হৃদয়েও ছিল তার উদারতা। স্ত্রী হিসেবে নিজের প্রাপ্য দিন ও রাত তিনি নবী (সা.)-এর প্রিয়তমা স্ত্রী আয়েশা (রা.)-কে দিয়ে দেন। আয়েশা (রা.) পরে বলেন, আমি সাওদা (রা.)-এর মতো এত ভালোবাসাপূর্ণ নারী আর কাউকে পাইনি।

সাওদা বিনতে জামআ (রা.) ছিলেন সাহসী, সরল, রসিক ও উদারচেতা নারী। ইসলামের প্রারম্ভিক দিনগুলোতে তিনি নবীজির পরিবার ও উম্মাহর পাশে ছিলেন। তার জীবন আমাদের শেখায়, হাস্যরসের মাঝেও থাকতে পারে ঈমানের দৃঢ়তা এবং দানশীলতার মধ্যেই লুকিয়ে থাকে প্রকৃত মহত্ত্ব।

সূত্র: ঢাকা পোষ্ট

সর্বশেষ

শিরোনাম